◾ মিসবাহুল ইসলাম
আত্মশুদ্ধি ও বিশুদ্ধতার মাস বলা হয় রমজান মাসকে । চারিত্রিক মহাগুণগুলো জাগ্রত হয় এই মাসে । সংযমতা ও নীরব সাধনায় একমাস ব্যাপী আমরা রোজা রাখি । পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতাকে জাগ্রত করি । নতুন করে আধ্যাত্মিক শক্তির সঞ্চার হয় । কেননা রোজার উদ্দেশ্যই হলো আধ্যাতিক শক্তি অর্জন করা এবং আত্মশুদ্ধির পথে হাঁটা । তাই পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 'হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছিল যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার' (সূরা বাকারাহ : ১৮৩ নং আয়াত)। আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম (রহঃ) বলেন, "মানুষের আধ্যাত্মিক ও দৈহিক শক্তি সংরক্ষণের এক মহা অনুশীলন এই রমজান মাস"। একদিকে মানুষের দৈহিক চাহিদা কমে যায় যা শারীরিক সুস্থতার নিশ্চয়তা দেয়, অন্যদিকে চারিত্রিক কুলষিত ও মন্দা নীতির নির্বাসন হয় এবং নৈতিকতার উৎকর্ষ সাধন হয় যা মানবতাবোধকে জাগ্রত করে । ফলে, ধনী গরিবের মর্যাদা এক সুতায় গেঁথে যায় ।
রমজানের এই মাসব্যাপী ইবাদতের প্রস্তুতি স্বরুপ শুধু জমিন বাসীদের আয়োজন নয়, আসমানকেও সাজানো হয়। আল্লাহ জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেন, বয়ে বেড়ায় রহমতের বাতাস । জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয় । তাকওয়ার পথে হাঁটতে এবং অন্তরের ব্যাধি দূর করতে শয়তানকেও দূরে রাখা হয় তার কর্ম থেকে। ইবাদতের উৎকর্ষ সাধন করতে একনিষ্ঠভাবে মহান রবের ইবাদত করার এক মহা সাধনার সূচনা হয় । মহান রবের সন্তুষ্টি লাভের আশায় আমরা রোজা রাখি । চরম তৃষ্ণার্ত অবস্থায় ও আমরা রোজা ভঙ্গ করি না । সেহেরী, ইফতার, কোরআন তেলাওয়াত, তারাবিহের নামাজ, ক্বিয়ামূল লাইল,তাহাজ্জুতের নামাজসহ অন্যান্য সব আমল করি । আর এই সবগুলো আমলের সওয়াব অন্যান্য মাসের তুলনায় বহু গুণ বেশি হয়ে থাকে ।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, 'আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই দশগুণ থেকে সাতশত গুণ বৃদ্ধি করা হয় । মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু রোজা ছাড়া । কেননা তা আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেবো । সে আমার সন্তুষ্টির জন্য কামাচার ও পানাহার পরিত্যাগ করে । রোজা পালনকারীর জন্য রয়েছে দুটি খুশী যা তাঁকে খুশী করে । যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে । রোজা পালনকারীর মুখের ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম ।’ (বুখারি ১৯০৪, মুসলিম ১১৫১) তাকওয়া, আত্মশুদ্ধি লাভ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য প্রবল উদগ্ৰীব থাকি আমরা । এই রহমত, নাজাত এবং মাগফেরাতের দিনগুলো এক মাস পরে চলে যায়, কিন্তু রমজানের এই আমলের নিয়মানুবর্তিতা ধরে রাখলে সবসময়ই সেগুলো রয়ে যাবে ।
এজন্য রমজানের মাস ব্যাপী অনুশীলনের দৃঢ় ইচ্ছা এবং প্রতিজ্ঞা আমাদের থাকা চাই । কারণ, রমজান অনুশীলনের মাস । আল্লাহ হেদায়েত ও তাকওয়ার পথে চলার জন্য বান্দাকে অনুশীলনের সুযোগ দেন যেন বাকি জীবন এ পথ ধরে হাঁটতে পারে । তাই রমজানকে কেন্দ্র করে আমাদের পরিবর্তনের কোন বিকল্প নেই । আত্মশুদ্ধি অর্জনের একমাত্র এই মাসে নিজের পরিবর্তন এনে পাপাচারে নিমজ্জিত জাহান্নামের প্রান্তে দাঁড়ানো মানুষদের পরিবর্তনের আহ্বান জানাই । কারণ মানুষের বাহ্যিক অসুস্থতা যেমন: জ্বর, সর্দি, কাশি ইত্যাদি নানা ব্যাধি থাকে, ঠিক তেমনি অন্তরের ব্যাধি যেমন : অহংকার, গীবত, হিংসা, বিদ্বেষ, লৌকিকতা ইত্যাদি কিছু এই কলুষতা মানুষকে গ্রাস করে তিলে তিলে অন্ধকার পাপাচারে নিমজ্জিত করতে পারে । তাই রমজান আমাদেরকে এইসব ব্যাধি থেকে দূরে থাকতে এবং গুনাহ মুক্ত পথে হাঁটতে শেখায় ।
আমাদের উচিত রমজানের সম্মান ধরে রাখা এবং নিজের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসা । আসুন আল্লাহর অসন্তুষ্ট সব মন্দা কাজ ভুলে গিয়ে রহমত, বরকতময় এবং মাগফেরাতের ছায়ায় আবদ্ধ হই । আল্লাহ তা'আলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে এ বৎসরের রোজা গুলো পালন করার তাওফিক দান করুন ।
লেখক: মিসবাহুল ইসলাম
ইসলামী গবেষক
২ দিন ১১ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে
৩ দিন ১৩ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৫ দিন ১৬ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
৮ দিন ১৬ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
১১ দিন ১৯ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
১২ দিন ৪ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
১২ দিন ৫ ঘন্টা ০ মিনিট আগে
১২ দিন ১৬ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে