জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে সুমাইয়া আক্তার (১৮) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুর জট আপাতত খুলছে না। পরিবারের অভিযোগ, শ্বশুরবাড়ি লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের দাবি, স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে থানা-পুলিশ বলছেন, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর জানা যাবে মৃত্যুর সঠিক কারণ। এরপর নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছ, আট মাস আগে উপজেলার সদর ইউনিয়নের উৎমারচর গ্রামের দালালবাড়ির বাসিন্দা সোনাজ উদ্দিনের ছেলে সুমন মিয়ার (২২) সঙ্গে পাশ্ববর্তী ইসলামপুর পৌর শহরের মোশারফগঞ্জ তেঘুরিয়া মিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা শহিদ মিয়ার মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর দিবাগত গভীর রাতে শ্বশুরবাড়িতে মারা যান সুমাইয়া। ভোররাতে সুমাইয়ার লাশ উদ্ধার করে দেওয়ানগঞ্জ থানা মডেল থানা-পুলিশ। এসম সুমাইয়ার স্বামী সুমন মিয়া, শ্বশুর সোনাজ উদ্দিন এবং শাশুড়ি খালেদা বেগমকে আটক করে পুলিশ। পরদিন শুক্রবার ময়নাতদন্তের জন্য পুলিশ সুমাইয়ার লাশ জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরবর্তীতে আটক তিনি ব্যক্তিকে থানা থেকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
পরিবারের অভিযোগ, সুমাইয়া হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কিন্তু থানা-পুলিশ হত্যা মামলা না নিয়ে উলটো হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে ৪৮ ঘণ্টা পর থানা থেকে ছেড়ে দিয়েছেন।
এনিয়ে আইনগত প্রতিকারের দাবিতে ১৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে ইসলামপুর মোশারফগঞ্জ বাজার এলাকায় দেওয়ানগঞ্জ-ইসলামপুর মহাসড়কে মানববন্ধন করেন সুমািয়ার পরিবারসহ স্থানীয় এলাকাবাসী।
মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, ইসলামপুর পৌর বিএনপির সহসভাপতি জামিল আহমেদ উজ্জ্বল মিয়া, মোস্তাফিজুর রহমান মামুন, সদস্য জাকির হোসেন, পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান মন্টু এবং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবুল।
বক্তারা আরও বলেন, 'সুমাইয়াকে পরিকল্পিতভাবে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করেছে। কিন্তু হত্যা মামলা নেয়নি ওসি। বিপরীতে ওসি হত্যাকাণ্ডে জড়িত তিনজনকে ছেড়ে দিয়ে তাদের আত্মগোপনে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।
সুমাইয়ার মা নিলুফা বেগম বলেন, 'বিয়ের কয়েক মাস পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে সুমাইয়াকে তাঁর স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করে। এরই মধ্যে সুমাইয়া গর্ভবতী হলে এক মাস আগে অতিরিক্ত রক্তক্ষণে গর্ভপাতে সন্তান নষ্ট হয়। এতে অসুস্থ হলে আমাদের বাড়িতে সুমাইয়ার চিকিৎসা হয়। ঘটনার আট দিন আগে বাবার বাড়ি থেকে সুমাইয়াকে স্বামীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সুমাইয়ার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়নি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের থানা থেকে কেন ছেড়ে দিলো পুলিশ। আমি মেয়ে হত্যার বিচার চাই।'
সুমাইয়ার চাচা ইসলামপুর পৌর বিএনপির সহসভাপতি জামিল আহমেদ উজ্জ্বল মিয়া বলেন, 'ঘটনাস্থল থেকে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। ৪৮ ঘণ্টা পর ১৪ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় তাদেরকে ছেড়ে পুলিশ।
সুমাইয়ার শ্বশুর সোনাজ উদ্দিন বলেন, 'অযথা আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হচ্ছে। সুমাইয়ার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আমরা নির্দোষ।'
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয় শহীদ মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ বীর উত্তম গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোকেশনাল শাখায় নবম শ্রেণিতে অধ্যায়নকালে সুমাইয়া আক্তারকে বাল্যবিয়ে দেয় তাঁর পরিবার। সুমাইয়ার লাশ উদ্ধারের পর ভোর রাতে মব সৃষ্টি করে সুমাইয়ার স্বামী, শ্বশুর এবং শাশুড়িকে মারধরের চেষ্টা করে স্থানীয়রা। খবর পেয়ে জনরোষ থেকে মুক্ত করতে তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. নাজমুল হাসান বলেন, 'আমাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ঠিক নয়। মূলত গৃহবধূ সুমাইয়ার 'মৃত্যুর কারণ' তাৎক্ষণিকভাবে জানা না যাওয়ায় হত্যা মামলা রুজু করা হয়নি। জনরোষ থেকে মুক্ত করতে তিনজনকে থানায় আনা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইনানুসারে থানা থেকে ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
১ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ৩ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
২ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে