বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন। সংগঠনটির দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার মিল নেই। পুরো প্রতিবেদনটি পক্ষপাতদুষ্ট।
শনিবার (২৫ মার্চ) বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করে সংগঠনটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন বিষয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, গত ২০ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে যে দুইটি সংগঠন ও ব্যক্তিদের সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে, তারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নয় এবং অনিবন্ধিত। এ দুটি সংগঠনের একটি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের সমাবেশে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে এমন তথ্য দিয়েছিল, যা বিভ্রান্তিকর। পরবর্তীতে তারা রিপোর্টটির বাস্তবতা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রতিবেদনে যে পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে তা যথাযথ নয় জানিয়ে মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান একজন প্রধানমন্ত্রীকে যেটুকু ক্ষমতা ব্যবহারের সুযোগ দিয়েছে, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের আলোকেই তার ক্ষমতা ব্যবহার করছেন। অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিচার বিভাগের যোগ্যতা ও সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য তারা করতে পারে না। এ ধরনের মন্তব্য জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জতিক আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
তিনি বলেন, ওই প্রতিবেদনে গণতন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ বলে যে ব্যাখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে আমাদের মনে হয়েছে এ বিষয়টি সম্পূর্ণ পক্ষপাতদুষ্ট। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আমাদের প্রশ্ন হলো, পৃথিবীর কোন দেশে ত্রুটিমুক্ত গণতন্ত্র রয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্র বলতে পারবে কি? ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ দেশে নির্বাচনের বিরুদ্ধে ক্যাপিটাল হিলে দাঙ্গা বাঁধিয়েছিলেন এবং কত প্রাণ ঝরে গেছে সে ইতিহাস বিশ্ববাসীর জানা রয়েছে। আমরা মানবাধিকার কর্মীরা বলছি না বাংলাদেশের গণতন্ত্র শতভাগ ত্রুটিমুক্ত। কিন্তু গণতন্ত্র ও সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশের সচেতন নাগরিক এবং মানবাধিকার সংগঠন প্রতিনিয়ত সোচ্চার রয়েছে।
বেশকিছু নাগরিক সংগঠনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার নির্বাচন কমিশন আইন করেছে জানিয়ে সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে বেশ কিছু নির্বাচনে তাদের নিরপেক্ষতা, যোগ্যতা ও সাহসিকতার প্রমাণ করেছে।
মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমে সেন্সরশিপ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ বিষয়ে প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয় দাবি করে মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, সাম্প্রতিক কালের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, টেলিভিশন টক-শোতে সরকারের সমালোচনা হচ্ছে। এছাড়াও টেলিভিশন ও পত্রিকায় অসংখ্য অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে। এতে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরকারের কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করছে না। এছাড়াও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- ২০১৮ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকেই সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আইনটির আপত্তিকর ধারা সংশোধন করা হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি ২০২২ সালের মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর হলেও বিষ্ময়করভাবে এতে বাংলাদেশের ২০১৮ সালের নির্বাচনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়টি ২০১৮ বা ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে প্রাসঙ্গিক হতে পারতো। চার বছর পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েকমাস পূর্বে ২০১৮ সালের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টি স্বভাবতই সাধারণ নাগরিকদের কাছে রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলে মনে হচ্ছে।
সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আরও বলেন, প্রশাসনের হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেদনটিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২২ সালে প্রশাসনের হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। একটি দায়িত্বশীল, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক সরকারের কাছ থেকে আমরা আরও দায়িত্বশীল প্রতিবেদন প্রত্যাশা করি। এ ছাড়া সব রাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি এই রাষ্ট্রটির (যুক্তরাষ্ট্রের) সমান মনোযোগ থাকা উচিত।
তিনি বলেন, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান প্রধানমন্ত্রীর সাংবিধানিক ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল। এটি স্পষ্টতই জাতিসংঘ সনদের পরিপন্থি। যুক্তরাষ্ট্রের এ জাতীয় প্রতিবেদন প্রকাশের পূর্বে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়কে অবহিত পূর্বক সত্যতা যাচাই ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন ছিল। ২০২০-২০২১ সালের প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে ২০২২ সালেও পূর্বের প্রতিবেদনের একই মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনের শ্রম অধিকার বিষয়ে উল্লেখিত ইস্যুতে সরকারের বিবেচনা করা ও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনটির সভাপতি ও আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
১০ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
১৭ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
১৭ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে
১৭ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১৮ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
১৮ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
১৯ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে