গত ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার এক অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। অন্যদিকে ৮ই আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনুস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠন করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই রাষ্ট্র সংস্কারের বিভিন্ন কাজ শুরু করেন। কিন্তু এই সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে এবং তারা কি কি সংস্কার করবে তা নিয়ে প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস জাতির উদ্দেশ্যে চমৎকার একটি আশা জাগানোর মতো ভাষণ প্রদান করেছেন। তিনি তার ভাষণে প্রায় প্রতিটি সেক্টরের কথা তুলে এনেছেন, ভাষণে তাদের মেয়াদের বিষয়টি জনগণের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। বিএনপি, জামায়েত ইসলামী সহ বিদ্যমান অন্যান্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোও এই সরকারকে একটি যৌক্তিক সময় দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। আবার যৌক্তিক সময়ের পাশাপাশি তারা এই সরকারের একটি রোড ম্যাপ এর কথা বলেছে। কারণ বর্তমানে এই সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা পাশাপাশি আইনের শাসন নিশ্চিত করা। বিগত হাসিনা সরকার গত ১৬ বছরে দেশের পরিচালনার প্রত্যেকটি সেক্টরকে একপ্রকার ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। প্রত্যেকটি সেক্টরের দুর্নীতি, অনিয়ম পাহাড় সম পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। এজন্যই এদেশের এই সংকটে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে বড় অংশীদার হলো রাজনৈতিক দলগুলো। তাই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্ম পরিকল্পনা সাজাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রোড ম্যাপ জানা অতীব জরুরি হয়ে পড়েছে। দিনশেষে তাদের সম্মিলিত অংশগ্রহণ ছাড়া কোন পরিকল্পনা টেকসই হবে না। তাই তারা কতদিন অপেক্ষা করবে, এই সরকার কোন কোন নির্দিষ্ট বিষয়গুলোতে সংস্কার নিয়ে আসবে, বর্তমান সরকার দেশের জনগণের কাছে কি কি কমিটমেন্ট প্রদান করবে তা তাদের জানার অবশ্যই অধিকার রয়েছে। কারণ কিছু কিছু সংস্কার রয়েছে যা করতে তেমন বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না, বিভিন্ন পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই নেয়া আছে যেগুলো বাস্তবায়ন করলে খুব দ্রুত সুফল পাওয়া যাবে সেগুলো ইতোমধ্যেই শুরু করা দেয়া।
যেমন বর্তমানে দেশে বিচার ব্যবস্থায় ৩৮ লক্ষ মামলা বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। অন্যদিকে সারাদেশে নিম্ন আদালত গুলোতে সবমিলিয়ে ১৫০০-১৬০০ এর মত বিচারক রয়েছেন আর উচ্চ আদালতে প্রায় ১০০ জন এর মতো বিচারক রয়েছেন। যা মামলার অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা অতি নগণ্য। তাই এই মুহূর্তে বর্তমান সরকার চাইলে নতুন বিচারক নিয়োগ দিতে পারে। আবার আইনজীবীদের মধ্য থেকেও অস্থায়ী বিচারক নিয়োগ দিতে পারে। এর মাধ্যমে বিচার বিভাগে মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করা যেতে পারে অন্যতায় বিচার বিভাগের এই সমস্যা আগামী ২০ বছরেও সমাধান হবার নয়।
আবার দেশে এমনও বিষয় রয়েছে যেসব বিষয়ে সংস্কার ন্যূনতম সংস্কার নিয়ে আসতে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ১ বছর থেকে শুরু করে ৫-১০ বছরও সময় লেগে যাবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে নির্বাচনে জয় লাভের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা করা। তারা নির্বাচনে জয়লাভ করতে জনগণকে বিভিন্ন অঙ্গীকারের মাধ্যমে আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করে। তাই এই সরকার কেমন সংস্কার নিয়ে আসবে, কোন কোন সেক্টরে সংস্কার নিয়ে আসবে তা সম্পর্কে অবহিত হয়ে তারা তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা সাজাবে। ইতোমধ্যেই দেশ বন্যার মত একটি দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। এখানে দল-মত নির্বিশেষে সকলে এগিয়ে আসছে। রাজনৈতিক দলগুলোও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে যথাসম্ভব চেষ্টা করে যাচ্ছে। এতে জনগণের নিকট প্রত্যেকটি দল তাদের ব্যাপারে একটি পজেটিভ ধারনা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখছে।
রাজনৈতিক দলগুলো এই সরকারের নিকট প্রত্যাশা করে দেশের প্রতিটি সেক্টরে সংস্কারের ভিত্তি তারা প্রস্তুত করে দিয়ে যাবে। যেগুলোকে ভবিষ্যতে যেই ক্ষমতায় আসবে তারা তা পরিপূর্ণ করতে বাস্তবায়নে কাজ করবে। এজন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা ছাড়া বিকল্প নেই। আলোচনা-আলোচনা এবং আলোচনাই পারে আমাদেরকে একটি সুখী সমৃদ্ধশালী সুন্দর রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখতে।
মোঃ নাজমুল হাসান: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
Email: pressnazmulbd@gmail.com
২ দিন ১ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
২ দিন ১ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
৬ দিন ৫৭ মিনিট আগে
৬ দিন ৮ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
৭ দিন ১৮ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
৮ দিন ৫ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
৯ দিন ২৩ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে
১০ দিন ১০ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে