◾প্রশ্ন: আমরা বাজার থেকে প্রায় সময়ই মুরগি কিনে থাকি। বয়লার মোরগ-মুরগি, হাঁস বা পাকিস্তানি মুরগি। তো এই মুরগিগুলো আমরা কষ্টের ভয়ে কিংবা ঝামেলার ভয়ে দোকানের থাকা যেই ড্রেসিং মেশিন আছে সেখান থেকে পরিষ্কার করে তারপর বাসায় নিয়ে আসি। দেখা যায় দোকানদার কখনো মুরগির ভিতরের নাড়িভূড়িসহ ড্রেসিং মেশিনে পরিষ্কার করে। আবার কখনো দেখা যায় ড্রেসিং মেশিনে অনেক ময়লা পানি থাকে যা আমার কাছে নাপাক বলে মনে হচ্ছে। এখন আমার জানার বিষয় হল; ড্রেসিং মেশিনে মোরগ-মুরগী পরিষ্কার করে খাওয়া যাবে কি? ইসলামে এই বিষয়ে কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আছে কিনা?
আদিল মাহমুদ, নারায়ণগঞ্জ থেকে
◾উত্তর: (সমস্ত প্রশংসা মহান রব্বুল-আলামীনের জন্য)
বাড়তি ঝামেলার ভয়ে বিভিন্ন সময় বাজার থেকে মোরগ-মুরগি কেনার পর তা ড্রেসিং করে বাসা-বাড়িতে আনার প্রবণতা দিন-দিন বেড়েই চলছে । কিন্তু বর্তমান বাজারে মুরগি ড্রেসিং করার ক্ষেত্রে আমাদের যে-ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার তা করা হয় না। অনেক জায়গায় দেখা যায় অস্বাস্থ্যকরভাবে ব্রয়লার, হাঁস, কবুতর কিংবা দেশি মুরগি ড্রেসিং করা হয়। একটি মুরগির জন্য একবার গরম পানি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা করা হয় না। বরং একই ময়লা ও নাপাখ গরম পানিতে বারবার মুরগি চুবিয়ে ড্রেসিং করা হচ্ছে। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি এবং ব্যক্তিগত রুচিরও একটা বিষয়। ড্রেসিংয়ের এই স্বাস্থ্যগত দিক ছাড়াও রয়েছে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে মাসয়ালাগত কিছু বিষয়। যেগুলো না মানলে আমাদের জন্য ওই মুরগি খাওয়া হারামও হতে পারে। যা একজন মুসলিম হিসেবে কখনোই কাম্য নয়।
বর্তমান আধুনিক বাজারে জবাই করা মুরগি ড্রেসিংয়ের কয়েকটি পদ্ধতি রয়েছে। আধুনিক মাসয়ালা হিসেবে সব মুসলমানদের এসব জেনে রাখা উচিত।
জবেহকৃত মোরগ-মুরগি গরম পানিতে ডুবিয়ে মেশিনের সাহায্যে ড্রেসিংয়ের কতিপয় পদ্ধতি:
▪️ক. যবেহ করার পর মোরগ-মুরগীর নাড়িভুঁড়ি বের না করে পবিত্র বা অপবিত্র উত্তপ্ত(সাধারণত ১০০°)গরম পানিতে দীর্ঘ সময় রাখা । যার ফলে ভেতরে থাকা নাপাকির ক্রিয়া গোশতের ভেতর ঢুকে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল থাকে।
▪️খ. মোরগ-মুরগীর নাড়িভুঁড়ি বের করে অপবিত্র উত্তপ্ত(১০০°) গরম পানিতে দীর্ঘ সময় রাখা। যার দরুন মেশিনে থাকা অপবিত্র পানি গোশতের ভেতর ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
উপরোক্ত দুই অবস্থায় সেই গোশত খাওয়া হারাম হয়ে যাবে, হালালের কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই একজন সচেতন মুসলিম হিসেবে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।
▪️গ. মোরগের নাড়িভুঁড়ি বের করা ও উপরের ময়লা পরিষ্কার করার পর পবিত্র উত্তপ্ত(১০০°) গরম পানিতে দীর্ঘ সময় বা সামান্য সময় রাখা।
এই পদ্ধতিতে কোনো সমস্যা নেই। খাওয়া যাবে। বরং এই পদ্ধতি সুন্দর।
▪️ঘ. মোরগের নাড়িভুঁড়ি বের করার পূর্বে বা পরে সামান্য গরম পবিত্র বা অপবিত্র পানিতে এত অল্প সময় রাখা,
যার দরুন ভেতরের নাপাকি বা নাপাক পানির প্রভাব গোশতের ভেতর ঢুকার সম্ভাবনা থাকে না। এই অবস্থায়
গোশত হারাম হবে না। তবে বহিরাংশে মেশিনে থাকা নাপাক লাগার কারণে সেই মোরগ-মুরগিকে তিনবার ধৌত করতে হবে।
সুতরাং, সতর্কতামূলক প্রচলিত পদ্ধতিতে ড্রেসিং না করে স্বাভাবিক পদ্ধতিতে বাড়িতে ড্রেসিং করাই উচিৎ। একান্ত যদি বাজারে কিংবা দোকানে ড্রেসিং করতেই হয়, তাহলে প্রথমে জবেহকৃত মোরগ-মুরগির নাড়িভুঁড়ি বের করে শরীরে লেগে থাকা নাপাকী পরিষ্কার করে নিবে। এরপর পবিত্র গরম পানিতে অল্প সময় রেখে ড্রেসিং করবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিক বুঝার তৌফিক দান করুন এবং আল্লাহর আহকাম যথাযথভাবে মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমীন
(আল্লাহ তাআলা সবচে' ভালো জানেন)
▪️সূত্র: (ফাতওয়ায়ে শামি ১/৫৪৪)(আহসানুল ফাতাওয়া ২/৯৬)। (ইমদাদুল আহকাম : ৪/৩০১)(ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১১/৩৭০)
◾সমাধান _ মুফতী উসমান গণী নোমানী
মুহাদ্দিস, জামি'আ ইসলামিয়া আরাবিয়া বলিয়ারপুর, সাভার , ঢাকা।
◾প্রিয় পাঠক, আপনার দৈনন্দিন জীবনে ইসলামী বিষয়ক যত মাসলা মাসায়েল রয়েছে তা জানতে এবং সমাধানের জন্য যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন নিম্নোক্ত ঠিকানায়-osmangoninomani@gmail.com
২৩ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
১ দিন ১৬ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
১ দিন ১৮ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে
২ দিন ৪ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
৩ দিন ২ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৩ দিন ১৬ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৪ দিন ১৪ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৯ দিন ১৪ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে