◾মোঃ হেদায়েত উল্লাহ তুর্কী : বাংলাদেশের ২১ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটানা দশ বছর একচল্লিশ দিন দায়িত্বপালন শেষে রাজকীয় বিদায়সম্বর্ধণা নিয়ে বিদায় নিলেন তৃনমূল রাজনীতি থেকে উঠে আসা তৃনমূলের নেতা ভাটির ও মাটির মানুষ এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ। বায়ান্ন বছরের স্বাধীন বাংলাদেশে একমাত্র তিনিই স্বপদে থেকে স্বসম্মানে বঙ্গভবন থেকে বিদায় নিলেন। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারের রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সামরিক বাহিনীর সহায়তায় ক্ষমতা দখল করা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান। গণআন্দোলন এবং গণরোষে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন স্বৈরশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর হত্যাকান্ডের অন্যতম কুশীলব খন্দকার মোশতাক আহমেদ মাত্র ত্রিশাদিন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করে সেনাবিদ্রোহে বন্দুকের নলের ভয়ে পদত্যাগ করেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করা বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম মেয়াদপূর্তির অনেক পূর্বে মাত্র সতের মাসের মাথায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান এর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সব মিলিয়ে এগারো মাস পর সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবুল ফজল মোহাম্মদ আহসানউদ্দিন মাত্র একুশ মাস রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি প্রধান সামরিক প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এর নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজের মেয়াদপূর্ণ করেন আব্দুর রহমান বিশ্বাস এবং পরবর্তীতে বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমদ ও অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদ তবে তাঁরা সকলেই ছিলেন মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকারের রাষ্ট্রপতি। মন্ত্রীপরিষদ শাসিত সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে আট মাস দায়িত্ব পালন করে দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক পদত্যাগ করেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। তেরমাস দায়িত্ব পালন করেছেন মোহাম্মদ মোহাম্মদুল্লা। তিনিও দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক পদত্যাগ করেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান এর কবরে ফুল না দেওয়াকে কেন্দ্র করে মাত্র সাত মাসের মাথায় দলীয় চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। পদত্যাগ করার পূর্বে রাষ্ট্রপতি থাকাকালিন সময়ে ঢাকার একটি রেলগেটে তাকে দৌড়ানি দিয়েছিলো দলীয় নেতাকর্মীরা। তিনি তখন জীবন বাঁচাতে রেললাইন ধরে দৌড় দিয়েছিলেন। তাঁর এই ছবি তৎকালীন পত্রপত্রিকা ফলাও করে প্রকাশ করেছিলেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় মেয়াদপূর্তির এগার মাস পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন মোঃ জিল্লুর রহমান। রাষ্ট্রপতি হিসেবে মৃত্যুবরণ করায় তাকে রাষ্ট্রীয়কায়দায় দাফন করা হয়।
ভাটি অঞ্চল থেকে রাজনীতি করতে করতে তিনি দেশের সর্বোচ্চ পদ রাষ্ট্রপতি পদে আসিন হয়েছিলেন। তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রপতি যিনি সারাজীবন তৃণমূলের রাজনীতি করেছেন। কিশোরগঞ্জের সরকারি গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস এবং ভিপি ছিলেন। কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। তিনি কোন সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি কারন তাঁর মেট্রিকুলেশন এবং হায়ার সেকেন্ডারি পরীক্ষার ফলাফল খুবই খারাপ ছিলো। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ ছিলো না। তিনি ঢাকার সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে এলএলবি পাশ করে ফিরে গেছেন ভাটি অঞ্চলের খাঁটি মানুষদের কাছে। দীর্ঘদিন ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি। তিনি দেশমাতৃকার জন্য সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ভারতের মেঘালয় থেকে মুক্তিযোদ্ধা রিক্রুটিং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান ও কিশোরগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলার মুজিব বাহিনী অর্থাৎ বাংলাদেশ লিবারেল ফোর্স ( বিএলএফ) এর সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় তিনি স্বাধীনতা দিবস পদকে ভূষিত হন। ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ ১৮ আসন থেকে মুসলিমলীগের প্রার্থী ডাকসাইটে নেতা ডাঃ আব্দুল মালেককে ৬৩,২০০ ভোটে পরাজিত করে এমএনএ নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন তৎকালীন সর্বকনিষ্ঠ এমএনএ। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র সংসদ সদস্য যিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণের পর থেকে সাতবার মহান জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ভাটিঅঞ্চলের মানুষকে তিনি যেমন ভালোবাসেন তেমনি ভাটি অঞ্চলের মানুষেরা এই মাটির মানুষকে খাঁটিভাবে ভালোবাসেন। তাইতো তাঁরা সবসময় এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ কে প্রতিবারই ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করেছেন। তিনিই সম্ভবত একমাত্র প্রার্থী যিনি কখনো কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন, আইনজীবী সমিতির নির্বাচন কিম্বা জাতীয় সংসদ নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হারেননি। তিনি সবসময় ভাটি অঞ্চলের মানুষের কল্যাণের কথা ভেবেছেন তাইতো কখনো তিনি তৃণমূল ছেড়ে জাতীয় নেতা হওয়ার জন্য দৌড়ঝাপ করেননি। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তিনি সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। তখন স্পিকার নির্বাচিত হয়েছিলেন ডাকসাইটে আমলা কেতাদুরস্ত হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী। অনেকে তখন এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ এর ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হওয়া মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তিনি তখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোন বড় দায়িত্বপ্রাপ্ত বা দায়িত্ব পালন করা কোন নেতা ছিলেন না। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা এবং মফস্বলের একজন এডভোকেট কিভাবে সংসদ সামলাবেন এই নিয়ে সবার মনে কৌতূহল ছিলো। রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা একজন বিলেত পড়ুয়া স্পিকারের সাথে কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজ পড়ুয়া ডিগ্রি পাশের রানিং মেট হিসেবে কিভাবে মানিয়ে নিবে সেটা নিয়ে সবার মধ্যে ছিলো আলোচনা। তখন সবাই ভাবতো নিজ দলের তুখোড় সংসদ আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী কিম্বা বিরোধীদলীয় সংসদ ব্যারিস্টার মওদুদ, ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অথবা জাতীয় পর্টির ব্যারিস্টার আনিসুল হকদের কিভাবে সামলাবেন। তবে তিনি সামলিয়ে দেখিয়েছিলেন সংসদকে কিভাবে প্রাণবন্ত করা যায়। একসময় মহান জাতীয় সংসদের অধিবেশনকে মনে করা হতো গুরুগম্ভীর একটা সভা। সেটাকে তিনি তাঁর দক্ষ উপস্থাপনা ও পরিচালনায় সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে দিয়েছিলেন। তখন সবেমাত্র সংসদ টেলিভিশন নামে একটা টেলিভিশন সরাসরি সংসদ অধিবেশন সরাসরি স্প্রচার করতো। বাংলাদেশ বেতারও সম্প্রচার করতো মাঝে মধ্যে। তখন সাধারণ মানুষ যারা রাজনীতি বুঝতো না তাঁরা সংসদ অধিবেশন শুনতো ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ এর কথা শোনার জন্য। তিনি গুরুগম্ভীর সংসদকে জনগনের সংসদে পরিণত করেছিলেন। তিনি সরকারি দল এবং বিরোধী দলের সংসদ সদস্য ও জনগণের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিলেন। বলা যায় তখন থেকে তিনি দেশের আপমর জনগণের নেতায় পরিণত হন। সাদাসিধা জীবনে অভ্যস্থ মানুষটি ২০০১ সালে মহান জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা হলেও কখনো জাতীয় রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তিনি ভালোবাসা নিয়ে হাওড় অঞ্চলের মানুষের পাশে থেকেছেন তাদের আপনজন হিসেবে। পরবর্তীতে তিনি সংসদের স্পিকার, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, দুইবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেও সবসময় হাওড় অঞ্চল কিম্বা ভাটি অঞ্চলের মানুষ হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। তাইতো তিনি প্রায়শই ছুটে যেতেন প্রিয় মিঠামইন। রাষ্ট্রপতির প্রটোকল ভেঙে চড়তেন গরুর গাড়ীতে। পায়ে হেঁটে পার হতেন বাঁশের সাঁকো। ভ্যান গাড়ীতে চড়ে বাচ্চাদের মতো আনন্দ উপভোগ করতেন। চলার পথে সবার খোঁজ নিতেন। দেশের সকলের কাছে তিনি মহামান্য হলেও হাওড় অঞ্চলের মানুষেরা তাকে হামিদ ভাই আর হামিদ চাচা বলে ডাকতেন। এ নিয়ে তাঁর কোন অভিযোগ ছিলো না বরং তিনি তা উপভোগ করতেন। লুঙ্গি পরে ঘুরতেন হাওড় বাঁওড়ে। লোকমুখে শোনা যেতো তিনি নাকি অনানুষ্ঠানিক সকল সাক্ষাতের সময় লুঙ্গি পরে থাকতেন গণভবনে। তিনি সবসময় জনগণের কাছাকাছি থাকতে চাইতেন। তিনি একাধিকবার তাঁর বক্তব্যে বলেছেন রাষ্ট্রপতি হিসেবে এত প্রটোকল তাঁর পছন্দ না। তিনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে যতটা আনন্দ উপভোগ করেছেন তারচেয়ে বেশি নাকি কষ্ট ভোগ করেছেন প্রটোকলের কারনে। তিনি নাকি একবার প্রটোকল ভেঙে সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে বঙ্গভবনের পুকুর পাড়ে গিয়েছিলেন জোছনা উপভোগ করতে। তাতেই বোঝা যায় তিনি ভাটির মানুষ, মাটির মানুষ, খাঁটি মানুষ। তিনি কপটতা পছন্দ করেন না। তিনি অন্তরে যা বিশ্বাস করেন কাজে তাঁর প্রমাণ রাখতেন। তিনি লোক দেখানোর জন্য কিছু করতেন না। বাংলাদেশের সাবেক অনেক রাষ্ট্রপতি জনগণের সামনে নিজেদেরকে জনগণের বন্ধু প্রমাণ করার জন্য প্যান্ট- টিশার্ট পরে, চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে মাটি কেটেছেন। অনেকে কোর্ট টাই পরে সাইকেল চালিয়ে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে অফিস করেছেন। কিন্তু জনগণ তাদের এসকল ভণ্ডামি বুঝতে পারতো। এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ সাধারণ জীবন যাপন করতেন। জনগণের মনের কথা বুঝতে পারতেন। জনগণের পাশে থাকতেন। তাইতো তিনি জনগণের আপনজন হয়ে উঠেছিলেন মহামান্য অবস্থায়।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের বড় বড় ডাকসাইটে নেতা, কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে পিছনে ফেলে তাঁর রাষ্ট্রপতি পদে দলীয় মনোনয়ন ছিলো অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় এবং অভাবনীয়। রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমান এর মৃত্যুতে অনেকে ভেবেছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হবেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, শেখ সেলিমের মধ্যে থেকে অথবা সমপর্যায়ের কেউ। কারন তাদের প্রত্যেকের ছিলো আলাদা কর্মী বাহিনী। নিজস্ব বলয়, নিজস্ব গ্রুপ। আওয়ামী রাজনীতিতে এখনো কান পাতলে শোনা যায় তোফায়েল গ্রুপ, আমু গ্রুপ, শেখ সেলিম গ্রুপ, মতিয়া গ্রুপ। পঞ্চাশ বছরের রাজনীতিতে এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ কোন গ্রুপ তৈরি করতে পারেননি বা করেননি। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার কর্মী, তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এককথায় তিনি ঢাকার শহর ছেড়ে নিজ মহাকুমায় রাজনীতির জন্য চলে গিয়েছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে আদর্শ, শেখ হাসিনাকে নেতা এবং মিঠামইনের জনগনকে বন্ধু ভেবে রাজনীতি করে গেছেন। তাইতো সততা, বিশ্বস্ততা, আনুগত্য আর অভিজ্ঞতা দেখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বের বিরোধী দলীয় কর্তৃক জ্বালাও পোড়াও সহ নানান সংকটে শক্তহাতে হাল ধরেছেন গনতন্ত্র রক্ষার্থে। তাঁর সততা ও দক্ষতার পুরস্কার তিনি পেয়েছেন ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়ে।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে খুব বেশি কাজের ব্যস্ততা না থাকলেও তিনি দেশের মানুষকে ব্যস্ত রাখতেন তাঁর অসম্ভব সুন্দর বাচনভঙ্গি এবং উপস্থাপনায় দেওয়া বক্তব্য দিয়ে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আগে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্য হিসেবে রাস্ট্রপতির বক্তব্য শোনার জন্য শিক্ষার্থী পাওয়া কষ্টসাধ্য ছিলো। শিক্ষার্থীরা বক্তব্য শোনার চেয়ে গাউন পরে ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতো। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেকটা জোর করে শিক্ষার্থীদেরকে আটকিয়ে রাখতেন আচার্যের বক্তব্য শোনানোর জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য হিসেবে রাস্ট্রপতি এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ এসব ধারনা পাল্টে দিয়েছেন। এখন অনেক শিক্ষার্থী শুধুমাত্র তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য সমাবর্তনের রেজিষ্ট্রেশন করেন। তিনিই বাংলাদেশের প্রথম আচার্য যিনি প্রটোকল ভেঙে লিখিত বক্তব্যের বাইরে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি তাঁর হাস্যরস বক্তব্যের মাঝে অনেক উপদেশ মূলক, আদেশ মূলক, নির্দেশ মূলক কথা বলেছেন যা শিক্ষার্থী সহ দেশবাসীর হৃদয় ছুয়ে গেছে। তিনি আঞ্চলিক ভাষায় প্রানবন্ত চমৎকারভাবে কথা বলেছেন। সবাই মনোমুগ্ধহয়ে শ্রবণ করেছেন। কখনো মন হয়নি মহামান্য রাষ্ট্রপতি বক্তব্য রাখছেন। মনে হয়েছে আপনজন আপন ভাষায় আপন মনে আপন কথাগুলো বলে যাচ্ছেন তাঁর আপনজনদের উদ্দেশ্যে। তিনি সমাবর্তনে গিয়ে প্রচন্ড গরমে সমাবর্তন গাউনের ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে কথা বলেছেন। শিক্ষক রাজনীতির নামে বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের কথা বলেছেন। টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে তিনি বুঝিয়েছেন বঙ্গভবনের চার দেওয়ালের মধ্যে থাকলেও আচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খবর তিনি রাখেন। তিনি কখনো কাউকে আঘাত করে কিম্বা ছোট করে বক্তব্য বা হাস্যরস করেননি। তিনি নিজেকে নিয়ে, নিজের স্ত্রীকে নিয়ে, নিজের বউমা কিম্বা পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে হাস্যরসমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। নিজদেরকে দিয়ে উদাহরণ দিয়ে অন্যদেরকে শিখিয়েছেন। তিনি তাঁর জীবনের সকল সফলতা এবং ব্যর্থতার কথা অকপটে বলতেন সকলের সামনে। তিনি একাধিক বার বিভিন্ন সমাবর্তনে বলেছেন তিনি ফোর্থ থার্ডক্লাশ ডিগ্রিধারী। বিভিন্ন সময় দেশের বিভিন্ন রাষ্ট্রপতিদেরকে নিয়ে নানান গুনজন শোনা যেতো নারীদেরকে জড়িয়ে। সাবেক একজন রাষ্ট্রপতির নারী কেলেংকারী ছিলো দেশের আলোচ্য বিষয়। পত্নী, উপপত্নী, বান্ধবী সহ কতজনের কতকিছু ছিলো বলে গুনজন শোনা যেতো। বান্ধবীদেরকে মন্ত্রী বানানো, বন্ধবীর বরকে মন্ত্রী বানানো, এমনকি বান্ধবীর সুপারিশে এদেশে অনেকে মন্ত্রী হয়েছেন।
বাংলাদেশের অনেক সাবেক রাষ্ট্রপতিদের পরিবারের মানুষদের নিয়ে নানান বিতর্ক রয়েছে। অনেকের স্ত্রী, সন্তান, ভাই, বোন, শ্যালকরা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে টাকার পাহাড় গড়েছেন। জায়গা জমি দখল করেছেন। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়েছেন। নিজের বউ, শ্যালক, শালিকাদের এমপি মন্ত্রী বানিয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ এর পরিবার নিয়ে বিগত দশ বছরে এমন কোন খবর কারো চোখে পড়েনি।
তিনি পিছিয়ে পড়া হাওড় অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য উড়াল সড়ক নির্মাণ করেছেন শিক্ষা বিস্তারের জন্য মিঠামইন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মিঠামইন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, মিঠামইন কলেজ, ইটনা কলেজ, বাড়িবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়, আব্দুল্লাহপুর উচ্চ বিদ্যালয়, আব্দুল ওয়াদুদ উচ্চ বিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, তমিজা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়, খানপুর উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়, মোহানতলা উচ্চ বিদ্যালয় ও ছয়টি জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় সহ বহু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন।
১৯৪৪ সালে ১ জানুয়ারী কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে হাজী মোঃ তায়েব উদ্দিন এবং মোসাম্মাত তমিজা খাতুনের গর্ভে জন্মগ্রহণ করে এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠেছিলেন এদেশের আপামর জনসাধারণের প্রিয় রাষ্ট্রপতি। স্কল শিক্ষক স্ত্রী, তিন পুত্র এবং এক কন্যা নিয়ে সুখে থাকবেন এদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি হাওড়-বাওড় অঞ্চলের সকলের প্রিয় হামিদ ভাই। আপনি শিখিয়ে দিলেন কিভাবে তৃনমুলের রাজনীতি থেকে রাষ্ট্রপতি হওয়া যায়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় নির্মোহ থেকে জনগনের জন্য কাজ করা যায়। নিজের শিকড়কে আঁকড়ে ধরে নিজেকে সমুন্নত রাখা যায়। ভালো থাকবেন ভাটির মানুষ, মাটির মানুষ সাবেক রাষ্ট্রপতি এডভোকেট মোঃ আব্দুল হামিদ।
লেখক: মোঃ হেদায়েত উল্লাহ তুর্কী
ডেপুটি রেজিস্ট্রার
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
১ দিন ৭ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
১ দিন ৭ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
৫ দিন ৬ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
৫ দিন ১৪ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৭ দিন ৪৪ মিনিট আগে
৭ দিন ১১ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে
৯ দিন ৫ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
৯ দিন ১৬ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে