রমজানের প্রথম রহমতের ১০ রোজা শেষ হয়েছে। এখন সময় যতই যাচ্ছে ততই ঘনিয়ে আসছে ঈদুল ফিতর। আর এই ঈদকে রাঙিয়ে তুলতে প্রস্তুতির কমতি নেই। ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে লোকজন। ফলে চট্টগ্রাম মহানগরীসহ জেলার আনাচে কানাচে মার্কেটগুলোতে ভিড় বাড়ছে। নগরীর বড় বড় মার্কেটে জমে উঠেছে ঈদবাজার। রিয়াজ উদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেইন, টেরিবাজার, জহুর হকার্স মার্কেট ছাড়াও অভিজাত মার্কেটগুলোতে ঈদের বেচাকেনার ধুম পড়েছে। তবে কোনো মার্কেটে অতিরিক্ত দামসহ ক্রেতা ঠকানোর অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৩ এপ্রিল) নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজার, টেরিবাজার, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স ও মিমি সুপার মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, সকাল পেরিয়ে দুপুর হতে মার্কেটগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকে। থান কাপড়, রেডিমেড কাপড়, জুতোর দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় বেশি। পাশাপাশি টেইলার্সগুলোতে শ্রমিকদের যেন দম ফেলার ফুরসত নেই।
চট্টগ্রামে পাইকারি কাপড়ের জন্য প্রসিদ্ধ টেরিবাজার। রোজা শুরুর আগে থেকেই টেরিবাজারে কেনাকাটা শুরু করেন লোকজন। ব্যবসায়ীরা জানান, টেরিবাজারে ছোটবড় ১০০-এর কাছাকাছি মার্কেট এবং প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি দোকান রয়েছে। আবার কিছু শপিংমল গড়ে উঠেছে, যেগুলোতে শাড়ি, থ্রি-পিস, শাটিং-স্যুটিং কাপড়, জুতো থেকে শুরু করে জুয়েলারি-কসমেটিকসও এক দোকানে মিলছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরশমণি, মেগামার্ট, মল-২৪, ভাসাভি, মনে রেখ, বৈঠক বাজার, মৌচাক, বড় বাজার, নিউ রাঙ্গুলি, মাসুম ক্লথ, রাজপরী, রাজস্থান, জারা, খাজানা, সানা ফ্যাশন মল, জাবেদ, মাহমুদিয়া, স্টার ট্রেডিং, আলো শাড়ীজ রয়েছে পছন্দের শীর্ষে। এসব মলগুলো এক দামের হলেও ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটায় বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে।
নগরীর হালিশহর এলাকা থেকে পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন সারোয়ার উদ্দিন। স্ত্রীর পছন্দের শাড়ি, দুই সন্তানের জন্য জামা কিনেছেন। তিনি বলেন, টেরিবাজারে পাশাপাশি অনেকগুলো বড় দোকান রয়েছে। তাই টেরিবাজারে কেনাকাটা করতে সময় অপচয় হয় না। তবে কিছু কিছু দোকানে কাপড়ের দাম বেশি বলেই মনে হয়েছে।
টেরিবাজারের নিউ রাঙ্গুলীর স্বত্বাধিকারী মো. আজম বলেন, রোজার ১৫ দিন আগে থেকেই কেনাকাটা শুরু হয়েছে। তবে ক্রেতাদের সংখ্যা বাড়ছে রোজা শুরুর পর থেকে। শুরুর দিকে ত্রি-পিস বিক্রি হলেও এখন শাড়ির ক্রেতাই বেশি।
টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বলেন, পাইকারির জন্য টেরিবাজার প্রসিদ্ধ। দেশি-বিদেশি সব ধরনের কাপড় পাওয়া যায় এখানে। চট্টগ্রামের উপজেলাগুলো ছাড়াও কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, ফেনীর অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী টেরিবাজার থেকে কাপড় কিনে বিক্রি করেন। পাশাপাশি সাধারণ ক্রেতারাও এখানে স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে পারেন।
অপরদিকে রিয়াজ উদ্দিন বাজারে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। সব শ্রেণির লোকজন এই বাজার থেকে কেনাকাটা করতে পারেন। শুধু ঈদের পোশাক কিংবা জুতো নয়, সুঁইসুতা থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্য, তৈজসপত্র, ইলেক্ট্রনিক্স সরঞ্জাম, প্রসাধনী, জুয়েলারিসহ সব ধরনের কেনাকাটার জনপ্রিয় রিয়াজ উদ্দিন বাজার।
রিয়াজ উদ্দিন বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, রমজানের শুরু থেকে এখানে ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। দিন যতই গড়াচ্ছে পুরো বাজার ততই সরগরম হয়ে উঠছে।
রিয়াজ উদ্দিন বাজারে কম বা বেশি আয়ের সব শ্রেণির মানুষ তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা করতে পারেন বলে জানান তিনি।
এছাড়া নগরীর বিপণী বিতান (নিউ মার্কেট), চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, সানমার ওশ্যান সিটি, ফিনলে সেন্টার, আমিন সেন্টার, ভিআইপি টাওয়ার, আখতারুজ্জামান সেন্টারসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ব্রান্ড শপগুলোতেও ভিড় দেখা গেছে ক্রেতাদের।
সোমবার দুপুরে কথা হয় চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সের কাপড়ের দোকান ‘আতকিয়া’র মালিক সায়েদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুধু রমজান নয়, আমাদের মার্কেটে সারাবছর ভালো ব্যবসা হয়। আমাদের পার্মানেন্ট ক্রেতা বেশি। তবে ঈদের বাজারের আলাদা চাহিদা রয়েছে। বেচাবিক্রিও বেশ ভালো।
চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্সে রয়েছে শিশুদের কাপড়ের বিশেষায়িত ব্রান্ডশপ ‘শৈশব’। তিন মাস থেকে ১২ বছর বয়সী বাচ্চাদের কাপড় রয়েছে এখানে। ছেলেদের শার্ট, গেঞ্জি, পাঞ্জাবি, প্যান্ট, মেয়েদের ফ্রক পাওয়া যায়। শপিং কমপ্লেক্স ছাড়াও মিমি সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেটসহ কয়েকটি মার্কেটে ‘শৈশব’র শাখা রয়েছে।
শোরুম ম্যানেজার বললেন, একটি পোশাকের ছয় মাস থেকে ১২ বছরের সাইজ পাওয়া যায়। লোয়ার মিডেল ক্লাস থেকে অভিজাত শ্রেণির লোকজন শৈশবের গ্রাহক।
এদিকে অভিজাত মার্কেটগুলোতে বেশি দাম ও ক্রেতা ঠকানোর অভিযোগ উঠেছে। কোনো কোনো দোকানে বিদেশি পণ্য বলে বিক্রি করলেও তাতে দেশের নাম উল্লেখ নেই। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর মার্কেটগুলোতে অভিযানে গিয়ে জরিমানাও করছে। চলতি সপ্তাহে টেরিবাজারের অভিজাত শপিং মল ‘মনে রেখ’-কে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
সোমবার ফিনলে স্কয়ারের কসমেটিকসের দোকান ‘এঞ্জেলস ক্লাউড’কে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দোকানটিতে বিদেশি বলে কসমেটিকস পণ্য বিক্রি করলেও, তাতে আমদানিকারকের সিল কিংবা স্টিকার ছিল না। অন্যদিকে ফিনলে স্কয়ারের ইরানী বোরকা ফ্যাশনকেও জরিমানা গুনতে হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, অভিজাত দোকানগুলোতে বিদেশি প্রোডাক্ট বলে পণ্য বিক্রি করছেন অনেকে। বিদেশি বলে ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্যের দামও নেওয়া হচ্ছে বেশি। কিন্তু পণ্য যে বিদেশি তার কোনো প্রমাণ নেই। পণ্যের গায়ে আমদানিকারকের স্টিকার নেই। কোন দেশের পণ্য তার ‘মেড ইন’ নেই। অনেক দোকানে আবার বিদেশি বলে দেশি পণ্য বিক্রি হচ্ছে। অনেকে অতিরিক্ত দাম বসিয়ে বিক্রি করছেন।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমদ সুলেমান বলেন, এবার এমনিতেই পণ্যের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে আমদানি করা সব পণ্যের দাম বেশি। তাই বিগত বছরের চেয়ে প্রায় প্রত্যেক কিছুর দাম বেড়েছে। যা ঈদের বাজারে প্রভাব পড়েছে।
১৬ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
১ দিন ১২ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে
১ দিন ১৫ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
২ দিন ১ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
২ দিন ১ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
২ দিন ১ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
২ দিন ১৪ ঘন্টা ০ মিনিট আগে
৩ দিন ১৯ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে