আবুবকর সিদ্দিক, খুলনা জেলা প্রতিনিধি:
গতকাল সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে কয়রা প্রেসক্লাবে এসে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করে নিহত মফিজুল সানার পিতা আব্দুল মজিদ সানা বলেন, গত ১৮ এপ্রিল আমার ছেলে মফিজুল সানা পাইকগাছা উপজেলার গড়ইখালী এলাকায় তাঁর শ্বশুর বাড়ী থেকে সুন্দরবনে যায়। এসময় তাঁর সাথে একই নৌকায় ছিলেন, গড়ইখালী এলাকার মিজান গাজী, রুহুল কুদ্দুস মোড়ল ও বাদশা গাজী। পরবর্তীতে গত ২২ এপ্রিল রাতে অন্যরা বাড়ি ফিরে জানায়, মফিজুলকে বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা ৬০ কেজি হরিনের মাংশসহ আটক করেছে। তবে বন বিভাগে খোঁজ নিলে তাঁরা জানান, শুধুমাত্র ৬০ কেজি হরিনের মাংসসহ নৌকাটি আটক করেছেন। কোন আসামি ধরতে পারেননি।
মজিদ সানা বলেন, এরপর গত ২৪ এপ্রিল সকালে সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা কয়রা উপজেলার আওতাধীন হড্ডা টহল ফাঁড়ির সুন্দরবনের বেতনাখালী খালের পশ্চিম পাড়ে একটি মৃতদেহ দেখতে পেয়ে লোকালয়ে খবর পাঠায়। তখন আমার ছেলে মফিজুল সানার শ্বশুরবাড়ির লোকজন গিয়ে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে এসে আমাকে জানায়। আমি ও আমার আত্মীয় স্বজনরা খবর পেয়েই ছেলের শ্বশুর বাড়ীতে পৌঁছে দেখি, ছেলের মৃতদেহে অনেক আঘাতের চিহ্ন। আঘাতের কারণে মুখের বাম পাশের চোয়াল ভেঙে গেছে। হাত ও পায়ে রশি দিয়ে বাধার চিহ্ন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
আমি বারবার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে ঘটনার রহস্য উন্মোচনের জন্য লাশের পোস্টমর্টেম করতে বলি। কিন্তু আমার ছেলের শ্বশুর মোস্তাক গাজী আমার দাবি প্রত্যাখ্যান করে আমার ছেলের লাশ তাদের বাড়িতে দাফন করেন। আমরা এখন কয়রা থানায় হত্যা মামলা করতে গেলেও থানা মামলা গ্রহন করেনি। মফিজুল সানার মৃত্যুতে কে বা কারা জড়িত সেটি প্রশাসনিকভাবে খতিয়ে দেখার দাবি জানান মজিদ সানা।
নিহত মফিজুল সানার সাথে একত্রে সুন্দরবনে যাওয়া গড়ইখালী এলাকার মিজান গাজীর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, মফিজুলসহ আমরা চারজন সুন্দরবনে গিয়েছিলাম ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করতে। বনের মধ্যে ফাঁদ পাতার পর হটাৎ দেখি একদল অস্ত্রধারী ডাকত আসছে। তখন পালানোর সময় আমাদের সাথে থাকা বাদশা গাজী নামে একজনকে ডাকাতরা ধরে ফেলে। সে এখনো ডাকাতদের হাতে বন্দী হয়ে আছে। পরে আমরা বাকি তিনজন রাতের অন্ধকারে সুন্দরবনের হড্ডা টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন শিবসা নদী ধরে লোকালয়ের দিকে আসার সময় বনরক্ষীরা ট্রলার থেকে আলোর ইশারা দিয়ে নৌকা থামানোর সিগনাল দেন। আমরা তখন নৌকা ফেলে শিবসা নদীতে ঝাপিয়ে পড়ি।
তখন নদীতে প্রচন্ড তুফান হচ্ছিল জানিয়ে মিজান গাজী বলেন, আমাদের তিনজন সাঁতরে কে কোথায় যাচ্ছে তখন বুঝিনি। পরে আমরা দুজন নদীর কিনারে পৌঁছালেও মফিজুলকে আর পাইনি। আমরা এলাকার লোকজন ডেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর কোনো সন্ধান পাইনি। এর একদিন পর বনের মধ্য থেকে জেলেদের মাধ্যমে লাশের সন্ধান পাই। তখন ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে বনের বেতনাখালী খালের পাড় থেকে মফিজুলের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। মনেহয় ফরেস্টের লোকজন ওকে ধরে মেরে সুন্দরবনে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল।
নিহত মফিজুল সানার শ্বশুর মোস্তাক গাজীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার মেয়ের জামাই মফিজুল কয়েক বছর ধরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে আমাদের বাড়িতেই থাকতেন। সুন্দরবন থেকে অন্যরা ফিরে এসে মফিজুলকে খুঁজে না পাওয়ার বিষয় আমাদের জানায়। আমি তখন বন বিভাগ, আদালত সবখানে খোঁজখবর নিয়েও কোনো হদিস করতে পারিনি। তারপর গত বৃহস্পতিবার খবর আসে কয়রার হড্ডা টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন সুন্দরবনের এক খালে মফিজুলের লাশ ভাসছে। আমাদের আত্মীয় স্বজন গ্রামবাসীরা গিয়ে সেই লাশ নিয়ে আসে। আমার মেয়ের শ্বশুর আমাদের বাড়িতে দাফন করতে বলায় আমরা লাশ দাফন করেছি। তাদের সম্মতিতে এলাকার লোকজনের উপস্থিতিতে জামাইয়ের লাশ দাফন হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বন বিভাগের হড্ডা টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাবিত মাহমুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বুধবার ভোরের আলো ফোঁটার আগে সুন্দরবনের শিবসা নদীর পূর্ব পাশের কেওড়াতলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নৌকা থেকে হরিণের চারটি মাথা ও ৬০ কেজি মাংস উদ্ধার করা হয়। তবে এ সময় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বনরক্ষীদের উপস্থিতি টের পেয়ে নৌকা ফেলে পালিয়ে যান শিকারিরা। আমরা অনুসন্ধান করছি এই শিকারি কারা ছিল। তবে কারও মৃত্যু কিংবা সুন্দরবনের ভিতর থেকে লাশ উদ্ধারের বিষয়টি আমাদের জানা নেই।
৫৯ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে