নাটোরের লালপুরের গরীব ও মেধাবী রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মোছা. প্রার্থনা খাতুন এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামের সুজন আলী ও জলি বেগম দম্পতির মেয়ে। বাবা সুজন আলী চট্টগ্রাম শহরে ফেরি করে ফল বিক্রি করেন।
তিন সন্তানের মধ্যে প্রার্থনা বড়। সংসারের টানাপোড়েনে মেজ সন্তান সৌরভ আলী (১৪) পড়ালেখা করতে পারেনি। ছোট ছেলে শওকত (৫) এখনো বিদ্যালয়ে যাওয়া শুরু করেনি।
প্রতিবেশীদের আব্দুস সালাম জানান, সুজন আলীর জায়গাজমি নেই। বাবার জমিতে তিনি টিনের ঘর করে বসবাস করেন। চট্টগ্রাম শহরে ফেরি করে ফল বিক্রি করেন। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসেন। স্ত্রী জলি বেগমই স্বামীর পাঠানো সামান্য কিছু অর্থ দিয়ে কোনোমতে সংসার সামলান। তবে মেয়ে প্রার্থনার প্রতি তাঁর মনোযোগ বেশি। লালপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে প্রার্থনা জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে তাঁকে পাবনা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি করা হয়। অর্থের অভাবে সেখানে পড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে। বিনা পয়সায় প্রাইভেট পড়িয়ে সেই কঠিন পথ সহজ করে দিয়েছেন পাবনা সরকারি মহিলা কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আলী আজমল।
প্রার্থনা খাতুন দৈনিক দেশচিত্রকে বলেন, উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বর্ষে ফেল করায় আমার পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। প্রাইভেট পড়ার আর্থিক সামর্থ্য ছিল না। ক্লাসে পদার্থবিদ্যা তেমন একটা বুঝতেও পারতেন না। একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যা বিষয়ে অকৃতকার্য হন। এমন অবস্থায় কলেজের পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক আলী আজমল স্যার বিনা পারিশ্রমিকে এক বছর স্যার প্রাইভেট না পড়ালে হয়তো এ জায়গায় আসা যেত না। আমি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ। দ্বিতীয় বর্ষ পরীক্ষায় ভালো ফল করেন। এরপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। আমি আমার আব্বা-আম্মার প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁরা মনেপ্রাণে চান, আমি যেন ডাক্তার হই। মা ও দাদি হৃদ্রোগে আক্রান্ত। আমি ডাক্তারি পড়ে হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ হতে চাই। আমি মানবিক ডাক্তার হতে চাই। কিন্তু অর্থাভাবে ভর্তি ও পড়ালেখার খরচ বহন করা নিয়ে তাঁর পরিবার অনিশ্চয়তায় পড়ে যান। অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তার পড়াশুনায় আর্থিক সহযোগিতায় এগিয়ে আসায় ধন্যবাদ জানান। সেইসাথে আল্লাহ তাআলার প্রতি শুকরিয়া জানান।
মা জলি দৈনিক দেশচিত্রকে বেগম বলেন, পড়ালেখায় ভালো হওয়ায় প্রার্থনার বিয়ের কথা ভাবেননি। শত কষ্টের মধ্যেও মেয়ের পড়ালেখা খরচ চালিয়েছেন। এবার মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার খবরে খুশিতে কেঁদেছেন। মেয়ের বাবা চট্টগ্রাম থেকে ফোন করে আনন্দে কেঁদে ফেলেন। মেয়েকে মেডিকেলে পড়ালেখার খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কীভাবে এত খরচ চালাবেন, বুঝতে পারছিলেন না। অনেকে সহযোগিতা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়ায় নিশ্চিন্ত হয়েছি। গরীবের সহায়তা করায় আল্লাহ তাআলা তাদের ভালো করবেন ইনশাআল্লাহ।
ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ রঞ্জু বলেন, প্রার্থনার মা বাড়িতে মুরগি-ছাগল পালন করে এবং মানুষের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে মেয়েকে পড়িয়েছেন। সেই মেয়ে এবার মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তার পাশে আমরা সবাই আছি। তার সহযোগিতায় যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।