◾ নুসরাত জাহান
কখনো কি ভাবার সুযোগ হয়েছে হলের গাট্টি ধরা নিয়মগুলো নিয়ে? এগুলো কি শিক্ষার্থীদের হেনস্তার জন্য বানানো? নাকি এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে একজন শিক্ষার্থীর নিরাপত্তা! উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর একজন শিক্ষার্থী যখন পরিবার ছেড়ে আসে, তখন সবার আগে যে বিষয়টি মাথায় আসে তা হলো, আবাসন। এ ক্ষেত্রে হলের কোনো বিকল্প নেই। অথচ নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য আবাসন হলে আসন পাওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া যায় নানান অভিযোগ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুবাদে আমার জীবনে মেস এবং হল দুটি পরিবেশে থাকারই অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমি যখন ভর্তি হয়েছিলাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বসবাসের জন্য কোনো হল ছিল না। যদিও এটা জেনেই ভর্তি হয়েছিলাম। তখন ভেবেছিলাম খুব সহজে সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে নিতে পারব। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরুর পর হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম!
পুরান ঢাকার বাড়িগুলো ছিল বেশ পুরোনো, স্যাঁতসেঁতে ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। যদিও থাকার জন্য কোনো মেস পাওয়া যেত, তবে সেটিতে যেতে হবে অনেক সরু গলি দিয়ে। ফলে রাতে কোনো কাজ থাকলে মেয়ে-শিক্ষার্থীদের জন্য মেসে ফেরা বিপজ্জনক ছিল। ছেলেরাও একাধিকবার পড়েছে ছিনতাইয়ের কবলে। আমার এক বন্ধুর তিনটি মোবাইল ফোন হারিয়েছে এভাবেই। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে ঘিঞ্জি পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া।
এরপর যখন হলে সিট পাই, তখন আসলেই বুঝেছিলাম একজন শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার অন্যতম একটি অংশ তার হল। যদি আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা চিন্তা করি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পর যখন হলে সিট পান, তখন তিনি নানা সমস্যায় পড়েন। পরিবার থেকে এসে যখন থাকতে হয় গণরুমে, তখন আকাশ ভেঙে মাথায় পড়াটা খুব স্বাভাবিক।
হলে আবার সিনিয়রদের ‘গুড ম্যানারস’ শেখানোর প্রতিযোগিতা তো চলেই। ক্যানটিনের খাবারের কথা না হয় না-ই বলি। এ ছাড়া রয়েছে পানির সমস্যা, গ্যাসের সমস্যা, টুকটাক জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়া, অপর্যাপ্ত শৌচাগার ইত্যাদি। যেন সমস্যার এক রাজ্যে বসবাস।
একে তো এত সমস্যা, তারপর হলের এত এত নিয়ম। রাত ৯টার মধ্যে হলে ফিরতে হবে। সকাল ৭টার আগে হল থেকে বের হওয়া যাবে না। বাইরে কোথাও থাকলে দরখাস্ত লিখতে হবে। হলে গেস্ট থাকতে পারবে না। এত্তসব নিয়মের গ্যাঁড়াকলে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীর জীবন।
আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি হলের এই নিয়মগুলো কেন দেওয়া হয়েছে? রাত ৯টার পর বা সকাল ৭টার আগে একজন শিক্ষার্থীর জন্য বাইরে থাকা কি নিরাপদ? আর হলে যখন কোনো বহিরাগত আসেন, তিনি কি সত্যিই আমাদের জন্য নিরাপদ? এমনকি কখনো হতে পারে না যে একজন বহিরাগত এসে হলের কারও পক্ষ নিয়ে হলের ভেতর ঝামেলার সৃষ্টি করলেন? এমনও হতে পারে কারও টাকা, কারও মোবাইল ফোন বা কারও ল্যাপটপ খুঁজে পাওয়া গেল না। হতে পারে তিনি মাদক নিয়ে হলে ঢুকলেন। হয়তো তাঁর সঙ্গ দিতে গিয়ে অনেকেই মাদকে আসক্ত হয়ে গেলেন।
আর যদি হয় মেয়েদের হল, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। ধরলাম, আপনার খুব কাছের কোনো বন্ধু হলে এসে মজার ছলে বাথরুমে একটি ক্যামেরা রাখলেন। বেশ কিছু ভিডিও তিনি ধারণ করলেন। একবারও কি ভেবে দেখেছেন তখন কী হবে?
হয়তো বলতে পারেন এমন তো হতেই পারে না, তিনি অনেক কাছের বন্ধু। এটা অসম্ভব। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। অনেক স্বনামধন্য শপিং মল আর পারলারেও কিন্তু গোপন ক্যামেরায় নারীর ছবি ধারণ করে ব্ল্যাকমেল করা হতো। তাহলে আমরা এত বেশি কনফিডেন্ট কীভাবে হব যে এমন কিছু হবে না?
আসলে যখন কেউ হলে সিট পেয়ে যান, তিনি ধরেই নেন সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাওয়া তাঁর অধিকার। এটা অবশ্যই ঠিক। তবে হলের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পাশাপাশি হলের নিয়মগুলোও সঠিকভাবে পালন করা একজন শিক্ষার্থীর দায়িত্ব। নিয়মগুলো কেবলই আমাদের নিরাপত্তার জন্য করা। কিন্তু আমরা ভুলে যাই অধিকার আর কর্তব্য একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।
১ দিন ৭ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
৭ দিন ১ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
৮ দিন ১ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে
১২ দিন ১১ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
১৪ দিন ১৯ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
২১ দিন ৭ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে
২২ দিন ৫ মিনিট আগে
২২ দিন ২১ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে