বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তি সাত বছরের কারাদণ্ড বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধনী এনেছে বর্তমান অন্তবর্তী সরকার। বলা হয়েছে, এটি নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার মধ্যেই থাকবে। তবে একই আইনের মধ্যে আলাদাভাবে এটিকে রাখা হয়েছে।
এ খবর দেখার পর আইনজীবীসহ নারী অধিকার নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে ব্যাপক প্রত্রিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। "বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ",এ ধরনের কথা চটুল পত্রিকার শিরোনাম হিসেবে যতটা ভাল, এর জন্য সাজা নির্ধারণ ততটাই বিপজ্জনক। জনপ্রিয়তার দিক থেকে এটি গ্রহণযোগ্য হলেও এ রকম বিধানের অপপ্রয়োগ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বাস্তবতা হলো বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ প্রমাণ করা কঠিন। দু'জনের সম্মতিতেই যদি যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়,তবে তা ধর্ষণ নয়,তবে প্রতারণা থাকা অস্বাভাবিক নয়। এ ছাড়া বাংলাদেশে জোরপূর্বক সম্মতি আদায় হওয়ার সুযোগও কেউ অস্বীকার করবে না। নারী বিয়ে করতে চায়, প্রলোভনে পড়েই কোন পুরুষের সাথে যৌন মিলনে রাজি হয় এবং এক সময় সেই পুরুষ তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে – এ রকম অসংখ্য ঘটনা ঘটে। এটি অবশ্যই প্রতারণা,কিন্তু এটা যে ধর্ষণ তা কী করে বলা যায় বা প্রমাণ করা যাবে? দু'জনের সম্মতির একটা বিষয়ে পুরুষের বিরুদ্ধে একটা ধর্ষণের অভিযোগ অন্যায্য। এ ছাড়া অনেক নারী বিয়ের জন্য দীর্ঘ সম্পর্কের পর নিজেরাও অনেক সময় সামাজিক ও পারিবারিক চাপ,অর্থনৈতিক কারণ বা ছেলেটি আয় রোজগার করছে না, এমনসব কারণে সম্পর্কের ইতি টানে। সেগুলোকে কি বলা হবে এই আইনে? সেখানে কোন পুরুষ মামলা করতে পারবে?
প্রশ্ন আরও আছে,পারস্পরিক সম্মতিতে দৈহিক সম্পর্কে কে কাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়েছিলো সেটা কীভাবে প্রমাণ হবে? স্বাক্ষ্য কে দেবে? জোর করে পুরুষ যৌনাঙ্গ নারীর যৌনাঙ্গে অনুপ্রবেশ ঘটালে তবেই সেটা মেডিকেল গ্রাউন্ডে এবং আইনে ধর্ষণ হিসেবে প্রমাণ হবে। দু'জনের সম্মতিতে যদি দৈহিক মিলন হয় তবে সেটা কোনভাবেই ধর্ষণ হিসেবে বিবেচিত হবে না। কারণ এখানে কোন জোর জবরদস্তি নেই,কোন আঘাত নেই,জোর করে করার চিহ্ন নেই।
একটা অন্যরকম সামাজিক বাস্তবতাও ভাবতে হবে। অনেক নারী একাধিক পুরুষের সাথে সম্পর্ক রেখে পরে পছন্দমতো একজন কে ফাঁসিয়ে দিতে পারে,ভিক্টিম বানাতে পারে কোন প্ররোচনায় বা প্রতিশোধের বশবর্তী হয়ে।
অসম্মতিতে জোরপূর্বক দৈহিক মিলন ঘটানোই ধর্ষণ। দুজনে পারস্পরিক সম্মতি দিলে সেটা ধর্ষণ হবে কী করে? বহু বছর এর কম সম্পর্ক বজায় রেখে হঠাৎ করে কোন নারী একজন পুরুষের বিরুদ্ধে ধর্ষণের আভিযোগ আনলে সেই পুরুষের সাত বছর জেল হয়ে যাবে? সম্পর্কের অবনতি হলেই এরকম মামলা করবে অনেক নারী এবং এতে করে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি ভিক্টিমে পরিণত হবেন।
নারীর আত্মসম্মান প্রশ্নও এর সাথে জড়িত। নারীদের কাছে বিবাহ কি একটি প্রলোভন,যার লোভ দেখালেই তারা সব কিছুতে রাজি হয়ে যায়? এই একই প্রলোভন কি একজন নারী একজন পুরুষকে দেখাতে পারে না? অবাক করা বিষয় হলো এই সংশোধনীতে বলা হচ্ছে - বিবাহ না করলে প্রলোভন এবং সাতবছরের কারাদন্ড,আর বিয়ে করলেই নয়। আমরা বিশ্বাস করতে চাই নারীরা এমন কোন পণ্য নয় প্রলোভনে দেখালেই সবকিছু করবে। আইন আরও বাস্তবধর্মী হওয়া প্রয়োজন।
১০ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
১০ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে