বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক প্লাস উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে শুরু করেছে জ্বালানি তেলের দাম। ২৩টি দেশের এ জোট গত রবিবার দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড) প্রতি ব্যারেলের দাম ১৫ শতাংশের বেশি বেড়ে হয়েছে ৮৪ ডলার। সামনে এ দাম আরো বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়বে দেশের বাজারেও। আন্তর্জাতিক বাজার থেকে জ্বালানি তেল এবং এলএনজি কেনাকাটায় সরকারের খরচ বেড়ে যাবে। তবে আপাতত গ্রাহক পর্যায়ে এর প্রভাব পড়বে না। কেননা গতকালও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি এমএমবিটিউ এলএনজির দাম ছিল প্রায় ১৪ মার্কিন ডলার। গত বছরের আগস্টে এলএনজির দাম ছিল প্রায় ৭০ ডলার। গত সপ্তাহে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ছিল প্রায় ৭৩ ডলার। গত বছরের জুনে এ দাম ছিল ১২২ ডলার। এই মধ্যবর্তী সময়ে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও দেশে কমানো হয়নি। বরং বেড়েছে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম। তাই এখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে সম্প্রতি তেল ও এলএনজি কেনাকাটায় সরকার যে স্বস্তি পাচ্ছিল তা এখন হ্রাস পাবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি পরিমাণে বাড়লে গ্রাহক পর্যায়েও প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. বদরুল ইমাম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে আমাদের দেশে বাড়ানো হয়। কিন্তু বিশ্ববাজারে কমলে আমাদের দেশে দাম কমানো হয় না। এটি নিয়ম হয়ে গেছে। তেলের দামের সঙ্গে এলএনজির দামও সম্পৃক্ত। দেশীয় গ্যাসের অনুসন্ধান তেমন না থাকায় আমাদের এলএনজি নির্ভরশীলতা বেড়েছে, বাড়ছে। তাই এখন দাম বাড়ায় শুধু তেল নয়, এলএনজি কিনতেও খরচ বেড়ে যাবে সরকারের।
অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, তেলের উচ্চমূল্য বৃদ্ধির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যেতে পারে। তবে আরএসি মনিটরিং গ্রুপ বলছে, বেশ কিছু দিন যদি তেলের দাম চড়া না থাকে তাহলে তেলের দাম বাড়ার আশঙ্কা কম।
সৌদি আরব, ইরাক ও কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ গত রবিবার প্রতিদিন ১০ লাখ ব্যারেলের বেশি উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দেওয়ার ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। একই সঙ্গে রাশিয়াও ঘোষণা দিয়েছে—বছরের শেষ পর্যন্ত তারাও ৫ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমাবে। জ্বালানি খাতের শীর্ষ কোম্পানি বিপি ও শেল জানিয়েছে, গতকাল তাদের তেলের দাম বেড়েছে। উভয় কোম্পানির মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৪ শতাংশের বেশি।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের পর তেলের দাম বেড়েছিল। কিন্তু বর্তমানে যুদ্ধ শুরুর আগের পর্যায়ে দাম চলে এসেছে। তবে তেলের দাম কম রাখতে সরবরাহকারীদের উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের এক মুখপাত্র বলেছেন, বাজারের অনিশ্চয়তার কারণে আমরা মনে করি এই মুহূর্তে উৎপাদন কমানো যৌক্তিক না।
উল্লেখ্য, বিশ্বের মোট অপরিশোধিত তেলের প্রায় ৪০ শতাংশ এসব ওপেক প্লাসভুক্ত দেশগুলোর নিয়ন্ত্রণে। সৌদি আরবের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, তেলের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য সতর্কতামূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সৌদি আরব প্রতিদিন ৫ লাখ এবং ইরাক ২ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল উৎপাদন কমিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, আলজেরিয়া এবং ওমানও কমাচ্ছে উৎপাদন।
১৫ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
১ দিন ১১ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
১ দিন ১৪ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
২ দিন ৩২ মিনিট আগে
২ দিন ৩৫ মিনিট আগে
২ দিন ৩৬ মিনিট আগে
২ দিন ১৩ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
৩ দিন ১৮ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে