নব্বইয়ের দশকে উপজেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বিভিন্ন খাল-বিল দখল করে মাছ চাষ শুরু করেন। শুরু থেকেই ঘেরের মালিকরা গ্রামীণ সড়কগুলো ঘেরের বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করতে থাকেন। ঘেরের পানির কারণে মাটি ধসে সড়কের বিভিন্ন অংশ বিলীন হতে থাকে। এ ছাড়া রাসায়নিক সারের কারণে মাটি নরম হয়ে সড়কগুলোর বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ উঠলেও প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে আসছে।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সরকারি রাস্তাকে বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করে মৎস্য ব্যবসায়ীরা ঘের করায় উপজেলার প্রধান ও গ্রামীণ সড়কগুলোর বিভিন্ন অংশ ধসে পড়েছে। ফলে ওই সব সড়ক দিয়ে পথচারী ও ছোট-বড় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার প্রধান সড়কসহ ১০০-এর বেশি সড়ক মাছের ঘেরের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে কাশিমাড়ী-ঘোলা খেয়াঘাট সড়কসহ সোয়ালিয়া-নূরনগর সড়ক, ঈশ্বরীপুরে সোবহান মাধ্যমিক বিদ্যালয়-ঝাপালি সড়ক, নকিপুর ভুলোর মোড়-নওয়াবেকী সড়ক, কলবাড়ী-নীল ডুমুর সড়ক, নাওয়াবেকী-কলবাড়ী সড়ক, গোপালপুর-সোয়ালিয়া সড়ক, মানিকখালী-রমজাননগর ফুটবল মাঠ, পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা-চৌদ্দরশি কেয়ার রাস্তাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাকা সড়ক ও ইটের সোলিং সড়ক ধসে নষ্ট হয়ে গেছে। এর কারণে এসব সড়ক দিয়ে পথচারী ও ছোট-বড় যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয়রা বলছেন, চাষিরা অপরিকল্পিতভাবে ঘের বা পুকুর কেটে মাছ চাষ করছেন। চাষিরা তাদের ঘের বা পুকুরের পাড় হিসেবে সরকারি রাস্তা ব্যবহার করছেন। ঘেরের পানির ঢেউয়ে সড়ক ভেঙে পড়ছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন, ‘সরকারি সড়ক মাছের ঘেরের বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করায় রাস্তা ধসে পড়ছে। বিষয়টি অনেকবার উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উত্থাপন করা হয়েছে।’
কাশিমাড়ী ইউনিয়নের ঘোলা গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, ‘মাছের ঘেরওয়ালাদের জন্য রাস্তা টিকছে না। মাছের ঘেরের পানির ঢেউয়ে রাস্তার মাটি, পিচ (বিটুমিন) পর্যন্ত ভেঙে পড়ছে। রাস্তার খারাপ অবস্থার কারণে কোনো চালক তার যানবহন নিয়ে আমাদের এলাকায় আসতে চান না।’
যাদবপুর এলাকার কামরুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী লোক প্রভাব খাটিয়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সড়ককে বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করে বছরের পর বছর মাছ চাষ করে আসছেন। এতে সরকারি অর্থে নির্মিত সড়কের ক্ষতি হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
উপজেলা প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, ঘেরের মালিকরা অবৈধভাবে সড়ককে বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করে মাছ চাষ করছেন। ফলে সড়কের ঢাল ও সোল্ডারসহ পিচের রাস্তা ভেঙে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী ঘেরের মালিকদের সড়ক থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে পৃথক বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে মাছ চাষের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে তা অমান্য করে সড়ককেই বেড়িবাঁধ হিসেবে ব্যবহার করে সড়কের ক্ষতি করে চলেছেন।
গ্রামীণ সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচল। উপজেলা সড়ক ও ইউনিয়ন সড়কে ৮ দশমিক ২ টন এবং গ্রামীণ সড়কে ৫ টনের বেশি পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়ে বেশি ওজনের যানবাহন চলাচল করছে। ফলে সড়ক দ্রুত নষ্ট হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, ‘আসছে শুষ্ক মৌসুমে রাস্তা ছেড়ে ঘেরের জন্য পৃথক বেড়িবাঁধ নির্মাণে ঘেরের মালিকদের ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া যেসব ঘেরের রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে, সেসব ঘেরের মালিককে বেড়িবাঁধ নির্মাণে আউট ড্রেন রাখার জন্য বলা হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে গবেষক তানজির কচি বলেন, আউট ড্রেন না রেখে গ্রামীণ সড়ককে ঘেরের বেড়ি হিসেবে ব্যবহার করায় তা দ্রুত ভেঙে চলে যাচ্ছে। আউট ড্রেন না রাখায় পানি নিষ্কাশনের পথ থাকছে না। ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে গ্রামের পর গ্রাম। এতেও রাস্তাঘাট নষ্ট হচ্ছে।
৩ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৩ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
৫ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে