◾ বাসস ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে কোনো মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করবে না। তিনি আজ পাঁচ জেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ৫ হাজার বাড়ির চাবি হস্তান্তর উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
তিনি যাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে তরুণ প্রজন্মের সামনে তা তুলে ধরতে এবং বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে সারাদেশের অনাবিস্কৃত বধ্যভূমিগুলো খূঁজে বের করে সেগুলো সংরক্ষণের জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন। পাশাশাপাশি এই বাংলাদেশের ওপর আর কারো কাল থাবা যেন না পড়ে সেজন্য দেশবাসীকে সকর্ত থাকারও আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একজন মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করবে বা রিকশা চালাবে বা মানবেতর জীবনযাপন করবে, অন্তত আমি জাতির পিতার কন্যা ক্ষমতায় থাকতে এটা কখনো হতে পারেনা।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অসচ্ছল প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত ঘর ‘বীর নিবাস’-এর চাবি হস্তান্তরের এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলা এর সাথে যুক্ত ছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি তা এখন ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের ঘর-বাড়ি নাই এবং মানবেতর জীবনযাপন করছিল সেটা আমাদের জন্য লজ্জার ব্যাপার। তাই আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর-বাড়ি তৈরী করে তাদের জীবন-জীবিকা এবং চিকিৎসা-যাতায়াতসহ নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আজ ‘বীর নিবাস’ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমি আশা করি আরও যারা মুক্তিযোদ্ধা বাকী আছেন তাদের সকলের জন্যই এই ঘর তৈরী করে দেয়া হবে। সাধারণ গৃহহীণ-ভূমিহীন মানুষের জন্যও সরকার ঘর করে দিচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ ৫ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার মাঝে বীর নিবাস হস্তান্তর করা হচ্ছে। বর্তমানে ১৭ হাজার ৬৬০টি বীর নিবাসের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান রয়েছে। আশা করি এ বছরের মধ্যে ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে। যদিও করোনা মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও স্যাংশনের কারণে আমাদের খুবই হিসেব করে চলতে হচ্ছে।”
বিশ্ব মন্দার অভিঘাত থেকে বাঁচতে দেশবাসীকে বিদ্যুৎ,পানি ও জ¦ালানি ব্যবহারে মিতব্যয়িতা অবলম্বনের পাশাপাশি প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় আনার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন ।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যেন খাদ্যের অভাব না হয় সেজন্যই আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। সেজন্যই আমার এই আহ্বান যে যেখানে পারেন প্রত্যেকেই কিছু না কিছু উৎপাদন করেন। নিজে খান এবং অন্যকেও খাওয়ান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খাজা মিয়া।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও নড়াইলের জেলা প্রশাসকরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ‘বীর নিবাস’-এর চাবি হস্তান্তর করেন।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শাজাহান খান এমপি।
অনুষ্ঠানে ‘বীর নিবাস’ এর উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
দুটি শয়নকক্ষ, একটি বসার ঘর, একটি রান্নাঘর এবং একটি করিডোরসহ একতলা বিশিষ্ট প্রতিটি ‘বীর নিবাস’ ১৪ দশমিক ১০ লাখ টাকায় নির্মিত এবং দেশের জাতীয় পতাকার রঙ লাল-সবুজে করা।
এছাড়া রান্নাঘরের পাশে একটি সিমেন্টের উঠান, একটি নলকূপ, একটি বাথরুম এবং গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির শেড রয়েছে।
এর আগে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ সরকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ ও প্রয়াত যুদ্ধ বীরদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০ হাজার বাড়ি নির্মাণের জন্য ৪,১২৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ আর থামাতে পারবেনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় আমরা গড়ে তুলবো। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, “এই বাংলাদেশের ওপর যেন আর কারো কাল থাবা না পড়ে সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। জাতির পিতার নেতৃত্বে এই দেশ রক্ত দিয়ে আমরা স্বাধীন করেছি। এই দেশকে আমরা সোনার বাংলাদেশ হিসেবে ইনশাল্লাহ গড়ে তুলবো।”
সরকার প্রধান বলেন, আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ইউনিয়ন পর্যন্ত অনলাইনে যোগাযোগের ব্যবস্থা আমরা করেছি। তাছাড়া রাস্তা-ঘাট ও পুল করেছি, এসবের উন্নতি করে দিয়েছি। বাংলাদেশ এই ১৪ বছরে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি। রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন করেছি এবং আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। জাতির পিতা মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলে মাত্র সাড়ে ৩ বছরে এদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন। জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করেই আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইনশাল্লাহ ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। আর ২১০০ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে সেজন্য ডেল্টা প্লান ও আমরা করেছি। এই বদ্বীপ অঞ্চলের মানুষ যেন বংশ পরম্পরায় সুন্দর ভাবে বাঁচতে পারে এবং উন্নত জীবন পায় সেজন্যই এই পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দলমত নির্বিশেষে সব বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য সম্মানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশি বন্ধু এবং মিত্র শক্তির সদস্যদেরকে সম্মান দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দিয়েছি। দলমত নির্বিশেষে সব মুক্তিযোদ্ধার জন্য এই সম্মানের ব্যবস্থা আমরা করেছি। ৭১ সালে যারা জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধ করে আমাদের বিজয় এনে দিয়েছেন, তাদেরকে সম্মান দেখানো আমাদের কর্তব্য মনে করি।
তিনি বলেন, সেজন্যই মুক্তিযোদ্ধারা মারা যেন গেলে রাষ্ট্রীয় সম্মান পায় সে ব্যবস্থা করেছি। এ ছাড়া আমরা সরকারে আসার পর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরা যেন বংশ পরম্পরায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করেছি। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের অনলাইনে ভাতা দেয়া এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদানের জন্য ম্যানেজমন্টে ইনফর্মেশন সিষ্টেম (এমআইএস) নামে একটি পুর্ণাঙ্গ ডাটাবেজও গড়ে তুলেছে। এটি জাতীয় পরিচয় পত্রের ডাটাবেজের সঙ্গেও সংযুক্ত রয়েছে।
তিনি মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্মৃতি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, এখনও অনেক জায়গা অনাবিস্কৃত রয়ে গেছে সেগুলো খুঁজে বের করবেন। ইতোধ্যে প্রায় ২০ হাজার সমাধিস্থল সংরক্ষণ করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। ২৯৩টি উপজেলার ৩৬০টি স্থানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ বা জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে এবং প্রত্যেকটি উপজেলায় আলাদা মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্স করা হচ্ছে। এতে মানুষ জানতে পারবে এই যুদ্ধ আমাদের জন্য কত গৌরবের ছিল বা কাদের আত্মত্যাগে এই স্বাধীনতা অথবা কাদের আত্মত্যাগে আজকে এই সম্মান পাচ্ছি সেটা যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মানুষ স্মরণ করতে পারে।
‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে যে বিজয় অর্জন করেছি, সেটা যেন মানুষ ভুলে গিয়েছিল’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে দায়মুক্তি দিয়ে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল, তারাই প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, উপদেষ্টা হয়ে ক্ষমতায় বসেন। স্বাভাবিকভাবে তখন মুক্তিযোদ্ধারা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার হলে চাকরি দেয়া হতো না। এমন দুর্ভাগ্যজনক পরিবেশ ছিল ২১ বছর।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতা যাওয়ার জন্য এই ১৫ ফেব্রুয়ারি একটা ভোটার বিহীন নির্বাচন করেছিল। যে নির্বাচনে ২ শতাংশ ভোটও পড়েনি। সারাদেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করে, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে খালেদা জিয়া নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে এই ঘোষণা দেয়। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন পূরণ হয়নি। কারণ, বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটের অধিকার নিয়ে অনেক সচেতন। তাদের ভোট চুরি হয়েছিল বলে আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনের ফলে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। সেজন্য ১৫ ফেব্রুয়ারি গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করার একটা দিন।
এছাড়া স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন চলাকালে এরশাদ সরকার এই ১৫ ফেব্রুয়ারিতেই তাঁকে এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ ১৫ দলীয় ঐক্যজোটের প্রায় ৪০ জন নেতাকে গ্রেফতার ও বন্দি করে বলেও তিনি জানান।
৯ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
১৮ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
৪ দিন ১৪ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
৪ দিন ২৩ ঘন্টা ৫৩ মিনিট আগে
৬ দিন ১২ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
৭ দিন ১৩ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
৭ দিন ২৩ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
১১ দিন ১৩ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে