◾ প্রণব মন্ডল
অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণার পরে প্রয়োগ শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমের। তথাকথিত মুখস্থ শিক্ষার বৃত্ত ভেঙে জীবন দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষাক্রম আমাদের জন্য এক আশীর্বাদ। শিক্ষা মানুষকে দীক্ষা দিবে নিজ,পরিবার,সমাজ, দেশ তথা সমগ্র বিশ্ব যেন প্রত্যেক ব্যক্তির অর্জিত শিক্ষা দ্বারা উপকৃত হতে পারে এটিই তাত্ত্বিক অনুমান। যেটি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার আলোয় একটি জাতি হয়ে উঠতে পারে আলোকিত ও সমৃদ্ধ। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমাদের দেশে প্রয়োগ শুরু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমের যেটিকে সঠিক ভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গ্রহণ করা হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এ শিক্ষাক্রমকে সফল করতে হলে প্রয়োজন শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবক এর ত্রিমুখী সমন্বয়।কিন্তু বাস্তবতা বড়ই নির্মম। এখনো বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ব্যাচ কোচিং এ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। স্যারদের হাতে অনেক নম্বর এই ভয়ে শিক্ষার্থী অভিভাবক নিজেদের জিম্মি মনে করছেন। আর কিছু শিক্ষকগন এটাকে পুঁজি করে আগের মতোই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষকদের এহেন কাজে লাইনচ্যুত হচ্ছে নতুন কারিকুলাম। ক্লাসরুম কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে কোচিং প্রবণতার কারণে। অন্যদিকে অভিভাবকবৃন্দও নতুন শিক্ষাক্রম এখনো বুঝে উঠতে না পারার কারণে ব্যবসায়ী শিক্ষকগন তাদের যেভাবে তাদের মতো করে বোঝাচ্ছেন তারা সেই ভাবে বুঝছেন।
অধিকাংশ অভিভাবকদের মধ্যে শিক্ষা নিয়ে যে ধারণা এখনো বিদ্যমান সেটি হোল সন্তান স্কুলে যাবে,স্কুল থেকে পড়া মুখস্থ করতে দিবে বা একগাদা বাড়ির কাজ দিবে আর শিক্ষার্থীরা বাড়ি এসে নিজে বা গৃহশিক্ষকের বা ব্যাচের স্যারের সহায়তায় সেগুলো মুখস্থ করে পরের দিন স্কুলে যাবে এবং ফাইনালি সে একখান এ প্লাস পাবে।তাছাড়াও স্কুলের পরীক্ষায় ভাল ফলের আশায় এবং বিষয় শিক্ষকের সুনজরে রাখার জন্য অভিভাবকগন স্কুলের স্যারদের কাছে সন্তানদেরকোচিং করাতে পাঠান।অভিভাবকদের আসলে জানা উচিত শিক্ষার সত্যিকারের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি।কেন, কিজন্য এবং কিভাবে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শিখছে বা শিখবে। শিক্ষা গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য হোল জীবন দক্ষতা অর্জন এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে বৈশ্বিক আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠা। নতুন শিক্ষাক্রম আমাদের সেই শিক্ষাটাই দিতে চাচ্ছে। যেমন ধরুন, পুরাতন কারিকুলামে ছিল ভুমিকম্প কেন এবং কিভাবে হয়।শিক্ষার্থীরা ভুমিকম্প সম্পর্কে কিছু তথ্য মুখস্থ করতো মাত্র।কিন্তু বর্তমান শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষা দিচ্ছে ভুমিকম্প হলে কিভাবে কি করতে হয় জীবন বাঁচানোর জন্য। আগুন লেগে গেলে কিভাবে আগুন নেভাতে হয় বা কিভাবে কোন নাম্বারে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন করে ডাকতে হয়। মুখস্থ তত্ত্বের চেয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা নির্ভর এই শিক্ষা কি জীবনের জন্য বেশি প্রয়োজনীয় নয় ? আমার মনে হয় শিক্ষার মাধ্যমে জীবন দক্ষতা অর্জন করতে পারলে আমাদের সকলের কাংখিত একটা ভালো চাকুরীও পাওয়া যায়।একটা জিনিস অভিভাবকদের বুঝতে হবে যে নতুন শিক্ষাক্রমে ব্যাচে পড়ার কিছু নেই। স্কুলের ক্লাসরুমে সবকিছু শিক্ষক হাতে কলমে করিয়ে এবং বুঝিয়ে দিতে বাধ্য। তাছাড়া এখন কোন ফার্স্ট সেকেন্ড,এ প্লাস বা পাশ ফেল এর ভয় নেই। কিছু অদৃশ্য প্ররোচনায় যেসকল অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা ব্যাচের পিছে ছুটে সময় ও অর্থ নষ্ট করছেন তাদের এই ছোটাছুটিকে বৃথা মনে হয়।
নতুন শিক্ষাক্রমকে সফল করতে হলে প্রশাসনকে শক্ত হাতে শিক্ষকদের ব্যাচ কোচিং বন্ধ করতে হবে এবং অন্য পেশার মতো তাদের যথেষ্ট বেতন ভাতাদি প্রদান করতে হবে ।আর একটি বিষয় বলতে চাই। সেটি হোল না বুঝে সব ঠিক মতো অনেক শিক্ষক এবং অভিভাবক এই নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করছেন। গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার চক্রব্যুহ থেকে অনেকেই বের হতে চাচ্ছেন না।যেটিই হলো এই নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায়। সকলে মিলে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে ভক্তি সহকারে কাজ করলে সফলতা আসবেই।
লেখক:
প্রণব মন্ডল,
শিক্ষার্থী, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
১ দিন ৯ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
২ দিন ৯ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
৬ দিন ১৮ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
৯ দিন ২ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
১৫ দিন ১৪ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
১৬ দিন ৭ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে
১৭ দিন ৫ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
১৮ দিন ৬ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে