বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসে চলছে অভিনব কৌশলে জালিয়াতি-প্রতারণা ও দুর্নীতি। খুচরা সার ও কীটনাশক বিক্রির লাইসেন্স প্রদান সহ বিধি বহির্ভূতভাবে যত্রতত্র সার ডিলার কার্ড ইস্যু করে কার্ড ফি ও জামানত আদায়ের নামে কর্মকর্তারা
হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে এসব টাকা নিজেদের পকেটস্থ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এসব কর্মকান্ডের পুরোভাগে রয়েছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিবুল হাসান সুমন।
তৃনমুলে কৃষি সেবা পৌছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক খুচরা সারের ডিলার নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মোরেলগঞ্জে ১ টি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়নের মোট ১৬১টি ওয়ার্ডে ৩০ হাজার টাকা করে জামানত নিয়ে ১৬১ জন কার্ডধারী খুচরা সার বিক্রেতা নিয়োগ করে উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি। তাঁরা উপজেলার ১৭ জন বিসিআইসি সার ডিলারের কাছ থেকে সরকারি বরাদ্দের ৫০ শতাংশ সার গ্রহণ করবেন এবং সরকার নির্ধারিত মূল্যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের মধ্যে বিক্রি করবেন।
মোরেলগঞ্জে খুচরা সার বিক্রেতাদের ১৬১ এর মধ্যে ২০২২ সালে ৫৫টি শুন্যপদে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ সহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ১০৩ জন আবেদনকারীর মধ্য হতে ওই ৫৫ জনকে নিয়োগের জন্য উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুপারিশ করেন। সুপারিশকৃতদের কাছ থেকে ২শ' টাকা কার্ড ফি এবং জামানতের জন্য ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাংক রশিদ ও লাইসেন্সের আইডি কার্ড তাদেরকে ইস্যু করার বিধান রয়েছে।
কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিস থেকে সুপারিশকৃতদের তালিকার বাইরে গিয়ে উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের পছন্দমতো কিছু ব্যক্তিকে ভুল বুঝিয়ে খুচরা সার বিক্রেতা হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে উপজেলা কৃষি অফিস। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন উপায়ে জামানতের নামে ৩০ হাজার এবং অতিরিক্ত আরও ৫-১০ হাজার টাকা অফিস খরচের নামে নেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিবুল হাসান সুমন। তাদের হাতে ধরিয়ে দেন পূর্বে জামানত বাবদ জমাকৃত কারো বৈধ রশিদের ফটোকপি আর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত অবৈধ আইডিকার্ড।
গত কয়েকদিনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, উপজেলার পঞ্চকরণ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে বৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত খুচরা সার বিক্রেতা থাকা সত্ত্বেও সাবেক এক ইউপি সদস্যকে ভূয়া কাগজপত্র সরবরাহ করে তার কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে ৩৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মহিবুল হাসান সুমন। তাকে যে রশিদ দেয়া হয়েছে তার ক্রমিক নম্বর ৪৩৯। অথচ ব্যাংকে গিয়ে দেখা যায় ৪৩৯ ক্রমিকের রশিদটি হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের বৈধভাবে নিযোগপ্রাপ্ত মো. ইউসুফ আলী’র ।
অনুরূপভাবে জাল আইডিকার্ড দিয়ে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের আবির হোসেন তালুকদার, নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের আব্দুল হক খান, মোরেলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের তাজিরুল ইসলাম সহ আরও অনেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে হাজার হাজার টাকা। কীটনাশক লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রেও রয়েছে অবৈধভাবে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ। ৩শ' টাকার স্থলে ২-৪ হাজার পর্যন্তও নেয়া হয়েছে ক্ষেত্র বা ব্যক্তি বিশেষে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এগুলোর মূল খলনায়কের ভূমিকায় ছিলেন ওই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিবুল হাসান সুমন।
অন্যান্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিটি ইউনিয়নের ফিল্ডে কাজ করলেও শুরু থেকেই স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে অভিযুক্ত মহিবুল হাসান সুমন অফিসে কাজ করে আসছেন। কম্পিউটারে ডাটা এন্ট্রি থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ তিনিই মেইনটেইন করেন। কোন কোন ক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তোয়াক্কা না করেই অবৈধ নানা কাজ বাগিয়ে নেন অফিস থেকে।
তার বিরুদ্ধে রয়েছে পুর্বের কর্মস্থলে চাকরির প্রলোভনে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগও। ভুক্তভোগীদের এমন নানা অভিযোগে মোরেলগঞ্জ কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিবুল হাসান সুমনকে বর্তমানে প্রতিদিনই হাজির হতে হচ্ছে খুলনা এবং বাগেরহাটের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দপ্তরে ।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও সার বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব আকাশ বৈরাগী বলেন, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিবুল আমার স্বাক্ষর জাল করে অথবা কাজের ব্যস্ততার মাঝে বৈধ আইডি কার্ডের সাথে অবৈধ আইডি কার্ডে স্বাক্ষর নিতে পারেন। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। এক্ষেত্রেও আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
উপজেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম তারেক সুলতান বলেন, আমাদের আহার্য যোগানো কৃষকেরা আমাদের দেশের সোনার মানুষ, কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব, এই কৃষক বা প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতারণা বা দুর্নীতি মেনে নেওয়া হবে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বাগেরহাট জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, ইতোমধ্যে মহিবুলের ব্যাপারে কয়েকটি অভিযোগ জমা হয়েছে, যেগুলো তদন্তাধীন আছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে চাকরি বিধি অনুসারে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা সার বীজ মনিটরিং কমিটির উপদেষ্টা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. আমিরুল আলম মিলন বলেন, কৃষিক্ষেত্রে এসব অনিয়ম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এরা সরকারের বদনাম করে, কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগের তীর যার দিকে সেই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিবুল হাসান সুমন গা ঢাকা দিয়েছেন। তার সাথে সরাসরি এবং মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
১১ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে