লাখাইয়ে বোরো ব্রি-২৯ ধানের বীজের স্থলে ব্রি-২৮, ধান ফলনে হতাশায় কৃষকেরা।
লাখাইয়ে বোরো ব্রি-২৯ ধানের বীজের স্থলে ব্রি-২৮, ধান ফলনে হতাশায় কৃষকেরা।
লাখাইয়ের কৃষকরা বোরো ব্রি-২৯ জাতের বীজ কিনে প্রতরণার স্বীকার,তাদের দাবী, সুস্থ-সবল চারা এবং ভালো উৎপাদন পেতে হলে ভালো মানের বীজ ব্যবহার অত্যাবশকীয়। ভালো জাত ও বীজের মান ভালো না হলে কৃষকের অর্থ, শ্রম, সময় যেমন নষ্ট হয় তেমনি ঘাটতি সৃষ্টি হয় দেশীয় উৎপাদনের ওপরে।
কৃষক পর্যায়ে বীজের মান যাচাইয়ের ব্যবস্থা উন্নত না হওয়া, কৃষকদের সচেতনতার অভাব, বাজারে বীজের মনিটরিং ব্যবস্থার দুর্বলতা, নিকটস্থ দোকান থেকে বীজ ক্রয়, এমনকি বীজের সিন্ডিকেটের ফলে ভেজাল বীজ কিনে দিনের পর দিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়া মৌসুমে বীজের কৃত্রিম সংকটের ফলে ভেজাল বীজ বিক্রির ধুম চলে।
তবে বেলাশেষে ক্ষতিগ্রস্ত হয় খেটে খাওয়া গরীব চাষীরাই। সম্প্রতি নামী দামী কোম্পানি এমনকি সরকারি বীজ উৎপাদন সংস্থা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) ভালো বীজ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা মোড়ক পরিবর্তন করে বিক্রির ফলে কৃষকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কৃষকরা মোড়ক দেখে বীজ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। মেয়াদ উত্তীর্ণ বীজ নতুন মোড়কে স্থানীয়ভাবে মোড়কজাত করে আবারো বিক্রির ফলে আশানুরুপ গাছ জন্মাচ্ছে না,
জন্মালেও ফলন আসছে না। মোড়কে একটি জাত লেখা কিন্তু জন্মাচ্ছে অন্য জাত। সারা দেশেই প্রতিনিয়ত খবর পাওয়া যায় বীজ কিনে প্রতারিত হচ্ছেন কৃষকরা। কিন্তু কেনো? কৃষকরা কেনো বীজ কিনে প্রতারিত হবেন? এগুলো দেখার দায়িত্ব যাদের তারা কী করেন? আর কৃষকরা অভিযোগ করেই কি লাভ?
নামে-বেনামে অনুমোদীত এমনকি অনুমোদনহীন এসব বীজ বিক্রয় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে মুনাফা অর্জন এবং কৃষকদের প্রতারিত করতে। তবে সব বীজই ভেজাল এ কথা বলা মুশকীল। কেন না ভেজাল বীজ শনাক্তকরণের যন্ত্র যেমন নেই কৃষকের হাতে, তেমনি নেই বীজ বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের হাতে। মূলত এখন বীজ বাজার চলে হাওয়ার ওপরে। বিশ্বাস করলে বীজ নেবেন আর না করলে নেবেন না। কিন্তু ভালো বীজের সন্ধানে সব সময়ই হন্যে হয়ে ঘুরেন কৃষকরা। বীজের মান বোঝা যায় তখনই যখন কৃষক কাঙ্খিত ফলন না পায়। অনেক সময় কৃষক বুঝতেও পারে না তার ব্যবহৃত বীজটি ভেজাল ছিলো কি না। কেন না এ সংক্রান্ত কোনো প্রকার প্রশ্ন তোলা হলে তার দিকে ছুড়ে দেওয়া হবে হাজারো প্রশ্নের তীর। কিভাবে জমি চাষ করেছিলেন, কখন সেচ দিয়েছিলেন, কী ধরনের সার দিয়েছিলেন, কতবার নিড়ানী দিয়েছিলেন, ক্ষেতে ঠিকমতো কীটনাশক দেওয়া হয়েছিলো কি না। এমন হাজারো প্রশ্ন এড়িয়ে চলতে কৃষক আর কোনো প্রকার অভিযোগ তুলতে সাহস পায় না। তার ওপরে রয়েছে বীজ ব্যবসায়ীদের বিশাল এক সিন্ডিকেট।
একদিকে যেমন বাজারে বীজের সংকট দেখিয়ে দফায় দফায় নীরবে দাম বৃদ্ধি পায়, অন্য দিকে সংকটে ভেজাল বীজ বিক্রি বেশি হয়। এমনকি সরকারি বিএডিসির বীজ কিনেও কোন কোন সময় প্রতারিত হয় কৃষকরা। তবে সব বীজ ভেজাল তা কিন্তু নয়। কৃষি প্রণোদনার বীজে আস্থা রেখেও কর্মকর্তাদের গাফিলতিতে ভেজাল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ বীজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কৃষকরা।এমনি ভুক্তভোগী এক কৃষক ৫নং করাব ইউ পির মনতৈল গ্রামের আরফুজ আলী,তিনি বলেন, বুল্লাবাজারে অবস্থিত আজাদ ট্রেডার্স এর প্রোপাইটর হাফিজুর রহমান বোরো ব্রি-২৯ জাতের বীজ বলে আমাকে ৮বিঘার জন্য বীজ দেয়, আমি রোপন করে এখন দেখি এ গুলো ব্রি-২৯ নয়, সব ব্রি-২৮ জাতের।এ বছরের মত প্রতি বছরই এ দোকান থেকে বীজ কিনে প্রতারিত হচ্ছি।আরেক ভুক্তভোগী
সিংহগ্রামের কাশেম মিয়া বলেন,আজাদ ট্রেডার্স থেকে বীজ সংগ্রহ করি বীজের প্যাকেটে ব্রি-২৯ লিখা থাকলেও বীজ কিন্তু ব্রি-২৮, এ জাতের বীজে ভাল ফসল হয় না,আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে,এখান থেকে বীজ সংগ্রহ করে আরও অনেক কৃষক প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন।
অনেক কৃষক প্রতারিত হয়ে আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানা যায়।
সচেতন মহল মনে করেন, কৃষক বাঁচলে বাঁচবে আমাদের বাংলাদেশ। দেশকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপশি বীজ সিন্ডিকেট ধ্বংস করে ভেজাল বীজ বিক্রি বন্ধ করতে করা সময়ের দাবি। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মাহমুদুল হাসান মিজান বলেন,বিষয়টা দুঃখ জনক,আমি জেলা কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে বিষয়টা খতিয়ে দেখবো