উপজেলা নির্বাচন: তৃতীয় ধাপে ভোটের প্রতীক বরাদ্দ আজ দারিদ্রতাকে জয় করে সিয়াম বাবু পেল গোল্ডেন জিপিএ ৫ নোয়াখালীতে পরীক্ষায় গণিতে ফেল করায় কিশোরীর আত্মহত্যা শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মামাকে সমর্থন দিয়ে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছেন ভাগিনা গলাচিপায় এস. ডি. এফ-এর আওতায় ষ্টীল বডি ট্রলার সরবরাহ টেন্ডারে এপ্রিলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ৬৭৯ জন রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া জোরদারে করণীয় নিয়ে আলোচনা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে ইতালির ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর কচুয়ায় এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫৬৬ জন পাঁচবিবিতে পুত্রবধুর হাতে প্রাণ গেল শ্বাশুরির,ঘাতক পুত্রবধু গ্রেফতার রূপান্তরের আয়োজনে দিনাজপুরে পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত “স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে বিবাহ বিচ্ছেদ” সংক্রান্ত প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদ শ্রীমঙ্গলে এসএসসি পরীক্ষায় সাংবাদিক কন্যার জিপিএ-৫ অর্জন শামস্ ও কোহিনুর সাতক্ষীরায় ভাইস চেয়ারম্যান হলেন পা দিয়ে পরীক্ষা দেওয়া সেই সিয়াম এসএসসিতে উত্তীর্ণ, পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন এমপি আবদুর রশিদ শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে মুখস্ত শিক্ষার ওপর নির্ভরতা কমাতে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন আনা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী ১০ দিনে রেমিট্যান্স এলো ৮১ কোটি ডলার তবে কী কপাল পুড়ল তাসকিনের? নোবিপ্রবি শিক্ষার্থী আনিকার আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ মা দিবসে ইবি সিআরসির ব্যতিক্রমী আয়োজন

কবে ঘুচবে যশোরের দুঃখ ভবদহ ?

Md Nazmul Hasan ( Contributor )

প্রকাশের সময়: 28-04-2024 11:26:52 am

পানিবন্দী দশা থেকে মুক্তির অপেক্ষায় ভবদহবাসী

আমি মোঃ নাজমুল হাসান। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের চতুর্থ সেমিষ্টারে অধ্যয়নরত। গত ২০ এপ্রিল "ফিসকেল ল" ক্লাস করার সময় শিক্ষকের থেকে জানতে পারি যশোরের ভবদহ নামে একটি জায়গার মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা। জানতে পারি সেখানকার মানুষের স্থায়ী জলাবদ্ধতার সমস্যা। প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিতেই ভবদহ অঞ্চলের মানুষেরা জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় বন্যার, এতে তলিয়ে যায় ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। তখন এমন পরিস্থিতির ও উদ্ভব হয় যে মৃত মানুষকে কবর দেয়ার মতো পরিবেশ থাকে না তখন অন্য এলাকার মৃত মানুষকে সমাধিস্থ বা শেষকৃত্য সম্পাদন করতে হয়। 


যা শুনে রীতিমত অবাক হই। আধুনিকতার এই ২০২৪ সালে যখন বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণাসহ বিভিন্ন সূচকে আমরা ঈর্ষণীয় গতিতে এগিয়ে যাচ্ছি। তখন ভবদহের এরূপ সংবাদে মনে হচ্ছে ভবদহ যেন পড়ে আছে এখনো অর্ধশত বছর পেছনে যা অবগত হয়ে একদমই বিমর্ষ হয়ে পড়ি। ক্লাস শেষ করে বাসায় ফিরে এই বিষয়ে বিস্তার পড়াশুনা শুরু করে দেই। অফলাইন,অনলাইন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ভবদহ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করি। তখন জানতে পারি যে যশোর শহর হতে ৪৬ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ কোণে অবস্থিত ভবদহ স্লুইচ গেট। প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিতে ভবদহ অঞ্চলের মানুষের আত্মচিৎকার কখনও ফুরাতে চায় না। দিন থেকে মাস, মাস থেকে বছর পেরিয়ে গেলেও এই অঞ্চলের মানুষের দুঃখ যেন কিছুতেই ঘোচতে চায় না। 


ভবদহের প্রায় ৬টি উপজেলা, যথা কেশবপুর, অভয়নগর, মনিরামপুর, খুলনার বটিয়াঘাটা, ফুলতলা, ডুমুরিয়ার, ৪৩টি ইউনিয়ন, ৪৯০টি গ্রাম, ৮০ হাজার হেক্টর জমি এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ জলাবদ্ধতায় অমানবিক দুর্ভোগের শিকার। অবর্ননীয় এই দুর্ভোগ তাদের আর্থ সামাজিক ভিত্তি ভেঙে দিয়ে সর্বস্বান্ত করে ফেলেছে। 


যখন যশোরের ভবদহ যা ১০ লক্ষাধিক মানুষের হাসি-কানার আবাসস্থলের শুরুর দিকের ইতিহাস খুঁজতে শুরু করি তখন জানতে পারি চীনের দুঃখ যেমন হোয়াংহো নদী ঠিক তেমনি যশোরের দূঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহ। যদিও বর্তমানে চীনের জনগণের হোয়াংহোর দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করছে তবে বাংলাদেশের যশোরের ভবদহ এলাকার জনগণ পানিবন্দি দশা থেকে দীর্ঘ দিনেও মুক্তি পাচ্ছে না। হোয়াংহো নদীর ন্যায় যশোরের ভবদহও যেন এখানকার জনগণের কাছে এক অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের সাথে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার প্রতীক হয়ে উঠেছে।


১৯৫৮ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের শাসনামলে একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প ছিল ভবদহ স্লুইচ গেট নির্মাণ। সবুজ বিপ্লব প্রকল্পে উক্ত এলাকার ৮০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি লবণাক্ততা দূর করার জন্য, বর্ষা মৌসুমের অতিরিক্ত জল বের করে দেওয়া ও স্লুইচ গেটের উত্তরে ২৭টি বিলের জল বর্ষা মৌসুমে ও উত্তরের সংযুক্ত নদীগুলোর অতিরিক্ত জল প্রবাহের সময় মুক্তেশ্বরী নদী ও সীমানা খালের মাধ্যমে বিলবোকড় ও বিলকেদারিয়ার হয়ে যাতে শ্রীনদীতে পড়ে এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না করে, শুকনো মৌসুমে জল জমিয়ে রেখে সংযুক্ত খালের মাধ্যমে তা বিলের ভেতরে এনে চাষাবাদ অব্যাহত রাখা।


এজন্য ১৯৫৮ সালে ২১ ও ৯ ভেন্টের ভবদহ স্লুইচ গেট শ্রীনদী ও হরি নদীর মুখে তৈরির শুরু হয় এবং ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ চলে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সেই অঞ্চলের কৃষকদের সোনালী ফসলের সাথে সাথে মুখে ফুটে ওঠে উজ্জ্বল হাসি। এর ফলে ভবদহ অঞ্চলের মানুষেরা প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেললেও তা আর দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বছর বিশেক এর সুফল পাওয়া গেলেও আশির দশকে যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর উপজেলা ও খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী ভবদহ এলাকার কৃষকরা জলাবদ্ধতার কারণে বিপর্যস্ত হতে থাকেন। মূলত মেইন গেটের সামনে ও পেছনে প্রচুর পলিমাটি জমতে শুরু করে ফলশ্রুতিতে ১৯৮২ সালে নেহালপুর ও কুলটিয়া ইউনিয়ন স্থায়ী বন্যায় প্লাবিত হয়। বন্যায় কৃষি জমি, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা প্লাবিত হয়। ১৯৮৮ সাল থেকে এই জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। এর ফলে পানি সরানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করে এলাকার ভুক্তভোগী মানুষ। তখন থেকেই চলতে থাকে এ আন্দোলন।


এরপর ১৯৯৬ সালে ২২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় 'খুলনা যশোর ড্রেনেজ রিহাবিলিশান' প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রথম প্রকল্প হিসেবে নেহালপুর ইউনিয়নের বিলকেদারিয়ায় টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) এর মাধ্যমে উক্ত এলাকার মানুষজন বেশ উপকৃত হয়। ভবদহ গেট দিয়ে ২৭ টি বিলের পানি নেহালপুর ইউনিয়নের বিলকেদারিয়া হয়ে টেকামুক্তেশ্বরী নদী হয়ে সমুদ্রে পতিত হতো। প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল এভাবেই জলবদ্ধ এই অঞ্চলকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করা। কিন্তু ১৯৫৮ সালে তৈরি করা সেই সুইচগেট আজ মৃতপ্রায় এবং দুই পাশে পলিমাটি জমায় সামান্য বৃষ্টিতেই প্রতিবছর এই অঞ্চলে সৃষ্টি হয় বন্যার। পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটির কারণে ভবদহ আজ ২৭ টি বিলে পাড়ের মানুষজনের দুঃখ দুর্দশা কারণ।


বর্তমানে ভবদহ সুইচগেট হারিয়েছে তার পুরনো ঐতিহ্য। এখন আর জলাবদ্ধতা নিরাসনে কোন কাজে আসছে না। বিল সমূহের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান খাল গুলো মরে যাওয়া ও গভীরতা কমে যাওয়া। তার উপর ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল ফারাক্কা বাধ চালু হলে প্রধান ও শাখা নদীগুলো নাব্যতা হারাতে শুরু করে। যার ফলে জলপ্রবাহ কমতে থাকে ও নদীর তলদেশে পলি জমে গভীরতাও কমতে থাকে। এর জন্য পানির চাপ থাকলেও আর্কিমিডিসের সূত্রের সফল প্রয়োগ ঘটেনা অর্থাৎ সম্মুখের গভীরতা কম থাকার কারণে পানি নিষ্কাশন ঘটেনা এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। উপরিউক্ত কারণে বিলের উচ্চতা নদীর গভীরতার তুলনায় কমে যাওয়ায় পানি সহজে সরতে পারেনা। এছাড়া বিলের ভেতর অসংখ্য বদ্ধ জলাশয় তৈরি করায় বর্ষা মৌসুমে পানি উন্মুক্তভাবে প্রবাহিত হয়ে নদীতে বা এক বিল থেকে আরেক বিলে যেতে অনেক দেরি হয় ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।


সব মিলিয়ে ভবদহের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা এক বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবছরই বন্যা কালীন সময়ে এই সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে কর্তৃপক্ষ।


ভবদহ সমস্যা দূরীকরণে বিভিন্ন সংগঠন কাজ করছে যেমন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটি, ভবদহ পানি নিষ্কাশন আন্দোলন কমিটি, এএলআরডি, আমরা অভয়নগরবাসী। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি নিয়মিতভাবেই এই সমস্যার কথা বিভিন্ন সভা-সেমিনারের মাধ্যমে যেমন যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরছেন ঠিক তেমনি সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।


তাদের সকলের দাবি ভবদহ সমস্যা নিয়ে সরকারের স্বল্প মেয়াদী, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে। দেশ-বিদেশের শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারীদের থেকে পরামর্শ নিয়ে তাদের তত্ত্বাবধানে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা যার মাধ্যমে এই স্থায়ী জলাবদ্ধতা সম্পূর্ণরূপে নিরসন হবে।


এই অঞ্চলে মানুষদের পানি বাহিত রোগ, গৃহপালিত পশু, সাপ আর ব্যাঙকে তাদের নিত্যসঙ্গী হতে দেয়া যাবেনা। নদীর নাব্যতা ফেরাতে হলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) এর বিকল্প নেই এজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে যথেষ্ট আন্তরিক থেকে সফলতার পরিচয় দিতে হবে। তাছাড়া নদী খনন করে পর্যাপ্ত গভীরতা নিশ্চিত করা ও কেউ নদী দখলকারী থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের খরচের সঠিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কোন প্রকারের অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতিকে কোন অবস্থাতেই প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। এভাবেই ভবদহ অঞ্চলের মানুষদের জীবন থেকে চিরতরে জলাবদ্ধতার অভিশাপ ঘোচানো সম্ভব।



মোঃ নাজমুল হাসান: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।


Email: pressnazmulbd@gmail.com

আরও খবর