শ্রীমঙ্গলে ঘূর্ণিঝড় 'মিধিলির' প্রভাব
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ঘূর্ণিঝড় 'মিধিলির' প্রভাবে দিনব্যাপী বৃষ্টিতে জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ভ্যান-রিকশাচালক, হতদরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষ। জরুরি কোনো কাজ ছাড়া বাসার বাইরে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।
শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধা ৬টায় সরজমিনে কালিঘাট রোড রিক্সা স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায় রিকশা নিয়ে অলস সময় পার করছেন অনেক রিকশা চালক।
কথা হয় রিকশা চালক মনির হোসেন এর সাথে। তিনি জানান, আজ সকাল থেকেই একটানা বৃষ্টি। এক মিনিটের জন্য বৃষ্টি থামতে দেখিনি। অন্যান্য দিন বৃষ্টি হলেও শহরে মানুষের আনাগোনা থাকে। বৃষ্টির মধ্যেও মাথায় পলিথিন দিয়ে রিকশা চালিয়ে ভালোই ইনকাম হয়। কিন্তু আজ একটানা বৃষ্টির মধ্যে মানুষ বাসা-বাড়ি থেকে তেমন একটা বের হয়নি। এক কথায় রিকশার যাত্রী কম। তাই ইনকামও কম হয়েছে।
শ্রীমঙ্গল শহরতলীর মুসলিমবাগ এলাকার টমটম চালক ইউসুফ মিয়া বলেন, সকাল থেকে একটানা বৃষ্টি। শহরে মানুষের আনাগোনা নেই। সারাদিনে ২০০টাকাও ইনকাম হয়নি। মালিকরে কি দেবো আর কি দিয়ে বাজার সদাই করবো। এখনও বৃষ্টি চলমান। চিন্তায় আছি ইনকাম নিয়ে।
আশিদ্রোন ইউনিয়নের মহাজিরাবাদ এলাকার দিনমজুর জাবেদ হোসেন বলেন, অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাই। দিন আনি দিন খাই। স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে আজ কী খাবো সেটাই ভাবছি। আজকের বৃষ্টি এক মিনিটের জন্যও থামেনি। কাজেও যেতে পারিনি।
শহরের ঝালমুড়ি বিক্রেতা জামাল মিয়া বলেন, ফজর থেকে যে বৃষ্টি শুরু হলো এক মুহূর্তের জন্যও বৃষ্টি থামেনি। অন্যদিনের তুলনায় আজ বেচাবিক্রি একেবারেই নেই বললে চলে।
এদিকে বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর রাত থেকে শুক্রবার সারাদিন অনবরত বৃষ্টি হয়েছে। সঙ্গে ছিল হিমেল হাওয়া। বৃষ্টির কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারেনি। ক্ষতি হয়েছে মৌসুমি সবজির। বৃষ্টি এবং বাতাসে নষ্ট হয়েছে মাঠের পাকা আমন ধান।
সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলা গ্রামের কৃষক ফজর মিয়া (৪৮) বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। আগামী রোববার ধান কাটা শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ ঠানা বৃষ্টি ও বাতাসে ধান ক্ষেতে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রচুর ক্ষতি হয়ে গেলো।
আশিদ্রোন ইউনিয়নের টিকরিয়া গ্রামের কৃষক মতিন মিয়া জানান, তিনি ৬ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছিল। দুই একরে চিনিগুড়া ও চার একরে রঞ্জিত জাত। বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবার অনেক ভালো ফলন হয়। কিন্তু দুই দিনের বৃষ্টির কারণে কাঙ্খিত ফসল ঘরে তোলা নিয়ে তিনি চিন্তিত।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার অশিদ্রোন ইউনিয়নের খোশবাস গ্রামের চাষি মোঃ শাকির আহম্মেদ জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’র প্রভাবে সোনালী আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকদিন পর আমি আমন ধান কাটার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। এবার রোপা আমনের বাম্পার ফলনও হয়েছিল। আশা করেছিলাম বিগত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ ফসল ঘরে তুলতে পারবো। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে যে বৃষ্টি ও বাতাস শুরু হয়েছিল আজ শুক্রবার সারাদিনই বৃষ্টি ঝরছে। প্রবল বাতাসে পাকা ধান নুয়ে পড়ছে এবং ঝরে পড়েছে অনেক ধান। এছাড়া পাকা ধান ক্ষেতে পানি জমে গেছে। এখন ধান কাটা যেমন কষ্টেের তেমনি ধান কাটা শ্রমিকদের দিতে হবে তিন গুণ মজুরি। প্রচুর ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফসল তোলা নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় আছি।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত উপজেলায় ৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় বাতাসের গতি ছিল সর্বোচ্চ ৩ নটিক্যাল মাইল।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক বিপ্লব দাশ বলেন, এ ধরণের আবহাওয়া আরও ৪৮ ঘণ্টা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন বলেন, ঘূর্ণিঝড় 'মিধিলির' প্রভাবে আমনের তেমন একটা ক্ষতি হয়নি। কিন্তু আকস্মিক বৃষ্টির কারণে রবি সবজির বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে আলু চাষিদের।
১ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
১ দিন ১ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
১ দিন ১ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
১ দিন ১৯ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে