ইট-বালুর ব্যবসা করে লাভ দেয়ার কথা বলে তেজগাঁও কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন মোল্লার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ধার নেন তার বন্ধু শান্ত। বিনিময়ে প্রতি মাসে তাকে লাভ বা হাত খরচার টাকা দেয়ার কথা থাকলেও কোনো কিছু পাননি ইকরাম। উল্টো নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ইকরাম।
পুলিশ বলছে, রমজান মাসে লাভসহ টাকা ফেরত দেয়ার সময় টাকা কম দেখে তা নেননি ইকরাম। এ নিয়ে শান্তর সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। এর জেরেই বাসা থেকে ডেকে নিয়ে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকার বালুর মাঠে গলা কেটে এবং হাতুড়ি দিয়ে মাথা থেঁতলে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ইকরামকে। ইকরামের চোখও তুলে ফেলা হয়েছিল। হত্যার পর মরদেহ ডোবায় ফেলে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। মরদেহ উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানোর কথা জানিয়েছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত ৪ মে রাতে শান্তর ফোন পেয়ে বাসা থেকে বের হন ইকরাম। এরপর আর বাসায় ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ইকরামের সন্ধান না পেয়ে রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় সাধারণ ডায়েরি করে পরিবার। শনিবার সন্ধ্যায় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে খিলক্ষেত এলাকার পাতিরায় বসুন্ধরা বালুর মাঠ সংলগ্ন ডোবা থেকে ইকরামের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা কবির হোসেন মোল্লা। মামলা নং ৫।
মামলায় বাদী অভিযোগ করেন, গত ৪ মে রাত সোয়া ৮টা থেকে শনিবার দুপুর ১টার মধ্যে যেকোনো সময় পরস্পর যোগসাজশে আমার ছেলে ইকরাম হোসেন মোল্লাকে (২২) হত্যা করা হয়েছে। মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে বসুন্ধরা স্টেডিয়ামের পূর্ব পাশে বসুন্ধরা বালুর মাঠ সংলগ্ন ডোবার পশ্চিম কিনারে ফেলে কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখে। মামলায় তিনি বন্ধুদের সঙ্গে টাকা-পয়সা লেনদেন নিয়ে বিরোধের বিষয়টি উল্লেখ করেন।
এদিকে মামলার পর অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়ে খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এনামুল হক খন্দকার বলেন, নিহত ইকরাম হোসেনের বাড়ি রাজধানীর খিলক্ষেতের ডুবনী নূরপাড়ায়। তিনি রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ইকরাম নিখোঁজ ছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরিও করা হয়। পরে শনিবার (৬ মে) বিকেলে খিলক্ষেত এলাকার পাতিরাস্থ বসুন্ধরা বালুর মাঠ সংলগ্ন ডোবা থেকে ইকরামের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল করার সময় নিহতের মরদেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এটা স্পষ্টত হত্যাকাণ্ড।
তিনি বলেন, আমরা অভিযুক্ত শান্ত (২৩) ও আবু সিদ্দক (২৩) নামে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছি। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। পরে দায়েরকৃত হত্যা মামলায় দুই জনকে আসামি করে আদালতে পাঠানো হয়। হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন শান্ত। আর আদালতের আদেশে দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছেন সিদ্দিক।
নিহতের বড় বোন ঝুমা আক্তার বলেন, ইকরামের ছবি বুকে নিয়ে বাবা বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। শান্তর সঙ্গে দেখা করাটাই বুঝি আমার ভাইয়ের কাল হলো।
ঝুমা আক্তার বলেন, এলাকার সমবয়সি ছেলে শান্ত ইট-বালুর ব্যবসায় লগ্নি করার জন্য প্রলুব্ধ করেছিল ইকরামকে। বিনিময়ে লাভ বা হাত খরচা দেবে বলেছিল। এটা ভেবেই বাবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নিয়ে দেয় শান্তকে। কিন্তু গত ছয় মাসে কোনো টাকা দেয়নি, উল্টো ঘুরিয়েছে। আসল টাকাও দিচ্ছিল না। শান্ত নেশা করত আরেক সহপাঠী আবু সিদ্দিকের সঙ্গে। বিষয়টি জানার পর শান্তর মাকে ইকরাম জানায়, শান্ত নেশা করে। ওকে শাসন করেন, আর আমার টাকা দিতে বলেন। এসব কারণে শান্তর মা শান্তকে মারধর করেন।
তিনি আরও বলেন, গত বৃহস্পতিবার (৪ মে) রাতে শান্তই ফোন করে ইকরামকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর শনিবার ইকরামের মরদেহ গলাকাটা, চোখ উঠা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। আমরা চাই সুষ্ঠু তদন্ত হোক, জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। সরল বিশ্বাসে টাকা ধার দিয়ে ভাইটাকে অকালে মরতে হলো।
মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে আহাজারি কমছেই না ইকরামের মা আফিয়া বেগমের। তিনি এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান।
পুলিশ বলছে, ব্যবসায়িক কারণে শান্তকে দুই লাখ টাকা দেন ইকরাম। পরে লভ্যাংশসহ টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে বেশ কয়েকবার তাদের মধ্যে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হয়, যা নিয়ে ক্ষুব্ধ হন শান্ত। এছাড়া শান্তর বন্ধু সিদ্দিক ছিল এলাকায় বেপরোয়া এবং মাদকসেবী। বিষয়টি সিদ্দিকের পরিবারকে জানিয়ে দেন ইকরাম। মা বিষয়টি জানতে পেরে সিদ্দিককে বাসা থেকে বের করে দেন। এসব মিলিয়ে শান্ত ও সিদ্দিক মিলে ইকরামকে উচিত শিক্ষা দেয়ার পরিকল্পনা করেন।
ডিএমপি’র গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনের এডিসি ইফতেখায়রুল ইসলাম বলেন, তেজগাঁও কলেজের এক শিক্ষার্থী নিখোঁজের পর তার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দুই জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা এ হত্যাকাণ্ড সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছি। এসব বিষয় তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনার পেছনে আর কারা জড়িত, আর কোনও বিষয় রয়েছে কিনা, এসব বিষয়ে তদন্ত চলছে। সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
২ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
৭ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১ দিন ২২ মিনিট আগে
১ দিন ২৪ মিনিট আগে
১ দিন ২৭ মিনিট আগে
১ দিন ৬ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে
২ দিন ২ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে