আদর্শ খাবার দুধ। খাদ্য উপাদানের সবগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে দুধে। গরু, ছাগল ও মহিষের দুধ খাওয়ার প্রচলন বেশি। তবে ছাগলের দুধের ঔষধি গুণাগুণ বেশি। পুষ্টিবিদরা বলছেন, ছাগলের দুধের ঔষধি গুণাগুণ বেশি থাকলেও পুষ্টিমানের বিচারে গরু, ছাগল ও মহিষের দুধ প্রায় একই।
বাংলাদেশের ভোলা জেলা মহিষের দুধের জন্য বিখ্যাত। এই জেলা থেকে মহিষের দুধ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে মহিষের দুধের বিশেষ দধি পাওয়া যায়। এটি দেশের মানুষের হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।
প্রিয় পাঠক, এই পর্বে মহিষের দুধের বিশেষ কিছু গুণাগুণ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন দেখে নিই, কী আছে মহিষের দুধে-
◾পরিচয়:
হেলথ লাইন ও উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, মোষ বা মহিষের ইংরেজি নাম Water buffalo। এটি মূলত গরুর নিকটতম একটি প্রজাতি। যা কালো চেহারার রোমন্থক প্রাণী। এই বিশাল বোভিডির উৎপত্তি মূলত দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীন এই অঞ্চলে। বর্তমানে এটি ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার কিছু দেশেও পাওয়া যায়। মহিষ বা মোষের দুধ Water buffalo Milk নামে পরিচিত। ঘি, দধি, পনিরসহ নানা মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরিতে মহিষের দুধ ব্যবহার হয়ে থাকে।
◾পুষ্টিগুণ:
জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইন ও ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি’র খাদ্য ও পুষ্টিবিষয়ক নিবন্ধে পুষ্টিবিদরা বলছেন, মহিষের দুধ ও গরুর দুধের পুষ্টি উপাদান প্রায় একই। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মহিষের দুধ এগিয়ে রয়েছে।
এই দুধে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, ভিটামিন এ, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ যৌগ। এমনকি গরুর দুধের চেয়ে মহিষের দুধে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পরিমাণও বেশি।
◾প্রতি ১০০ গ্রাম মহিষের দুধে রয়েছে-
জলীয় অংশ- ৮৩ শতাংশ,
ক্যালরি- ২৩৭ কিলোক্যালরি,
কার্বোহাইড্রেট- ১২ গ্রাম,
প্রোটিন- ৯ গ্রাম,
ফ্যাট- ১৭ গ্রাম,
ল্যাকটোজ- ১৩ গ্রাম এবং
ক্যালসিয়াম- দৈনিক চাহিদার ৩২ শতাংশ।
◾মহিষের দুধের স্বাস্থ্য উপকারিতা:
জনপ্রিয় মার্কিন স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথলাইন ও উইকিপিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, মহিষের দুধ-
◾হৃদযন্ত্র ভালো রাখে: মহিষের দুধে কোলেস্টেরল কম থাকে, যা হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সহায়তা করে। এটি দেহের কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম উন্নত করে। মহিষের দুধে স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের পরিমাণ বেশি হলেও তা হৃদরোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
◾শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক উন্নয়ন ঘটায়: গবেষণায় দেখা গেছে, মহিষের দুধে রয়েছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন। যা শিশু এবং কিশোর -কিশোরীদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশে দারুণ ভাবে কার্যকরী। এটি মানবদেহের প্রয়োজনীয় প্রোটিন নিশ্চিত করে।
◾রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়: ভিটামিন এ সমৃদ্ধ মহিষের দুধ মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বুস্টার হিসেবে কাজ করে। পুষ্টিবিদরা বলছেন, মহিষের দুধে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে বিপজ্জনক ফ্রি র্যাডিকেল এবং খারাপ টক্সিন থেকে মুক্ত রাখে। এই দুধে থাকা খনিজ উপাদান শ্বেত রক্তকণিকা তৈরির মাধ্যমে ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে।
◾রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে: আয়রনের ঘাটতি হলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। কিন্তু মহিষের দুধ খেলে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়। ফলে লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায়। এতে করে দেহের রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বাড়তে থাকে। এ ছাড়া মহিষের দুধ দেহের নতুন কোষ এবং টিস্যুগুলির নিরাময় এবং বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
◾হাড় ও দাঁত মজবুত করে: মহিষের দুধে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অন্যান্য খনিজ উপাদান হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া এটি দাঁতের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দারুণ প্রভাব সৃষ্টি করে। নিয়মিত মহিষের দুধ পান করলে দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত ও মজবুত হয়।
◾রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: এই দুধে পটাসিয়াম থাকে, যা আপনার রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। রক্তনালী এবং ধমনীর চাপ কমিয়ে মহিষের দুধ এথেরোস্ক্লেরোসিস এবং অন্যান্য করোনারি জটিলতা রোধ করতে পারে।
◾সতর্কতা:
পুষ্টিবিদরা বলছেন, মহিষের দুধে গরুর দুধের তুলনায় ফ্যাট বেশি থাকে। মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত দুগ্ধজাত ফ্যাট ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই, যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান, তারা এই দুধ পরিহার করুন।
তথ্যসূত্র: হেলথলাইন, উইকিপিডিয়া ও এনডিটিভি।
৮ দিন ১৪ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
১২ দিন ৩ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
১৫ দিন ২ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
১৮ দিন ৩ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে
৩০ দিন ১৫ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
৪০ দিন ৬ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
৪৪ দিন ১৭ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
৫৬ দিন ১১ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে