বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে মৌলভীবাজারে বন্যার আশঙ্কা
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি এবং ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের জুড়ী নদী ও কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে শনিবার (৩১ মে) দুপুরে জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার এবং শুক্রবার কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পানি বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে কমলগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত ৫ থেকে ৬টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে বন্যার আশঙ্কায় রয়েছেন জুড়ী ও কমলগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দারা। এছাড়া বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওর পারের নিম্নাঅঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা দেখা দিবে।
এদিকে জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিকেলে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মৌলভীবাজার শহরের পুরাতন হাসপাতাল রোডসহ বিভিন্ন সড়ক ও শহরের কয়েকটি বাসাবাড়িতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, শনিবার বিকেল ৩টায় মনু নদের রেলওয়ে ব্রিজে পানি ২০২ সেন্টিমিটার, মনু নদের চাঁদনীঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার, ধলাই নদী রেলওয়ে ব্রিজে পানি ২৫০ সেন্টিমিটার ও কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে ১২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, জেলার মনু নদ, ধলই নদী ও জুড়ী নদীসহ কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে বেড়েছে। কমলগঞ্জ থানা সংলগ্ন পুরাতন ধলাই সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টির ফলে উজানে পাহাড়ি এলাকায় পানি বেড়ে যাওয়ায় ধলাই নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা এলাকা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাধবপুর, আদমপুর, কমলগঞ্জ সদর, পৌরসভা, মুন্সিবাজার ও রহিমপুর ইউনিয়নসহ ৫৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ধলাই নদী মিলিত হয়েছে মনু নদীর সঙ্গে। নদীটি আঁকাবাঁকা প্রবাহিত হওয়ায় বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁধে চাপের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এর আগেও বাঁধ ভেঙে গিয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল। ফলে কৃষিজমি ও বসতঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তারা আশঙ্কা করছেন, এবারও যদি পানি বাড়তে থাকে এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ ভেঙে যায়, তাহলে বড় ধরনের বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পর্যবেক্ষক মো. রাসেল মিয়া জানান, উজানে ভারী বৃষ্টির ফলে শুক্রবার রাত থেকে ধলাই নদীর পানি বেড়েছে। তবে এখনও তা বিপদসীমার নিচেই রয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডিএম সাদিল আল সাফিন বলেন, পানি দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে দ্রুত মেরামতকাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। প্রশাসন সার্বক্ষণিকভাবে পানি পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে।
জানা যায়, গত বছর বর্ষা মৌসুমে টানা ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলায় মনু ও ধলাই নদ-নদীর পৃথক পৃথক জায়গায় একাধিক ভাঙন দেখা দেয়। এই ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশের কারণে তলিয়ে যায় বিস্তীর্ণ এলাকা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও ফিশারি। গৃহহীন হয়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে হয় বন্যাকবলিতদের। গবাদিপশু নিয়েও বিপাকে পড়তে হয় তাদের।
এ ছাড়া গত বছর মনু ও ধলাই নদ-নদীর ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত করার আগেই চলতি মৌসুমে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ পড়েছেন দুশ্চিন্তায়।
এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ বলেন, তিন দিনের অব্যাহত টানা বর্ষণ ও উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে জেলার মনু নদ, ধলই নদী ও জুড়ী নদীসহ কুশিয়ারা নদীর পানি শেরপুর পয়েন্টে বেড়েছে। জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এখন প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি।
৯ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে