‘আমরা যেই সমাজে বাস করি সেই সমাজে স্বপ্ন পূরণ করতে টাকা নয়তো মা-বাবা থাকা প্রয়োজন’- এমন আবেগঘন চিরকুট লিখে চিরদিনের জন্য পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন হতাশাগ্রস্ত এক কলেজছাত্র।ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় ফিরোজ মোল্যা (১৮) নামে কলেজছাত্র নিজ ঘরে আত্মহত্যা করেছেন। বুধবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের চাপলডাঙ্গা গ্রাম থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় এবং কলেজের সহপাঠীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয়রা জানায়, ফিরোজ মোল্যা ও তার ছোটভাই ফাহিম মোল্যা (১২) চাপলডাঙ্গা গ্রামে নানার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতেন। ফিরোজ বোয়ালমারী সরকারি ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। ২০২২ শিক্ষাবর্ষে তিনি এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
জানা যায়, শৈশব বয়সে ফিরোজের বাবা নিরুদ্দেশ হলে মা ফিরোজা বেগম অন্য জায়গায় বিয়ে করেন। এ সময় ফিরোজা বেগম তার বাবার বাড়ি চাপলডাঙ্গা গ্রামে দু সন্তানকে রেখে যান। সেখানে থেকেই লেখাপড়া করছিলেন তারা। তাদের নানা-নানির মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী এক মামাকে নিয়ে তারা নানাবাড়িতেই বসবাস করতেন। ফিরোজ পড়াশোনার পাশাপাশি এক ক্লিনিকে দন্ত চিকিৎসকের সহযোগী ও কখনো নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন।
পুলিশ জানায়, বুধবার বিকালে ফিরোজ বাড়ির পার্শ্ববর্তী মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন। পরে শোবার ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে আড়ার সঙ্গে কাপড় পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন। বিষয়টি পরিবারের লোকজন টের পেয়ে ঘরের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে বোয়ালমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় তার বাড়ি থেকে একটি চিরকুটও পাওয়া যায়।
চিরকুটে ফিরোজ লিখেন, ‘আমি জানি কী করছি। জানি আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। কিন্তু আমার কাছে যে আমার স্বপ্নগুলো অনেক দামি ছিল। হয় তো আমার জীবনের চেয়েও দামি। আমরা যেই সমাজে বাস করি সেই সমাজে স্বপ্ন পূরণ করতে অনেক টাকা নয়তো মা-বাবা থাকা প্রয়োজন। যার কোনোটাই আমার কাছে নেই। আমি ওকে ভালোবাসতাম। আমার আবেগমাখা কথাগুলো কারো বিবেকে লাগবে না, সেটা আমি জানি। আর আমি বোকা বলবো সেই সব মানুষদের যারা আমাকে একজন ভালো ছেলে ভাবতেন। আমি আসলে কখনই ভালো ছিলাম না, শুধু ভালো থাকার অভিনয় করতাম। জীবনে অনেক কষ্ট করেছি। আর কোনো কষ্ট করতে, পেতে চাই না। তাই এই পথ বেছে নিলাম। আমাকে সবাই ঘৃণা করলেও যেন ভুলে যায়, এটাই আমার শেষ ইচ্ছা! চির বিদায় সবাইকে। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।’
বোয়ালমারী থানার এসআই মো. সরোয়ার হোসেন বলেন, খবর পেয়ে রাত ৯টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। তার শোবার ঘর থেকে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, খবর পেয়ে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার ঘর থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও তদন্তের পর বিস্তারিত তথ্য জানানো যাবে।
৩০৩ দিন ১২ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
৩০৫ দিন ৬ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
৩২৮ দিন ৮ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
৩৩৬ দিন ১ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে
৩৬৭ দিন ৪ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
৩৭৩ দিন ৯ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
৩৮১ দিন ২১ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
৪০৮ দিন ৬ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে