"বারো মাসে তেরো পার্বণ"এটি শুধু প্রবাদ নয়, বরং বাঙালি জীবনের ছন্দ ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। সেই তেরো পার্বণের অন্যতম একটি প্রাণবন্ত উৎসব হলো জামাইষষ্ঠী, যা সাতক্ষীরায় পালিত হয় এক বিশেষ আভিজাত্য, আন্তরিকতা ও ঐতিহ্যের আবহে।সনাতন ধর্মে জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতে মা ষষ্ঠীর ব্রত পালনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় জামাইষষ্ঠীর আনুষ্ঠানিকতা। প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, মা ষষ্ঠীর আশীর্বাদে কন্যা সন্তানের দাম্পত্য জীবন ও মাতৃত্ব সুরক্ষিত হয়। শাশুড়িরা জামাইয়ের মঙ্গল কামনায় ব্রত পালন করেন এবং মা ষষ্ঠীর চরণে প্রার্থনা জানান এ ব্রত আবার এক ঐতিহাসিক কাহিনির উপর প্রতিষ্ঠিত।যেখানে মিথ্যা অপবাদে পীড়িত হয়ে ষষ্ঠী দেবী এক নারীকে অভিশাপ দেন, এবং পরে তার অনুশোচনার ফলেই পূজার প্রথা চালু হয়।এ বছর জামাই ষষ্ঠী পালন হচ্ছে ১ জুন রবিবার।জামাইষষ্ঠীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে ভোজন-আয়োজন। সাতক্ষীরায় এই উৎসব ঘিরে শ্বশুরবাড়িতে তৈরি হয় এক রাজকীয় ভোজন। আদর্শ জামাইষষ্ঠী থালাতে যা যা থাকে:শুক্তো,গরম ভাত ও ঘি,আমের টক ডাল,পোলাও,ইলিশ মাছ ভাজা,খাসি বা পাঁঠার মাংস,ছানার পায়েস,রসগোল্লা, দই ও মিষ্টি এবং অবশ্যই সাতক্ষীরার বিখ্যাত গোপালভোগ ও হিমসাগর আম।শুধু খাওয়া দাওয়াতেই থেমে থাকেন না শ্বশুর-শাশুড়িরা। জামাইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন জামাকাপড়, ধুতি-পাঞ্জাবি, সুগন্ধি, এমনকি দামী উপহারও।সাতক্ষীরা জেলা বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ আম উৎপাদনকারী অঞ্চল। জ্যৈষ্ঠ মাস অর্থাৎ আমের প্রধান মৌসুমেই জামাইষষ্ঠী পড়ে যাওয়ায় আম হয়ে উঠেছে এই উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অংশ।বিশেষ করে হিমসাগর, গোপালভোগ, ল্যাংড়া ও আম্রপালি এই জাতের আম জামাইয়ের পাতে না থাকলে যেন ষষ্ঠীর পূজা পূর্ণ হয় না! অনেক শ্বশুরবাড়িতে জামাইয়ের জন্য আলাদা করে পাঠানো হয় পাকা আম ও ফলের প্যাকেট। শুধু সামাজিক রীতি নয় বরং পারিবারিক সম্পর্কের মাধুর্য বাড়ানোর এক উপায়।
এক সময়ের সমাজে বাল্যবিবাহ ও সতীদাহ ছিল স্বীকৃত প্রথা। স্বামীর দীর্ঘ জীবন তখন কন্যার জীবনের নিশ্চয়তা ছিল। তাই জামাই ষষ্ঠীর মূল উদ্দেশ্য ছিল জামাইয়ের দীর্ঘায়ু ও সুস্থতার জন্য প্রার্থনা।জামাইষষ্ঠী ছিল সেই প্রতীক্ষা ভাঙার, দেখা হওয়ার ও পুনর্মিলনের সামাজিক স্বীকৃতি।
এইভাবে জামাইষষ্ঠী শুধু এক ভোজ নয়, বরং একটি গভীর সামাজিক বার্তাবাহী উৎসব, যেখানে মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য প্রার্থনা লুকিয়ে আছে।সাতক্ষীরার জামাইষষ্ঠী কেবল একটি পারিবারিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি এক সামাজিক মিলনমেলা। জামাই ও শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়রা একত্রিত হন, দীর্ঘদিনের দূরত্ব ঘোচে। সম্পর্ক হয় আরও মজবুত।বিভিন্ন গ্রামে পাড়াপড়শিদের মধ্যে আয়োজন হয় জামাইয়ের জন্য ছোটখাটো শোভাযাত্রা বা গান-বাজনার আসরও।জামাইষষ্ঠী উৎসব শুধু জামাইকে ঘিরে নয়, বরং মেয়ের কল্যাণ, পরিবারিক বন্ধন, মাতৃত্বের সম্ভাবনা ও সামাজিক সম্পর্কের পুনঃসংযোগের প্রতীক।সাতক্ষীরার জামাইষষ্ঠী উৎসব তাই শুধু আম ও মিষ্টির স্বাদ নয় এটি বাঙালির আন্তরিকতা, ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক মহার্ঘ প্রকাশ
১০ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে