রাষ্ট্র সংস্কার প্রশ্নে নিজেদের মতামত জানানোর পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনের কাছে তিনটি বিষয় জানতে চেয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি।
এনসিপি জানিয়েছে, ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টি প্রস্তাবের বিষয়ে আমরা পুরোপুরি একমত হতে পেরেছি। ২৯টি প্রস্তাবে আংশিকভাবে একমত হয়েছি এবং ২২টি প্রস্তাবের বিষয়ে একমত হতে পারিনি।
রোববার (২৩ মার্চ) জাতীয় সংসদের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের কাছে দলটি নিজেদের লিখিত মতামত হস্তান্তর করে।
কমিশনের কাছে তিনটি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে জানিয়ে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সংস্কার কমিটির কো-অর্ডিনেটর সারোয়ার তুষার বলেন, আমরা বুঝতে পারছি ১৬৬টি সুপারিশের সবগুলো জুলাই চার্টারে থাকবে না। আমরা এক ধরনের উদ্বেগ জানিয়েছি; ৫টি কমিশন আলাদা আলাদাভাবে তাদের প্রস্তাবগুলো দিয়েছে। সেখান থেকে কনসাইজ করে ১৬৬টি স্প্রেডশিটে এসেছে। সেখান থেকে আরও কনসাইজ করে জুলাই চার্টারে আসবে।
তুষার বলেন, যেগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো কেন বাদ দেওয়া হচ্ছে, কারণ ঐকমত্য হচ্ছে না। এসব যে জুলাই চার্টারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না তা নিয়ে কমিশন কী ভাবছে- তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমের তথ্য থেকে জানা গেছে ১১টি সংস্কার প্রস্তাব দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ছাড়া বাস্তবায়নের কথা ভাবছে সরকার। এসব কোন প্রক্রিয়ায় নির্ধারণ করা হল তাও আমাদের জিজ্ঞাসা ছিল কমিশনের কাছে।
তিনি জানান, পুলিশ সংস্কার কমিশন ও স্থানীয় সরকার কমিশনের সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে না পাঠানোর কারণও জানতে চেয়েছে এনসিপি।
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। এরই মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্যে গঠিত ছয় কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে ৩৮টি দলকে অনুরোধ জানিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন।
সংস্কার প্রশ্নে ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১১৩টিতে এনসিপি পুরোপুরি একমত জানিয়ে সারোয়ার তুষার বলেন, ২৯টিতে আংশিক একমত পোষণ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ১৪২টিতে একমত ও আংশিক একমত হয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে একমত হওয়ার পরও মন্তব্য করেছি। ২২টি একমত হয়নি; তাতেও মন্তব্য করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে সারোয়ার তুষার বলেন, জুলাই সনদ হবে, এর মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার রয়েছে। আমরা যদি সিদ্ধান্তে আসতে পারি, সংবিধানের বড় পরিবর্তন বা সম্পূর্ণ নতুন সংবিধান- যেটাই হোক, এটা লিখিত হবে। তখন এ সংবিধানের প্রশ্নে নতুন সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ সংবিধানকে বাতিল করা দরকার- আমরা আগেই বলেছি। আগে জাতীয় ঐকমত্য হতে হবে এসব বিষয়ে। মতামত প্রতিবেদন হস্তান্তরের সময় ছিলেন এনসিপির সংস্কার সমন্বয় কমিটির সদস্য মুনিরা শারমিন, জাবেদ রাশিম, আরমান হোসাইন ও সালেউদ্দিন সিফাত।
এনসিপির মতামতের মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রভাষা বাংলার বিষয়ে আপত্তি নেই, এটা হতে হবে দাপ্তরিক ভাষা। বাংলাদেশের নাগরিক বাংলাদেশি হিসেবে পরিচিত হবেন, সাথে বিভিন্ন জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি থাকতে হবে। মৌলিক অধিকারে প্রাণ, প্রকৃতি সুরক্ষার বিষয়টি রাখতে হবে। প্রার্থী মনোনয়নে দলগুলোকে ১০ শতাংশ তরুণ-তরুণীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; যাদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর পর্যন্ত ধরা যেতে পারে।
প্রার্থী হওয়ার বয়স ন্যূনতম ২৩ বছর হওয়া উচিত। ডেপুটি স্পিকার একজন হওয়া উচিত এবং তা বিরোধী দল থেকে। প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা একই ব্যক্তি হতে পারেন। তবে মন্ত্রিসভার ক্ষেত্রে প্রথমজন হলে ভালো। অর্থ বিল ছাড়া দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে মতামত দেওয়া যাবে। পাশাপাশি দলের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটও যুক্ত করা যেতে পারে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ। এক্ষেত্রে উচ্চ কক্ষের প্রার্থী নির্বাচনের আগে ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) হতে পারে, ৯ সদস্যের এই কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হতে হবে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটে।
নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার হতে হবে, তাদের কাজ কেবল নির্বাচন আয়োজন করা। এর মেয়াদ ৭০-৭৫ দিন হতে পারে। ইসি ও এনসিসি থাকলে আলাদা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার দরকার নেই; দায়িত্ব নিতে পারে এনসিসি। নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত এনসিসি থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তদন্ত করতে পারবে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল।
বিচার বিভাগের আর্থিক স্বাধীনতা, স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সংসদ চলাকালে জরুরি অবস্থা জারির পরিস্থিতি এলে উভয় কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে হতে হবে। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময় জরুরি অবস্থা জারি করা যাবে না। উচ্চকক্ষে আসন বরাদ্দের ক্ষেত্রে ১% ভোটের ভিত্তিতে হবে।
নিম্নকক্ষে ১০০ নারী থাকবে; উচ্চকক্ষে দলের প্রাপ্ত আসনে ৩৩% নির্দলীয় ব্যক্তি ও ২৫% নারীদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। উচ্চ কক্ষের জন্য সর্বনিম্ন বয়স ৩৩ বছর রাখা দরকার, শিক্ষাগত যোগ্যতার বিধান থাকতে পারবে না।
স্থানীয় সরকার, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে আলাদা কমিশন করা যেতে পারে। যেসব সুপারিশ সংবিধানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ সরকারই করতে পারবে। যেগুলো সংবিধান সম্পর্কিত, সেগুলো গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে। আসন্ন নির্বাচনটি গণপরিষদের মধ্য দিয়ে হওয়া দরকার- যা এনসিপির আগেরই অবস্থান।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে। জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এরই মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ সংস্কার, স্থানীয় সরকার সংস্কার ও গণমাধ্যমের জন্যে গঠিত আট কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এখন স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাকি আছে।
প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর মতামত জানাতে ৩৮টি রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ জানিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু হয়েছে গত ২
০ মার্চ থেকে।
৩ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
৩ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
৬ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ০ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে