◾হৃদয় পান্ডে || একটি রাষ্ট্রের উন্নতি ও স্থিতিশীলতার মূল শক্তি হলো সচেতন নাগরিক সমাজ। প্রতিটি নাগরিকের কিছু অধিকার যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য। কিন্তু বাস্তবে আমরা কতটা নিজেদের নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন? আমাদের প্রতিদিনের আচরণে, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে, সেই দায়িত্ববোধ কতটা প্রতিফলিত হয়? এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে।
নাগরিক দায়িত্ব মানে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে ব্যক্তিরা নিজেদের সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নতির অংশীদার মনে করেন। দায়িত্বের এই পরিধি বহুমাত্রিক ভোটাধিকার প্রয়োগ, কর প্রদান, আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষা, প্রতিবেশীর প্রতি সহমর্মিতা, এবং পরিবেশ সংরক্ষণ—সবকিছুই এর অন্তর্ভুক্ত। একজন সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব হলো সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার পক্ষে দাঁড়ানো, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করা।
ভোট দেওয়া একটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার, তবে একইসঙ্গে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। ভোটদান মানে কেবল নিজের মতপ্রকাশ নয়, দেশের নেতৃত্ব নির্বাচনে সক্রিয় অংশগ্রহণ। দুঃখজনকভাবে, অনেক নাগরিক এখনো ভোটকে গুরুত্ব দেন না, কিংবা ভোটের দিনটিকে শুধুই ছুটির দিন হিসেবে দেখেন। এতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একধরনের শূন্যতা তৈরি হয়, যেখানে সঠিক নেতৃত্ব উঠে আসতে বাধাগ্রস্ত হয়। যদি আমরা সত্যিই আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, তবে প্রত্যেকেরই দায়িত্ব হলো যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বা প্রভাবের বাইরে থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।
একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয় নাগরিকদের প্রদত্ত করের মাধ্যমে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন থেকে শুরু করে সামাজিক সুরক্ষা, সবই নির্ভর করে এই রাজস্ব আয়ের ওপর। কিন্তু আমাদের দেশে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা এখনো প্রবল। অনেকে মনে করেন, কর দেওয়া মানে শুধু নিজের সম্পদ হারানো। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে, কর প্রদানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ পায়। যদি প্রতিটি নাগরিক সঠিকভাবে কর প্রদান করেন, তবে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হবে, এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা ও আনুগত্য নাগরিকদের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তবে আমরা অনেক সময় ছোটখাটো আইন লঙ্ঘনকে গুরুত্ব দিই না—যেমন ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করা, পাবলিক প্লেসে আবর্জনা ফেলা, কিংবা শব্দদূষণ করা। এসব ছোটখাটো অনিয়মই দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়।
একজন নাগরিকের দায়িত্ব তার সমাজের প্রতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অসহায়দের সহায়তা করা, দুর্যোগের সময় স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করা, কিংবা রক্তদান বা বৃক্ষরোপণের মতো ছোট ছোট কাজে অংশগ্রহণ—সবই নাগরিক দায়িত্বের অংশ। এসব কাজ ব্যক্তি ও সমগ্র সমাজের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। সামাজিক দায়বদ্ধতা মানে হলো, আমরা কেবল নিজের জন্য নয়, আশপাশের সকল মানুষের জন্য ভাবি।
পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণও নাগরিকত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্লাস্টিক বর্জ্য কমানো, জলাশয় সংরক্ষণ, গাছ লাগানো এবং পুনর্ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলা নাগরিকদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি মোকাবিলা করতে হলে, আমাদের প্রত্যেকেরই সচেতনভাবে পরিবেশবান্ধব জীবনধারা গ্রহণ করা জরুরি।
আমরা যদি সত্যিই একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গড়তে চাই তবে আমাদের প্রত্যেকেরই নিজেদের নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। একজন প্রকৃত নাগরিকের দায়িত্ব হল রাষ্ট্রের উন্নয়নে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়া। দায়িত্ববান নাগরিকদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে একটি উন্নত ভবিষ্যৎ, যেখানে সমতা, ন্যায়বিচার ও কল্যাণের আলো সবার জন্য সমানভাবে প্রসারিত হবে।
• হৃদয় পান্ডে
তরুণ লেখক ও শিক্ষার্থী
৩ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
১ দিন ৫৯ মিনিট আগে
২ দিন ২ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে
৫ দিন ৮ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
৫ দিন ২২ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
৬ দিন ১৩ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
১০ দিন ৬ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
১০ দিন ৬ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে