সাতক্ষীরায় বিএসটিআই অনুমোদিত লাইসেন্স না থাকায় দুই ড্রিংকিং ওয়াটার মালিককে জরিমানা খুবিতে প্রফেসর দীপক কামাল মেমোরিয়াল স্কলারশিপ পেলন ১৬ শিক্ষার্থী মানবতার সেবায় রেড ক্রিসেন্টের ভূমিকা অতুলনীয় - চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ. লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে অবস্থানের ঘোষণা ঝিনাইগাতীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ১৬টি টাওয়ারসহ পাইপ ধ্বংস, ১টি ট্রাক ও ২টি মাহিন্দ্র জব্দ বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার কাইয়ুমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে, অভিযোগ পদবঞ্চিত নেতাদের কৃষ্ণনগরে কালিকাপুর সিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসায় এডহক কমিটির পরিচিতি সভা অনুষ্ঠিত নিয়মিত ক্রু মিটিং বাস্তবায়ন করায় পুরস্কার পেলেন বাকৃবির রোভার স্কাউট লিডার প্রথমবারের মতো ইন্টার্নশিপ পেল বাকৃবির মাৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা আশাশুনিতে অঙ্কনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের সম্পদ ও ঝুঁকি চিহ্নিত করণ কর্মশালা পীরগাছায় ভাবীর হোটেলে ১৯৯টাকায় পাওয়া যাবে একটি মোটরসাইকেল ভারতের ১৫ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাকিস্তানের, দাবি দিল্লির লালপুরে তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিককে হুমকি ও মিথ্যা মামলার ভয়।। চট্টগ্রাম বে টার্মিনালে ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে -বিডা’র চেয়ারম্যান খাসিয়া হাওর সীমান্তে উত্তেজনা, মুখোমুখি বিএসএফ-বিজিবি ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প শেরপুরে বিআরটিএ অফিসে দুদকের অভিযান শ্রীমঙ্গলে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন-স্বৈরাচারীতার ৮ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অধিকার বঞ্চিত সাধারণ ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যুগপৎ আন্দোলন কয়রায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন

কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান : জীবন ও কর্ম


কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান নীলফামারী জেলায় একটি সংগ্রামী নাম। নীলফামারী জেলায় তৃণমূলের সমাজ বিনির্মানের একজন বীরপুরুষ। তার জীবনের পরতে পরতে রয়েছে জীবনযুদ্ধের নানা ঘাত প্রতিঘাতের যুদ্ধ।তিনি একজন অদম্য পরিশ্রমী, উচ্চাকাঙ্খী ও মানবিক ব্যাক্তিত্ব।কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান দেশের উত্তর জনপদের নীলফামারী জেলার রামনগর বাহালীপাড়া গ্রামে ১৯৫৮ সালের ৮ মে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতার নাম মাওলানা দারাজ উদ্দিন আহমেদ ও মাতার নাম হাফেজা বেগম।এখনও এলাকায় লোকমুখে জানা যায়,তার দাদা আমির উদ্দিন সরকার একজন তরফদার ছিলেন কিন্তু তার মৃত্যুর সময় ওয়ারিশরা অনেক ছোট থাকায় তার বিশাল ভূসম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যায় ফলে পরবর্তীতে পরিবারটিকে সংগ্রামী জীবনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান পাঁচ ভাই ও চার বোনের সংসারে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী ছিলেন।তিনি ১৯৭৪ সালে পঞ্চপুকুর বাবরিঝার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন এবং চাকরিতে কর্মরত থাকা অবস্থায় নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন।বাবরিঝার উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন বিএসসি শিক্ষক ও তার কাজিন জনাব রুহুল আমিন বিএসসি, কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান এর জীবনে সফলতা ও সমাজের জন্য ভালো কিছু করার জন্য তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রমকে তার বংশগত ঐতিহ্যের প্রায়োগিক দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান এর জীবন ও কর্মকে মূলত চার পর্যায়ে বিন্যাস করা যায়।প্রথমত, ডাক্তারি জীবন দ্বিতীয়ত, ব্যাংকার জীবন তৃতীয়ত, কৃষক জীবন এবং চতুর্থত, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন। 

১. কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান ১৯৭৭ সালে নিজ গ্রাম বাহালীপাড়ার বিশিষ্টজন চয়েন উদ্দিন মাস্টারের কন্যা রশিদা বেগমের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।বিবাহিত জীবনে তিনি চার ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের জনক।সংসারজীবনের গুরুদায়িত্ব তিনি প্রথমদিকে একজন পল্লী চিকিৎসক হিসেবে সামাল দিয়েছেন।১৯৭৯ সালে তিনি সরকারি পল্লী চিকিৎসকের কোর্স সফলতার সাথে শেষ করেন এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত হন।এরপর নিজ ও পাশ্ববর্তী গ্রামে শিশুর টীকা কার্যক্রম ,মাতৃ স্বাস্থ্যসেবা  ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছেন নিরলসভাবে। তাই এখনো গ্রামে তিনি গরিবের হান্নান ডাক্তার নামে সমধিক পরিচিত।

২. ১৯৮৪ সালে কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান এর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ বাঁক বদল ঘটে।তিনি সরকারি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে যোগদান করেন।নীলফামারী জেলার বিভিন্ন শাখায় সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।বলা যায় তার সাংসারিক উন্নতি ও পরিবারের কল্যাণ তিনি এই চাকরি দিয়েই নির্বাহ করেছেন।এছাড়াও একজন ব্যাংকার হিসেবে গ্রামে গঞ্জে কৃষি ঋন প্রদানের মাধ্যমে দেশের কৃষি খাতে সমৃদ্ধির একজন গর্বিত অংশীদার ছিলেন।কৃষক ও কৃষি নিয়েই তিনি সুদীর্ঘ তেত্রিশ বছরের ব্যাংকার জীবনের অবসান ঘটান ২০১৭ সালে রাকাবের কর্মকর্তা হিসেবে অবসর গ্রহণের মধ্য দিয়ে।

৩. মানুষ তার কর্মের মধ্য দিয়েই প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায়।এই মন্ত্র ধারণ করে কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান চাকুরিজীবন থেকে অবসর নিলেও কর্মজীবন থেকে অবসর গ্রহণ করেন নাই।তিনি দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে কৃষি কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করেছেন।অবসরপ্রাপ্ত ব্যাক্তিদের জন্য হয়েছেন কর্মের মধ্য দিয়ে বেচে থাকার রোল মডেল।কৃষি ক্ষেতে তার কর্মব্যস্ততা পল্লীকবি জসীমউদ্দিন এর রুপাইকে স্মরণ করিয়ে দেয়,

..... কচি ধানের তুলতে চারা হয়ত কোনো চাষী,

মুখে তাহার ছড়িয়ে গেছে কতকটা তার হাসি।

...... জনম কালো, মরণ কালো, কালো ভূবনময় ;

চাষীদের ওই কালো ছেলে সব করেছে জয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের কৃষকদের উদ্দেশ্যে, এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখার আহবান জানিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই বাণী তিনি হৃদয়ে ধারণ করে নিজের প্রতি ইঞ্চি জমি চাষাবাদের আওতায় এনে সহস্রাধিক মণ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় রাত-দিন মাঠের কৃষকদের সাথে নিরলস পরিশ্রম করছেন।ফলে এ কথা নি:সন্দেহে বলা যায়, নীলফামারী জেলার কৃষকদের আদর্শ মাটি ও ফসলের বন্ধু কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান। 

৪. কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান একজন সামাজিক, রাজনৈতিক ও পরিবারের প্রতি দায়িত্ব সচেতন ব্যাক্তিত্ব।তিনি ২০০৪ সাল থেকে মোসলে নামে এক অসহায় ও অনাথ শিশুকে নিজের মেয়ের মতই প্রতিপালন করেছেন এবং সম্প্রতি কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা হিসেবে তার সেই পালিত মেয়েকে জাকজমকপূর্ণ বিয়ে দিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান এর সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্ম-পরোপকারিতার জন্য এলাকার জনগণ তার নামে জলঢাকা হরিশ্চন্দ্র পাঠে ডা. হান্নান বাজার প্রতিষ্ঠা করেছেন।মধ্যরাত পর্যন্ত ডা. হান্নান বাজারের প্রাণচাঞ্চল্য তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনকে স্মরণ করিয়ে দেয়।নিজের নামে এলাকার মানুষের ভালোবাসায় প্রতিষ্ঠিত ডা. হান্নান বাজারেই শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে চায়ের আড্ডায় মেতে উঠেন দেশের রাজনীতি-অর্থনীতির বিচার বিশ্লেষণে।আজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে কখনো আপোষ করেন নাই।লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত বাংলায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস,জাতীয় শোক দিবস ও বিজয় দিবসসহ সকল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে নিজ গ্রাম বাহালীপাড়ায় অতিথি হিসেবে যোগদান করেছেন।অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের সামনে তুলে ধরেছেন তৃণমূলের একজন কর্মী হিসেবে।কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান এর কর্মময় জীবন ও সংগ্রাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তরুণরা আলোকিত সমাজ বিনির্মানে অগ্রগামী হতে পারে।

তোমার জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা হে কর্মবীর, 

তোমার জীবন হলো পরিপূর্ণ রঙধনুর আবির,

তুমি আলোকিত করেছো জন্মস্থান রামনগর বাহালীপাড়া গ্রাম,

তুমি সমাজের আইকন কৃষক ডা. আব্দুল হান্নান।


লেখক : সার্কেল এ্যাডজুটেন্ট, র‍্যাব-৯ সুনামগঞ্জ ক্যাম্প।

আরও খবর