◾মো. মাহিন ভূঁইয়া || সমাজের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোকদের জন্য ক্ষতিকর,অস্বস্তিকর ও অবাঞ্চিত সামাজিক অবস্থাই হচ্ছে সামাজিক সমস্যা।বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সমস্যা বিদ্যমান।এর মধ্যে রয়েছে মাদক, কিশোর গ্যাং, দূর্নীতি, ঘুষ, পতিতাবৃত্তি- অবাধ যৌনাচার, সন্ত্রাস, ছিনতাই, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, প্রতারকচক্র, যানজট, ইভটিজিং,ধর্ষণ ইত্যাদি।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাদকসেবন ও কিশোর গ্যাং কালচার সবচেয়ে বেশি বিস্তার লাভ করছে। ঘুষ ও দূর্ণীতিও পুরো দেশে বিস্তার লাভ করেছে।
প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সর্বত্র মাদকের আগ্রাসন গ্রাস করেছে। গাজা, ফেনসিডিল, মদ, হিরোইন, ইয়াবা, আইসসহ নানাধরনের মাদকদ্রব্যের প্রতি মানুষ কৌতুহূলতা বা, সঙ্গদোষে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। যেটা নিয়ে তুলনামূলক কোনো সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছেনা। এছাড়াও কিশোর গ্যাং কালচার দ্রুতই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের সুবিধায় আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে কিশোর গ্যাং তৈরী করছে। এসব কিশোর গ্যাং সদস্যরা চাদাঁবাজি, মারপিট, ছিনতাই, ইভটিজিং, ধর্ষণ, হত্যা, হুমকি-ধামকিসহ নানাধরনের অপরাধ করে থাকে।
একসময় শুধু শহরে কিশোর গ্যাং কালচার থাকলেও এখন পুরো বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের সর্বত্র সরকারি ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়া মহামারীর নাম ঘুষ,দূর্নীতি এবং স্বজন-প্রীতি। এর জন্যই দেশ তেমন উন্নতি করতে পারছেনা। সার্টিফিকেট কেন্দ্রিক শিক্ষার পরিবর্তে নীতি-নৈতিকতার শিক্ষা লাভ করা এখন বেশি জরুরী।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ অনেক বড়-বড় শহরে বিভিন্ন প্রতারকচক্র, ছিনতাইকারী, অবাধ যৌনাচার- পতিতাবৃত্তি, যানজট, অজ্ঞানপার্টি, রাজনৈতিক অস্থীতিশীলতাসহ নানাধরনের সামাজিক সমস্যা বেড়েই চলছে। শহরের ওলিতে-গলিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতারক চক্র ওঁত পেতে থাকে, গ্রাম থেকে আসা মানুষদের ফাঁদে ফেলতে।
চাকরির প্রলোভোন দেখিয়ে প্রতারণা বেশী হয়ে থাকে। গ্রাম থেকে আসা অসচেতন সরল মানুষরা কোনো যাচাই- বাছাই না করার কারণে প্রতারণার শিকার হন।শহরে প্রচুর পরিমাণে ছিনতাই হয়ে থাকে। মোবাইল, মানিব্যাগ,মসজিদে জুতাসহ নানা ধরনের জিনিস নিয়মিত চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।অনেক দূর থেকে আসা মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে অনেক সময়ই অসহায়ে পড়ে যায়। এছাড়াও শহরের রাস্তা-ঘাট ও যানবাহনে অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টি বেশ সক্রিয়। এরা মানুষদের পানি বা, খাবার খাইয়ে অজ্ঞান করে সব লুট করে নেয়। কখনো কখনো হকার সেজে এরা এদের অপকর্ম চালায়।
বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ বড়-বড় শহরে বেড়েই চলছে অবাধ যৌনাচার ও পতিতাবৃত্তি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বেশী বিপথে চলে যাচ্ছে অনেক সময়। সার্টিফিকেট কেন্দ্রিক শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ও নীতি-নৈতিকতার শিক্ষাও বাধ্যতামূলক করা জরুরী। রাজধানী ঢাকাসহ বড়-বড় শহরগুলোতে পশ্চিমা সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে। পশ্চিমা কালচার অনুসরণ করতে গিয়ে মানুষজনদের তাঁদের মতো জামা-কাপড়, চলাফেরা, প্রকাশ্যে বেহায়াপানা করার ফলে অশ্লীলতা ও অবাধ যৌনাচার,ইভটিজিং,ধর্ষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।ঢাকাসহ সারাদেশের শহরগুলোতে আবাসিক হোটেলের নামে স্থানে-স্থানে ছড়িয়ে পড়া পতিতালয়গুলোকে বৈধ করা হয়েছে। দরিদ্র পরিবারের অনেক মেয়ে, অনেক ভার্সিটি পড়ুয়া মেয়েরাই অনেক সময় অর্থের অভাবে এসব আবাসিক হোটেলে কাজ করছে। এছাড়াও, ভার্সিটি পড়ুয়া অনেক ছাত্রই আবার তাদের দালাল হিসেবে কাজ করছে। পশ্চিমা সংস্কৃতি অনুসরণ করাটা অনেকেই অধিকার মনে করে। অথচ, ধর্ষণ, ইভটিজিং এসব যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতেই সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে।
পশ্চিমা দেশগুলোতে যেমন স্বাধীনভাবে অশ্লীলতা, বেহায়াপানা ও অবাধ যৌনাচার করা যায়; তেমনি বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, ধর্ষণ ও ইভটিজিং এর হার যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোতেই সবচেয়ে বেশি। শহরগুলোতে যানজট একটি বড় সামাজিক সমস্যা। যানজটের কারণে মানুষের কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। যানজট নিরসনে তেমনভাবে কোনো পরিকল্পিত নগরায়ণ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা। পৃথিবীর শীর্ষ ধীরগতির শহরের একটি হচ্ছে ঢাকা। রাজনৈতিক অস্থীতিশীলতা থাকলে সেটি নাগরিকের সামাজিক জীবনে প্রভাব ফেলে। যানজট, মূল্যস্ফীতি, ক্ষয়-ক্ষতিসহ নানাধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি নাগরিকদের হতে হয়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার বড় কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক মূল্যবোধের অভাব। রাজনৈতিক দলগুলোতে সেভাবে সহানুভূতি ও মূল্যবোধ গড়ে ওঠেনা। ফলে কিছুদিন পর-পরই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়।
সামাজিক সমস্যা সমাধানে মানুষের মধ্যে পারিবারিক, ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা অতীব জরুরী। সামাজিক সমস্যার কারণ ও ক্ষতি সর্ম্পকে জনসচেতনতা তৈরী করা জরুরী। ছিনতাই, কিশোর গ্যাং, মাদক, সন্ত্রাস, খুন, প্রতারকচক্র, অজ্ঞানপার্টি বা, মলমপার্টি এসব প্রতিরোধে সামাজিকভাবে সচেতনতার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরোও বেশী সজাগ হতে হবে। মসজিদ, মার্কেট, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সিসিক্যামেরার আওতাভুক্ত করতে হবে।
» লেখক মোঃমাহিন ভূঁইয়া
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা কলেজ