উচ্চমূল্যের ফাঁদে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা: আস্থা হারাচ্ছেন ট্রাম্প পীরগাছা সরকারি কলেজের প্রথম অধ্যক্ষের বিদায় ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বগ্রহণ গরমে পানি পানের উপকারিতা মোংলার ভ্যান চালকের মরদেহ মোড়েলগঞ্জের মাছের ঘের থেকে উদ্ধার নিরীহ লোককে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না: আইজিপি ‘মন্ত্রণালয়ের মতামত ছাড়াই ইশরাককে মেয়র হিসেবে গেজেট প্রকাশ’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিউনিটি অ্যাকশন মিটিং ক্ষেতলালে কাফি হত্যাকান্ডের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত চিলমারীতে আইনগত সহায়তা দিবস-২০২৫ অনুষ্ঠিত সুন্দরবনে কোস্ট গার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ বিল্লাল ডাকাত আটক শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ কারাগারে ঝিনাইগাতীতে কূপ খনন করতে গিয়ে নিহত ২ পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য প্রদান ডোমারের সাবেক চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ গ্রেপ্তার সাতক্ষীরায় জাতীয় আইনগত সহায়তা এইড দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি জুলাই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে ছাত্রদলের মারধর: বিভাগে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সাতক্ষীরায় ট্রাকের চাপায় কলেজ ছাত্র নাঈম নিহত ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য জাতীয় সনদ তৈরি: আলী রীয়াজ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগ পবিপ্রবিতে ভিএসএ-র আয়োজনে বিনামূল্যে ভেটেরিনারি মেডিকেল ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে তুমুল সংঘর্ষ, নিহত ৫৪

ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি: ঐক্যের পথে, বিভাজনের ছায়া

সম্পাদকীয় ডেস্ক - প্রতিনিধি

প্রকাশের সময়: 08-12-2024 09:22:09 am

তরুণ লেখক হৃদয় পান্ডে। © ফাইল ছবি


হৃদয় পান্ডে || ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার কৌশল নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে, এবং এখনো হচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার মতো বহুধর্মীয় অঞ্চলে এটি আরও প্রকট। এখানে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক বহু দশক ধরে রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে ধর্মীয় পরিচিতিকে উসকে দিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করা এখন একটি সাধারণ কৌশল। এর ফলে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় প্রায়শই রাজনৈতিক মেরুকরণ ও সহিংসতার শিকার হয়। ধর্মীয় অনুভূতিকে উসকে দিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে বিভেদ সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা হয়। আর এর পরিণতি হয় সামাজিক সম্প্রীতির অবক্ষয়।


ভারতের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে "হিন্দুত্ববাদী" মতাদর্শ এবং ধর্মের নামে মেরুকরণের প্রবণতা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। একদিকে হিন্দু ধর্মের আবেগ উসকে দিয়ে নির্বাচনী সমর্থন আদায় করা হয়, অন্যদিকে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে কোণঠাসা করার প্রচেষ্টা চলে। এর মাধ্যমে ভোটব্যাংক তৈরির কৌশল চালু রাখা হয়, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এটি কি কেবল আধুনিক যুগের কৌশল, নাকি রাজনীতির প্রাচীন অস্ত্রের আধুনিক রূপ? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ঐতিহাসিক ও সাম্প্রতিক বাস্তবতাকে গভীরভাবে বোঝার প্রয়োজন। ইতিহাস সাক্ষী যে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি একদিকে সংঘর্ষ বাড়ায়, অন্যদিকে সমাজের সার্বিক অগ্রগতিকে ব্যাহত করে।


তবে এই প্রবণতা কেবল দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও ধর্মকে রাজনৈতিক বিভাজন ও ক্ষমতার কুক্ষিগত করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এটি রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাবের গভীরতাকেই প্রকাশ করে। যখন ধর্মীয় বিশ্বাসের অপব্যবহার করা হয়, তখন তা সমাজে সহিংসতার সূত্রপাত ঘটায়। এ প্রক্রিয়ায় সামান্য সংখ্যক মানুষ লাভবান হয়, অথচ সমাজের বৃহৎ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


» বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট: ধর্ম ও রাজনীতি


বাংলাদেশে ধর্ম এবং রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরে একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে। স্বাধীনতার পর ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে প্রচেষ্টা চালানো হলেও, বাস্তবে রাজনীতি থেকে ধর্ম কখনোই পুরোপুরি আলাদা হয়নি। বরং, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় প্রায়শই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব এবং রাজনৈতিক উত্তেজনার শিকার হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের সময় এ প্রবণতা আরও বেশি প্রকট হয়ে ওঠে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হিন্দু সম্প্রদায়কে তাদের নিজস্ব স্বার্থে ব্যবহার করে। এ ব্যবহারের মাধ্যমে একদিকে সামাজিক বিভাজন বাড়ে, অন্যদিকে সংখ্যালঘুদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার বোধ জন্মায়।


হিন্দু সম্প্রদায় বাংলাদেশের সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা বাঙালি সংস্কৃতি, সাহিত্য এবং ঐতিহ্যে অমূল্য অবদান রেখেছে। কিন্তু, স্বাধীনতার পর থেকেই তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক মেরুকরণ ও ভোট ব্যাংক তৈরির প্রবণতা দেখা গেছে। একদিকে তাদের সমর্থন লাভের জন্য প্রতিশ্রুতি ও সহযোগিতার প্রলোভন দেখানো হয়, অন্যদিকে নিপীড়ন ও প্রান্তিককরণের মাধ্যমে তাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। এটি কেবল তাদের সামাজিক অবস্থানকে দুর্বল করে না, বরং দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করে।


বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো, এবং সম্পত্তি দখলের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মূল কারণ ধর্মীয় বিভেদ নয়, বরং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কৌশল। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দুর্বল অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতাসীন দল বা বিরোধী পক্ষ নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধি করে। এই অবস্থা চলতে থাকলে কেবল সংখ্যালঘুরাই নয়, পুরো সমাজেই অস্থিরতা সৃষ্টি হয়।


» রাজনীতিতে ধর্মীয় কার্ডের ব্যবহার


বর্তমান সময়ে হিন্দু কার্ড রাজনৈতিক কৌশলের আরও জটিল রূপ নিয়েছে। পূজা মণ্ডপে হামলা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মিথ্যা অভিযোগ, এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরির মতো ঘটনাগুলো এই প্রবণতাকে স্পষ্ট করে তোলে। রাজনৈতিক দলগুলো একদিকে সংখ্যালঘুদের ব্যবহার করে জনমত প্রভাবিত করতে চায়, অন্যদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তোলে। এর ফলে রাজনৈতিক পরিবেশ আরও জটিল হয়ে ওঠে।


ফলস্বরূপ, সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায় একটি দ্বৈত সংকটে পড়ে। একদিকে তারা নিপীড়নের শিকার হয়, অন্যদিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ধর্মীয় অনুভূতিকে কেন্দ্র করে উস্কানি দেওয়া বা সংঘর্ষ সৃষ্টি করার এই প্রবণতা শুধু রাজনৈতিক দলের নয়, পুরো সমাজের জন্যও বিপজ্জনক। এটি সামাজিক ঐক্যের ভিত্তিকে দুর্বল করে এবং সামগ্রিকভাবে জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। রাজনৈতিক নেতারা সাময়িক লাভের জন্য এমন কৌশল অবলম্বন করলেও, এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি বহন করতে হয় পুরো জাতিকে।


» ডিজিটাল যুগে ধর্মীয় কার্ডের বিস্তার


হিন্দু কার্ড বা ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি ডিজিটাল যুগে আরও শক্তিশালী রূপ নিয়েছে। ভুয়া খবর এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক প্রচারণা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা ধর্মীয় উত্তেজনা উস্কে দেয়। এর ফলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আরও বাড়ছে।


ডিজিটাল মাধ্যমের অপব্যবহার কেবল সংখ্যালঘুদের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্যই একটি গুরুতর হুমকি। এটি সামাজিক সংহতিকে দুর্বল করার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার মাধ্যমে রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণের পথ সহজ করে দেয়। আজকের তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয়। তাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়িয়ে দিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার প্রবণতা ভবিষ্যতের জন্য আরও বড় বিপদ ডেকে আনছে।


» সমাধানের পথ: ধর্ম ও রাজনীতির পৃথকীকরণ


রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সামাজিক সচেতনতার বিকাশ। প্রথমত, ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করতে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি। একইসঙ্গে, যারা ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।


দ্বিতীয়ত, শিক্ষার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মকে সহনশীলতা এবং সাম্প্রদায়িকতার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে তারা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর বদলে শান্তি এবং সম্প্রীতির বার্তা দেয়। তাছাড়া, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে ভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে বন্ধন গড়ে তোলা যেতে পারে।


সর্বোপরি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে ধর্মীয় সহিংসতা প্রতিরোধে তারা দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। এইসব উদ্যোগ একত্রে ধর্মীয় কার্ডের ব্যবহার রোধ করবে এবং দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখবে।


শেষ কথা , ধর্ম ব্যক্তিগত বিশ্বাসের বিষয়, এটি কখনোই রাজনীতির হাতিয়ার হওয়া উচিত নয়। হিন্দু কার্ড বা যে কোনো ধর্মীয় কার্ডের ব্যবহার শুধু একটি সম্প্রদায় নয়, বরং পুরো সমাজকেই বিভক্ত করে। এ ধরনের প্রবণতা গণতন্ত্র এবং জাতীয় অগ্রগতির জন্য হুমকি স্বরূপ।


সত্যিকারের অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের জন্য রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। একমাত্র ঐক্যবদ্ধ সমাজই পারে এই কৌশলকে প্রতিহত করতে এবং একটি উন্নত ও মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে।


সামগ্রিক বিশ্লেষণে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই সচেতন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এটি কেবল একটি দায়িত্ব নয়, বরং আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষার শপথ।


• হৃদয় পান্ডে 

তরুণ লেখক ও শিক্ষার্থী 


আরও খবর
deshchitro-6801d6dae401c-180425103642.webp
Take early steps to resolve waterlogging in Dhaka

১০ দিন ৬ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে




deshchitro-67f32034a3e9c-070425064540.webp
সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হোক

২১ দিন ১০ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে


67f00c4be906d-040425104355.webp
অবহেলার পাত্র নাকি সভ্যতার স্থপতি?

২৩ দিন ১৮ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে


deshchitro-67e77b5f5d7ad-290325104727.webp
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা

৩০ দিন ৬ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে


67e68cb231674-280325054906.webp
ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর জন্য বার্তা

৩০ দিন ২৩ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে