গালি দেওয়া নিকৃষ্ট অভ্যাস। রাগের বশীভূত হয়ে মানুষ একে অন্যকে গালি দেয়। মন্দ কথাবার্তা বলে। একে অন্যের সঙ্গে সীমালংঘন করে। এতে সামাজিক অশান্তি ও মারামারির সৃষ্টি হয়। তবে আবার চলার পথে হোঁচট খেলে তীব্র যন্ত্রণাবোধের সাথে সাথেই সবচেয়ে নম্র-ভদ্র লোকটির মুখ থেকেও বেরিয়ে আসে গালি। এই অশিষ্ট গালি দিয়ে কেউ কেউ আরামও বোধ করে।
সম্প্রতি এই ‘গালি’ দেওয়ার একটি ঘটনা নিয়ে এর পক্ষে-বিপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক নানা আলোচনা।
একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভ অনুষ্ঠানে যখন একটি প্রতিবেদন প্রচার হচ্ছিল, তখন চলে আসে অনুষ্ঠানটির উপস্থাপিকার সঙ্গে আরেকজনের কথোপকথন। অনুষ্ঠানে হঠাৎ চলে আসা কথোপকথনে গালি দিতে শোনা যায় নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের উদ্দেশে। এই ঘটনায় উপস্থাপিকাসহ তিনজনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছে ওই চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। যদিও হাসনাত আব্দুল্লাহ ওই টিভির সাংবাদিকদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ নিয়ে চলছে আলোচনা সমালোচনা।
এদিকে কাউকে গালি দেওয়া যাবে কি যাবে না, দেশের আইনে এ বিষয়ে আইনে সরাসরি কিছু বলা নেই। তবে কেউ মানহানিকর শব্দ ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা যায় বলে বিবিসি বাংলার এই সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
কিন্তু কোন ধরনের বক্তব্য মানহানিকর, আইনে তা খুব সীমিতভাবে বলা আছে। এক্ষেত্রে কোন শব্দটা মানহানির, তা সমাজের প্রথা হিসাবে ধরে নিতে হবে বলে জানান তিনি। মানহানিকর বলতে এর আওতায় গালি দেওয়ার বিষয়কেও আনা যায়। আইনে গালি শব্দটা বলা নেই বলেও উল্লেখ করেন ওই আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, আইনে গালি দেওয়ার অধিকার নেই। বরং, কাউকে গালি দিয়ে অপমান করা আইনের চোখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
মানহানির মামলাগুলো ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৯ ও ৫০০ ধারা অনুযায়ী পরিচালিত হয়।
দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারামতে, কোনও ব্যক্তি যদি অন্য কোনও ব্যক্তির খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট করার জন্য উদ্দেশ্যমূলক শব্দাবলি বা চিহ্নাদি বা দৃশ্যমান প্রতীকের সাহায্যে নিন্দা প্রণয়ন বা প্রকাশ করে, তাহলে তাতে ওই ব্যক্তির মানহানি হয়েছে মর্মে গণ্য হবে। মৃত ব্যক্তিরও খ্যাতি বা সুনাম নষ্ট হয়, এমন কোনও বক্তব্য দিলেও এই ধারায় মানহানির মামলা হতে পারে।
দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় মানহানির ক্ষেত্রে দুই বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদে বিনা শ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার কথাও বলা আছে।
এছাড়া, অনলাইনে যদি মানহানিকর বক্তব্য দেয়, তার জন্যও আইনি বিধান আছে।
চলতি বছর পাস হওয়া 'সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩'-এর ২৯ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনও ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনও ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৪৯৯ ধারায় বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে তা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হিসাবে ধরা হবে এবং এ জন্য তিনি অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এ আইনে মানহানির মামলায় কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, গালি সাধারণত একজনকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়। গালি কোনও মত নয়। গালি হলো এমন শব্দ, যা দিয়ে আরেকজনকে আহত করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইশরাত হাসানও বলেন, কাউকে অপমান করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা বা মানহানিকর বক্তব্য দেওয়া কখনোই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মাঝে পড়ে না।
তবে রাজনীতিবিদেরকে গালি দেওয়ার হিসাবটা আলাদা বলে জানান আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তার মতে, বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গালিকে কখনও কখনও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বব্যাপী এটি প্রথা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মনজিল মোরসেদ বলেন, বিশ্বব্যাপী রাজনীতিতে এটা চলছে। এগুলোকে যদি বলা হয় যে মানহানির মাঝে পড়বে, তাহলে তো রাজনীতি নিয়ে কথাই বলা যাবে না। রাজনীতির সব কথা মানহানি হিসাবে নিলে সবাই-ই তো আসামী হয়ে যাবে, তখন মত প্রকাশ আর থাকে না।
তবে ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় কাউকে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে যদি বলা হয় যে তিনি ডাকাত কিংবা চোর, এবং সে যদি মনে করে যে মানহানি হয়েছে, তাহলে তিনি মামলা করতে পারেন।
মনজিল মোরসেদ বলেন, কেউ বললো, ছাগল। এটা মানহানিকর হবে, আইনে কোথাও ব্যাখ্যা নাই। কিন্ত আপনি ফিল করতে পারবেন যে মানহানি হয়েছে।
এছাড়া, কেউ যদি আড়ালে থেকে কাউকে গালি দেয়, তখন কী হবে? তিনি বলেন, তখন মামলা হবে না। মামলা হতে হলে প্রমাণ লাগবে। আর যদি মানহানিকর মন্তব্যের প্রমাণ থাকে, তাহলে তিনি মামলা করতে পারেন।
৩ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
২ দিন ৭ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
২ দিন ৭ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
৬ দিন ৭ ঘন্টা ৪ মিনিট আগে
৬ দিন ১৪ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
৮ দিন ৫৪ মিনিট আগে
৮ দিন ১১ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
১০ দিন ৫ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে