◾মুহা.আব্দুল্লাহ ইমরান || প্রতি বছরই আমাদের জীবন একবার আসে পবিত্র মাহে রমজান। মুসলিমরা অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন এ মাসের জন্য।কেননা রমজান মাস হলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বান্দার জন্য বিশেষ এক অনুগ্রহ। এ মাসেই এমন বিশেষ কিছু আমল আছে যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার বান্দার গুণাহ মাফ করে দেন। এ আমল করার লক্ষ্যে আল্লাহ তায়ালাও বান্দাকে সুযোগ করে দেন।
হযরত আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, "যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন শয়তান ও অভিশপ্ত জিনদের শৃংখলিত করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়, তার একটি দরজাও খোলা হয় না, জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়, এর একটি দরজাও বন্ধ হয় না এবং একজন ঘোষক ডেকে বলেন, হে সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি, অগ্রসর হও, হে অসৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি, থেমে যাও। আল্লাহ (রমজানের) প্রতিটি রাতে অসংখ্য লোককে জাহান্নাম থেকে নাজাত দেন"।
(সহিহ বুখারী)
রমজান মাস জীবিত-মৃত সবার জন্য নিয়ামত। আল্লাহ তাআলার এ মাসে যে পরিমাণ বান্দাকে মাফ করেন তা অন্য মাসে করেন না। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। রমজানের এ সুযোগ হাতছাড়া করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
এ মাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে দিনে রোজা রাখা আর রাতে তারাবি এবং নফল নামাজ পড়া। রাসূল (সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ কাজগুলো বেশি করতেন। এমনকি যারা নিয়মিত এ আমল করবে তাদের গুণাহ বিমোচনের ঘোষণাও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দিয়ে গেছেন।
হাদিস শরীফে এসেছে:
হযরত আবূ হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে রমজান সম্পর্কে বলতে শুনেছি, "যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের আশায় কিয়ামে রমজান (তারাবীর সালাত) আদায় করবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে"।
(সহিহ বুখারী)
উল্লেখিত হাদিস গুলো দেখে মনে হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালার কেমন যেন রমজান মাস দিয়েছেন কেবল মাত্র মানুষকে ক্ষমা করার জন্য। শুধুমাত্র বান্দার সদিচ্ছা থাকলেই সে তার ভুল-ত্রুটির ক্ষমা পেয়ে যাবে। আল্লাহ আমাদের সে সুযোগ দান করুক।
শুধু তাই নয়, আল্লাহ তায়ালার এ রমজান মাসে এমন একটি বিশেষ রাত দিয়েছেন যে রাতের আমল আল্লাহ তায়ালার নিকট হাজার মাসের আমলের চেয়েও বেশি প্রিয়। সে রাতটিকে বলা হয় 'লাইলাতুল কদর'।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
لَیۡلَۃُ الۡقَدۡرِ ۬ۙ خَیۡرٌ مِّنۡ اَلۡفِ شَہۡرٍ ؕ﴿ؔ۳﴾
অর্থাৎ: "লাইলাতুল কদর’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম"। (সুরা কদর, আয়াত: ৩)
এখন হয়তো প্রশ্ন হতে পারে এই বিশেষ মর্যাদার রাত কোনটি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চেয়েছিলেন তারিখটি নির্দিষ্ট করে জানাতে; কিন্তু প্রথমে তারিখটি জানলেও পরে আবার তাকে তারিখটি ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দিষ্ট করে তারিখটি না বললেও অধিকাংশ হাদিসে রমজানের শেষ দশকের যেকোনো বেজোড় রাতে কদরের রাতটি হওয়ার কথা বলেছেন। এজন্য রমজানের শেষ দশকে যত সম্ভব ইবাদতে মশগুল থাকা অপরিহার্য।
হাদিস শরীফে এসেছে,
হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রা) থেকে বর্ণিত,
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লায়লাতুল কদর সম্পর্কে জানানোর জন্য বের হলেন। তখন দু’জন মুসলমান বিবাদ করছিল। তিনি বললেন, "আমি তোমাদের লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানানোর জন্য বেরিয়েছিলাম; কিন্তু তখন অমুক অমুক বিবাদে লিপ্ত থাকায় তা (লাইলাতুল কদরের নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কিত জ্ঞান) উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। আর হয়তো এটাই তোমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে। তোমরা তা রমজানের ২৫, ২৭ ও ২৯ তম রাতে অনুসন্ধান কর" । (সহিহ বুখারী)
এ বিশেষ রাতে যে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকবেন তার জীবনের সমস্ত গুণাহ মাফের ঘোষণা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দিয়েছেন।
আবূ হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরশাদ করেন, "যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত্রি জাগবে, তার পূর্বের গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে"। (সহিহ বুখারী)
আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ মাস হলো রমজান মাস। এ বিশাল সুযোগ পাওয়ার পরও যদি আমরা আমাদের অন্যায়-অপরাধের মাফ না করাতে পারি তাহলে হাশরের ময়দানে কিছুই করার থাকবে না। বরং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর হাদিসে এসেছে, যে রমজান মাস পেয়েও নিজের জীবনের গুণাহ মাফ করাতে পারলো না সে ধ্বংস। ফলশ্রুতিতে আমাদেরকে উচিত এ রমজানে গুণাহ মাফের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। হতে পারে এ রমজান আমাদের কারো জীবনের শেষ রমজান। তাই এমন যেন না হয়, রমজান মাস চলে গেলো আমাদের গুণাহ মাফ হলো না। আল্লাহ আমাদের সকলকে কবুল করুক। আমিন।
লেখক : মুহা.আব্দুল্লাহ ইমরান
মাস্টার্স (অধ্যয়নরত)
দারুন্নাজাত সিদ্দিকীয়া কামিল মাদরাসা।
ডেমরা, ঢাকা।
৩ দিন ২১ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৪ দিন ৫ ঘন্টা ৪ মিনিট আগে
৫ দিন ১৫ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
৬ দিন ১ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
৭ দিন ১৯ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
৮ দিন ৬ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
১৬ দিন ১৯ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
১৭ দিন ৫ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে