কলেজ কর্মচারীদের মাঝে রাজশাহী কলেজ ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে ঈদসামগ্রী বিতরণ রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে জাতিসংঘ জাতিসংঘ শূন্য বর্জ্য দিবসে প্রফেসর ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তুরস্কের ফার্স্ট লেডি ঈদ যাত্রায় নির্দিষ্ট সময়ে ছাড়ছে ট্রেন, সংকট নেই বাসেরও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চলেছে কানাডা পবিত্র জুমাতুল বিদা আজ চীনকে আরও বৃহত্তর ভূমিকা পালনের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার সুন্দরবনের হিরণপয়েন্ট চরে আটকে পড়া ৩ জেলেকে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড তারেক জিয়ার ঈদ উপহার পেল আন্দোলনে দৃষ্টিশক্তি হারানো আমজাদ চৌদ্দগ্রাম পৌর জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত. ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ফারুক আহাম্মদ কবিরাজ ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অধ্যক্ষ মু.নুরুল আমিন'র শুভেচ্ছা ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ কুষ্টিয়া জেলা শাখার উদ্যোগে সাহরি মাহফিল ও দ্বি বার্ষিক পরিকল্পনা বৈঠক! আজিম হাসানের পরিচয় সংশোধন চিলাহাটিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের রোগমুক্তি কামনায় ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত ডোমার প্রেসক্লাবের ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত শ্রীমঙ্গলে নিলামে একটি ডিম ২২ হাজার ও এক লেবু ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি নাটোরে এক যুগে প্রশিক্ষণপেল ৫৭০৪ জন! বাংলাদেশ সাংবাদিক সংস্থা গোদাগাড়ী শাখার আলোচনা সভা, দোয়া ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত বড়লেখায় প্রবাসীর পক্ষ থেকে ২'শ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

আমার সতীর্থ কামাল - শামীম আজাদ

দেশচিত্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশের সময়: 05-08-2022 06:58:17 am


আজ কামালের জন্মদিন। আমার সতীর্থ, বন্ধু শেখ কামাল আমাদের কাছে ছিলো শুধু কামালই। তাকে আমরা ‘কামাইল্যাই’ বলেছি, ডেকেছি। ওর জ্বালায় উত্যক্ত হয়ে বলেছি, ‘গেলি!’ কথায় কথায় বা তার দুষ্টুমির জন্য আটকে ফেলে কত বন্ধু যে তাকে বলেছে, ‘তোর বাবাও তোরে ছাড়াতে পারবে না।’  কামাল হেসেছে হো হো করে। কোনোদিন সে বলেনি, ‘ব্যাটারা জানোস আমি কে? আমারে চিনোস?’ 


সে ছিলো এক আশ্চর্য সহজ যুবক। যেনো পথেঘাটে যারে তারে জড়িয়ে ধরে 'আঞ্জা’ দেয়াই ছিলো তার কাজ। সে বৃষ্টিভরা দুপুরে টিএসসির সামনের বাদাম বিক্রেতাই হোক, বা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন বিভাগের দাপ্তরিকই হোন, অথবা ভিন্ন বিভাগের যে কোন ছাত্রই হোক। 




আমরা ৬৯ এর ঢাবির সতীর্থ। বিশ্ববিদ্যালয়েইং রাজী সাবসিডিয়ারী করতে গেলেই ওর এবং ওর দঙ্গলের সঙ্গে দেখা হতো। আর দেখা হতো সমাজবিজ্ঞান বিভাগে বন্ধু খুকী, ফনু, ঝোরা এবং আমার ছোটবেলার বন্ধু ডলি এদের কাছে গেলে। কিংবা পড়ন্ত বিকেলে খেলা থাকলে, জিমের মাঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার দিনে পুরো বাংলা বিভাগ ঝেটিয়ে নিয়ে খুকী ও সালমা'র জন্য মাঠে যেতাম। প্রয়াত সালমাই একমাত্র আমাদের ক্লাশের মধ্যে ছিলো খেলোয়ার। রিলে রেসে সে ছিলো খুকীর তিন পার্টনারের একজন। মাঠে প্রবেশের পরই দূর থেকে নজরে পড়তো লম্বু কামালের প্রতি।  


কিন্তু কামাল কিংবা তান্নার চোখে একবার পড়লেই হলো! দুষ্টুগুলো  শুরু করে দিতো আমাকে ক্ষ্যাপানো। সে সময় 'গেট স্মার্ট' নামে একটা টিভি ধারাবাহিক নিয়ে পাগল ছিলাম আমরা। সে সিরিজের গোয়েন্দা নায়িকার একটা সিক্রেট নাম ছিলো- যা কিনা দুই ডিজিটের একটা নম্বর। ওরা কি করতো জানেন? ওরা আমাকে ঐ নামটাই দিয়েছিলো। দূর থেকেই ঐ নম্বর ধরেই চ্যাঁচাতো। এমন কি ইংরাজী ক্লাসে যেদিন ভোলাভালা মুনিম স্যার রোলকল করতেন তখনও! যেই না আমি ও বাবলী পিছু ফিরতাম,  অমনি কী ভালো মানুষ হয়ে যেতো যেন এর বই পড়ছে, নোট দেখছে! আমি তোদের চিনি না! তো ধরার উপায় নেই বলেই চিরিৎ চিরিৎ রেগে মেগে অস্থির হয়ে যেতাম। সেটাই ওদের মজা-  আমাকে এত জ্বালাতো যে আমার প্রায় কাঁদবার অবস্থা আর ওদের হাসবার। কিন্তু এই  এতটুকুই, এর কোন ব্যত্যয় হয়নি। 



পঁচাত্তর সালের একুশে ফেব্রুয়ারী এগিয়ে আমার সময়টা মনে পড়ে। তখন সেই কামালই আবার মহা দায়িত্ববান হয়ে গেলো। ক্রিকেট মাঠে রকিবুল হাসান, ইউসুফ বাবুদের রেখেই দৌড়ে এসে হাজির হয়েছে টিএসসিতে। তারপর পুরো সাংস্কৃতিক টিমকে অনুষ্ঠানের মহড়ার জন্য সব্বাইকে একবার রামপুরা নিয়ে গেছে, আবার রেডিওতে এবং শহীদ মিনারে।


সে সময় আমার শরীরটা ছিলো বেশ দূর্বল। বিয়ে তো হয়েছেই, বাড়ীতে আম্মার কাছে ঈশিতাকে রেখে আসন্ন উৎসবের মহড়া দিয়ে যাচ্ছি। কোরাসের শিল্পী আমি আর মন্টি। কিন্তু রিহার্সেল শুরু হলে নির্ধারিত দাঁড়াবার জায়গা ছেড়ে এমনকি বাথরুমেও যাওয়াও নিষেধ! শেখ লুৎফর রহমান স্যার, আব্দুল লতিফ স্যার বলে দিয়েছেন, ‘গানের আগে সব টুকটাক সেরে এসে দাঁড়াবে’। না হলে কি সম্ভব এই বিশাল দলের হ্যাপা সামলানো? একদম না। 


এদিকে আমার তখন চূড়ান্ত এ্যাসিডিটি। একটু পর পরই ঘড়ি ধরে কিছু না কিছু খেতে হতো। গানে দাঁড়ানো অবস্থায় বাসা থেকে আনা  খাবার ও ওষুধ পায়ের কাছে হ্যান্ডব্যাগে পেছনে পড়া থাকতো।  স্যারদের বকার ভয়ে নির্ধারিত সময়ে তুলবার সাহস পেতাম না। কিন্তু সে  কখন তা লক্ষ্য করেছে টেরও পাইনি। মহড়ার দায়িত্বে থাকা কামাল পাশের ঘরের গুলতানি রেখে একদিন দেখি স্যারদের পেছন গিয়ে দুষ্টু হাসিতে মুখ ভরিয়ে অঙ্গভঙ্গি করে ঈশারায় সময় মনে করিয়ে দিচ্ছে। মাইম করে দেখাচ্ছে খাও তোমার সময় হয়েছে! অমনি আমি স্থান ত্যাগ না শরীর বাঁকিয়ে পেছন থেকে কুট করে ব্যাগটা খুলে গপ গপ করে খাবার গিলে নিয়েছিলাম। 


এমন এমন আরো কত কথা মনে পড়ছে। মনেপড়ছে বাসন্তীর জন্য সে কোথাও প্রাইভেট টিউশনির ব্যবস্থা করেদিয়েছিলো। জানু, ফারুক, লাইজু দলে যোগ দিলে ওরা এমন জোরে হাসতো যে কলা ভবনের সামনে বাংলা বিভাগের নিচের শিশু ইউক্যালিপটাসও কেঁপে উঠতো। আমাদের আড্ডার একটা জায়গা ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেবীর বারান্দার উল্টো দিকের সাইকেল ছাউনি ও তার সম্মুখভাগ।খামোখাই সাইকেল স্ট্যান্ডগুলোর বাঁকে বাঁকে ওরা বাওয়া বাওয়ি করতো। কামাল আর খুকীর বাগদানের পর একদিন আমি আর শ্রাবণী রোকেয়া হল থেকে কলা ভবনে যাচ্ছি ওখানেই খুকীর সংগে হঠাৎ দেখা। হাতে বেগম মুজিবের দেয়া সোনার বালাটা চকচক করছিলো। পেছনে কামালও ছিলো। আমার রুমমেট শ্রাবণীর সংগেই তার বন্ধুত্ব ছিলো বেশি। এর মানে হল তার সংগেই সব সময় কামালের চলতো খুনসুঁটি। সে সারাদিন পড়ে থাকতো সলিমুল্লাহ হলে, টিএসসিতে নয় জিমে। মাঝে মাঝে মনে হতো কামালের বাড়ি দু’টো। একটি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে। আরেকটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি। 


টিএসসিতে গেলেই কামাল যে কোথাও না কোথাও আছে তার জানান পাওয়া যেতো। হয় তো শুনতাম সেই অদভূত কৌতুককর গান : ড্যাগেরো ভিতরে ডাইলে চাউলে উতরালি সই ..... পাটাটা বিছায়া .... গো সই .... শ্যাম পিরিতি আমার অন্তরে ... তখন সামনে টিনই হোক আর বিনই হোক তা দিয়ে তবলা সঙ্গত চলতো সমান তালে। পাগল আর কারে বলি! যাক সে সব কথা। বলতে গেলে মনটা কেমন করে। 


বীর মুক্তিযাদ্ধা, রাষ্ট্রপতি পুত্র কামাল কোনদিন আমাদের কারো থেকে তেমন আলাদা মহাদামী কিছু গায়ে দিয়ে বাহাদুরী করেছে বলে মনে করতে পারি না। শুধু একটি সাদা ডাটসন দেখেছি। সেটাও দেখতে তেমন নতুন বা চকচকে মনে হতো না।


আমি শুধু একজন সাধারন সুজন ও বন্ধুদের অকৃত্রিম সুহৃদের কথাই বলতে পারি। বেঁচে থাকলে আপনারা সবাই তার প্রমান পেতেন। কিন্তু হায় সে সুযোগ আমাদের কামাল আর পেলো না। 

৫ আগস্ট ২০২২ লন্ডন

(লন্ডন প্রবাসী কবি শামীম আজাদ এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) 

Tag
আরও খবর