মোংলা সহ চার সুমুদ্রে বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত পিরোজপুরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি টুর্নামেন্ট উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন উলিপুরে চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্বে বসত ঘর ঘেঁষে গভীর গর্ত খননের অভিযোগ গোয়ালন্দঘাটে পুলিশের অভিযানে হেরোইনসহ দুই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার সাধারণ মানুষের অগাধ বিশ্বাস ও ভালবাসা পাচ্ছে ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বরিশালে ওষধের দাম সরকারিভাবে নির্ধারণ ও বিক্রির কমিশন বৃদ্ধিসহ চার দফা দাবীতে মানববন্ধন। লবণ পানির আগ্রাসন থেকে প্রাণ প্রকৃতি বাঁচাতে মানববন্ধন ঝিনাইগাতীতে হাতির আক্রমণে নিহত ২ পরিবারকে আর্থিক অনুদানসহ খাদ্যসামগ্রী প্রদান করলেন ইউএনও আশরাফুল আলম রাসেল পরিবেশে ও প্রকৃতির পাঠশালার উদ্যোগে বিশ্ব জীব বৈচিত্র্য দিবস পালিত আদমদীঘিতে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে চুরি করা গরু রেখে পালালো চোরচক্র শান্তিগঞ্জে জব্বার ডাকাত গ্রেফতার আদমদীঘি সদর ইউনিয়ন তাঁতীদলের কমিটি ঘোষনা ঈশ্বরগঞ্জে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করণে মতবিনিময় সভা সারিয়াকান্দিতে সেনাবাহিনী কর্তৃক বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান বগুড়ার যমুনাচরে প্রস্তুত চাহিদার চেয়ে বেশি কুরবানির পশু পাঁচবিবিতে ৪ দফা দাবিতে ঔষধ ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন ব্যবসায়ী নুরুল হুদা ছানু'র জমিতে ইমারত নির্মাণে বাধা নেই-ভূমি অ‌ফিসার আফিফান নজমু কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্টস সমিতি সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আয়োজন ৪ দফা দাবীতে মানববন্ধন বরিশালে পুলিশের হাতকড়া নিয়ে পালানোর নয় ঘণ্টার মধ্যে ফের দুই যুবক আটক। কিশোরগঞ্জে সরকারি খাস জমির উপর দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধের অভিযোগ

ট্রেন, আমি ও আমরা

দেশচিত্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশের সময়: 13-03-2023 07:26:52 am

◾অমিত হাসান 


সময় কত চমৎকারই না দেখায় মানুষেরে! সময়ের অবিরত ছুটে চলার সাথেই আমাদের এ জীবন, আমাদের বেঁচে থাকা । এ জীবন পরিক্রমার মধ্যে জীবনে আসে কত ঝড়, কত দুঃখ, হাসি-বেদনা । সময়ই আমাদের বুঝিয়ে দেয় জীবনে হাসির পেছনেও যে লুকিয়ে থাকে কত বিষাদমাখা গল্প আর মধুর বিপরীতে বিষ । তবুও এ জীবন যে থেমে থাকবার নয় । সে নদীর স্রোতের মতোই সদা প্রবহমান । 


আমাদের গ্রাম থেকে একটু দূরেই ঢাকা-ভৈরব রেলপথ । ছোট থেকে কতবার যে এ পথে ট্রেন চলতে দেখেছি তাঁর ইয়ত্তা নেই । কিন্তু ট্রেনকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগটা কোনোভাবেই আসছিলো না । পাড়ার বন্ধুরা বলতো তাঁরা নাকি ট্রেনে চড়েছে । ওদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আমাকেও ট্রেনের প্রতি আকৃষ্ট করেই চলছিলো । কিন্তু আমার জীবনে ট্রেনগুলো কত কাছে থেকেও যেন কতদূর? মায়ের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে বলতাম,"মা,আমি কি কোনোদিন ট্রেনে ওঠমু না ? আমি তো বাসে বমি করি, ট্রেনে করমু না দেইখো । একদিন ট্রেনে কোথাও একটা নিয়ে যেও । " 

মাকে কখনো কখনো রাজি করাতে পারলেও বাবা হেসে উড়িয়ে দিতেন । বলতেন তুমি আগে বড় হও বাবা । আমার প্রাক শৈশবে নাকি আমি একবার পরিবারের সঙ্গে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে বাসায় এসেছিলাম । সেদিন নাকি আমি এত বেশি কান্না করেছি যে তারপর আর কখনোই কেউ আমায় নিয়ে ট্রেনে ওঠার সাহস করে নি । 


ছবি: লেখক অমিত হাসান


এদিকে শামসুর রাহমানের লেখা ট্রেন কবিতার লাইনগুলো আমাকে আরো উতলা করে রেখেছিলো ট্রেনে ওঠার জন্য । কবিতার একটা পঙক্তি আমার খুব পছন্দের ছিল ----

"পুলের ওপর বাজনা বাজে /ঝন ঝনাঝন ঝন " ।

আর এদিকে বাড়ির অদূরে ঘোড়াশাল ব্রিজে এসে ট্রেনে যখন বাঁশিটা বাজতো সে সুর আমায় ঘরে রাখতে পারতো না । চলে আসতাম বাড়ির দক্ষিণ দিকটায়, যেখান থেকে মাঠের ওপারে রেললাইন দিয়ে ট্রেন চলতে দেখা যায় । কবির ভাষায় -"একটু জিরোয় ফের ছুটে যায় /মাঠ পেরোলেই বন" । 


কবিতার শেষদিকটায় যখন কবি বলেন থামবে হঠাৎ মজার গাড়ি একটু কেশে খক/আমায় নিয়ে ছুটবে আবার ঝক ঝকাঝক ঝক তখন যেন আমার বাঁধ আর কোনোভাবেই শইতো না । ইচ্ছে হতো ট্রেনগুলোতে ওঠে পরি । কিন্তু এ মজার গাড়িগুলো তো আমায় আর নিলো না । 


অবশেষে, বুঝ হওয়ার পর ২০১৬ সালে আমি যখন ক্লাস টেইনে পড়ি তখন সুযোগ আসে ট্রেনে ওঠার । আমাদের উপজেলা থেকে লোকাল ট্রেনে ঢাকা যাওয়া মোটামুটি ১ ঘণ্টার পথ । স্টেশন থেকে টিকেট করার পর যখন জানতে পারলাম লোকাল ট্রেনগুলোয় বসার সিটসমেত টিকেট ইস্যু করা হয় না তখন বহু বছর আগে বাবার বলা কথাটার মর্মার্থ আমি বুঝতে শুরু করেছি । কেন তিনি আমাকে নিয়ে আমাদের বাড়ির কাছ দিয়েই যাওয়া লোকাল ট্রেনে ওঠতে চাইতেন না । 

ছবি: লেখক অমিত হাসান ও তার সহপাঠীরা


আমার এরপরের জীবনটায় ট্রেনের সাথে কিংবা আরেকটু খোলাসা করে বললে লোকাল ট্রেনগুলোর সাথে যে সখ্যতা গড়ে ওঠেছে তা যে কোনোভাবেই ভুলবার নয় । ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় থেকেই মূলত ট্রেনের সাথে আমার সম্পর্ক দৃঢ় হতে শুরু করে । তারপর থেকে ট্রেনগুলো আমায় কেন যেন আর রেখে যেতে চায় না । আমি কখনো ট্রেনের জন্য ৫ মিনিট লেট করলে দেখা যায় ট্রেন করেছে ১০ মিনিট লেট ! আবার কখনো দেখি আমি স্টেশনে পৌঁছা মাত্রই ট্রেন এলো । অবশ্য ট্রেনের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা বা শিডিউল বিপর্যয়ের শিকার যে আমি হই নি তা বলা যাবে না । তবে আমি কি আর আমার প্রিয়তমের দোষ বলতে পারি ? 


এসএসসির পর একটা সময় আমার স্কুলের বন্ধুরা সকালে একসাথে ঢাকায় এসে ক্লাস করতাম, আবার দুপুর বা বিকেলের ট্রেনে বাসায় ফিরতাম । কিন্তু এইচএসসি ফলাফলের পর বন্ধুরা একেকজন একেক দিকের বিশ্ববিদ্যালয় বা কর্মস্থলে চলে গেলো । পরে রইলাম শুধু আমি । ট্রেনকে যে কোনোভাবেই ছাড়তে পারি নি । প্রাকশৈশবে যে ট্রেন ছিল আমার কান্নার কারণ, শৈশবে তা স্বপ্ন আর কৈশোর থেকেই বাস্তব । সদ্য কৈশোরে এসে নতুন করে যে পরিচয়টা হয়েছিল ট্রেনগুলোর সাথে এখন সে পরিচয়টা রুপ নিয়েছে এক আবেগে,এক ভালোবাসায় । আর তাঁর গভীরতা বেড়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রবীন্দ্রনাথের মতো করে বলতেই হয়, "যতবার যেতে চাহি,ততবারই কহে/আমি ভালোবাসি যাঁরে/সে কি কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে?" 


এরমধ্যে গত কয়েক বছরে ট্রেন ভ্রমণ করতে গিয়ে কত বিচিত্র অভিজ্ঞতা যে হয়েছে আমার । চলার পথে নতুন কতশত সহযাত্রী যে পেয়েছি, পেয়ছি কত বন্ধু আর কত অপরিচিতির সাথে হয়েছে পরিচয় । 

অবশ্য হারানোর তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ । স্টেশনে বসে অথবা ট্রেনের কোনো কামড়ায় চির অপরিচিত মানুষগুলো কত আপন করে নিতো আমায় । কেউকেউ ফোন নাম্বার বা ফেসবুক আইডি রেখে দিতো । এরপর কেউ যোগাযোগ রেখেছে, কেউ রাখে নি । তবে কিছু মানুষ আছে যাদের কথা না বললেই নয় । তারা যে আমার নিয়মিত সহযাত্রী,আমার ভাই । বছরের পর বছর ধরে মানুষগুলো ঢাকার প্বার্শবতী নরসিংদী এবং গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্টেশন থেকে এসে গিয়ে ঢাকায় অফিস করে । 


কিন্তু এ পথচলা মোটেই সহজ নয় । লোকাল বাসের মতো লোকাল ট্রেনগুলোতেও বেশিরভাগ সময়ই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় । সেই সাতসকালে বাসা থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যার সময় লোকে লোকারন্য ট্রেনে ফিরতে হয় বাড়ি । 


আরও খবর