আমরা পারবো-চা বাগান নারী ও কিশোরী সংঘের 'নারী প্রতিরোধ পক্ষ' উপলক্ষে অর্ধ মাসব্যাপী কর্মসূচি
অক্সফ্যাম ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর সহায়তায় এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এর উদ্যোগে সিলেট বিভাগের ২৫ চা বাগানে বাস্তবায়িত লিডারশীপ এমবডি এসোসিয়েশন ডিমানডিং টু এনশিওর রাইটস (লিডার) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আমরা পারবো নারী ও কিশোরী সংঘের আয়োজনে নারীর জন্য বিনিয়োগ, সহিংসতা প্রতিরোধ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আন্তজার্তিক নারী প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে মৌলভীবাজার, সিলেট এবং হবিগঞ্জের ২৫ টি চা বাগানে একযোগে গত ২৫ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যক্রম চলবে।
এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গতকাল ২৬ নভেম্বর হবিগঞ্জ জেলার চান্দপুর চাবাগান এবং মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার করিমপুর চাবাগানে আলোচনা সভা ও র্যালীর আয়োজন করা হয়।
প্রকল্প সমন্বয়কারী পারভেজ কৈরীর সঞ্চালনায় আমরা পারবো নারী ও কিশোরী সংঘের নির্বাচিত কমিটির সম্মানিত সভাপতি সন্ধ্যা রানী ভৌমিক আন্তাজার্তিক নারী প্রতিরোধ পক্ষ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও র্যালীর শুরুতে স্বাগত ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য যে, চান্দপুর চা বাগানের অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মাসুদ কায়সার খান, সাবেক উইনিয়ন পরিরষ মহিলা সদস্য রঞ্জু কানু ও মোছা.শিরিন আক্তার, বর্তমান মহিলা সদস্য রুমা উরাং, মানবাধিকার কর্মী স্বপন কুমার সাঁওতাল এবং চা বাগান নারী ও কিশোর দলের সদস্যবৃন্দ এবং হিসাব সহকারি পলাশ ঘোষ । অন্যদিকে মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মধুছন্দা দাস, চা বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি গনেশ গোয়ালা এবং সম্পাদক দিলীপ গোয়ালা সহ স্থানীয় বাগানের নারী ও কিশোর দলের সদস্যবৃন্দ এবং প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা প্রভাষ নায়েক।
প্রসঙ্গত, যে, চা বাগানের নারী ও কিশোরীদের সামাজিক সুরক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি প্রশ্নাতীত। দেশের নাগরিক ও শ্রমিক হিসেবে ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদার বিষয়টি বিশেষ করে চা বাগান জনগোষ্ঠীর জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। একই সাথে শিক্ষা ও সচেতনার অভাবে চা বাগানের জনগোষ্ঠীর অধিকার সচেতনতার জায়গাটিও বেশ নাজুক এবং সামাজিক নানা কুসংস্কার ও প্রথা বিশেষ করে নারী ও কিশোরীদের বিকাশ, মতপ্রকাশ ও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রতিবন্ধক।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে অদ্যবধি চা বাগানের নারীরা সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার প্রয়াস থেকে ব্যর্থ। যদিও বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন চা বাগানের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে তারপরও চা জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ও বৈচিত্রময় প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় তা অপ্রতুল। আর নারীদের জন্য স্বতন্ত্র একটি জোট গঠন ছিলো প্রায় একদশকের দাবি। চা বাগানে সরকার ও চা বাগান মালিকপক্ষসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠন কাজ করলেও নারীদের জন্য স্বতন্ত্র একটি জোট তৈরি করা একটি সময়ের দাবী ছিলো।
অক্সফ্যাম ও ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স (বিটিএস) এর চা বাগানের কাজের অভিজ্ঞতা ও ২৫টি বাগানের নারী ও কিশোরী দলের সাথে কাজ করার প্রেক্ষাপটে চা বাগানের নারী শ্রমিক, অন্য নারী ও কিশোরীদের জন্য উক্ত সংগঠনটি চা বাগান প্রেক্ষাপটে বেশ বড় ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে যা একই সাথে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এর সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। উক্ত বাস্তবতা ও প্রেক্ষাপটের বিবেচনায়, অক্সফ্যাম ও ব্রেকিং দ্যা সাইলেন্স এর উদ্যোগে ফেব্রুয়ারি ২০২২ শ্রীমঙ্গলে ‘আমরা পারব’ জোট এর আত্নপ্রকাশ ঘটে।
সংগঠন জানায়, আমরা পারবো চা বাগান নারী ও কিশোরী জোট কয়েকটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এর মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হলো।
-নারীর বিরুদ্ধে যেখানেই কোন অপরাধ হচ্ছে বা হবে সে বিষয়ে নিজ অবস্থান থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করা।
-নিজ বাগানে নারী ও কিশোরীদের নিয়ে ছোট দল তৈরী করে তাদেরকে অধিকার সচেতন করা এবং দলের সদস্যদের নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো,
-নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নির্যাতন প্রতিরোধে চা বাগানে যে সকল সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এবং কমিটি কাজ করছে তাদের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা,
-চা বাগানে পিছিয়ে পড়া নারী ও কিশোরীদের উন্নয়নে সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা,
-চা বাগানে নারী শ্রমিকদের জন্য নিরপাদ ও ন্যায্য কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করতে কাজ করা।
-চা বাগানের শিশু ও কিশোরীদের শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করা,
-চা বাগানে বাল্য বিবাহ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ কাজ করা,
-চা বাগানে শ্রমিক ও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সর্বস্তরের নারীর সম-মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা।
উক্ত প্রকল্পের সিলেট বিভাগের দায়িত্বে থাকা প্রকল্প সমন্বয়কারী পারভেজ কৈরী জানান, ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স গত ২৫ নভেম্বর থেকে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চা বাগানে নারীদের সব চেয়ে বড় সংগঠন আমরা পারবো চা বাগান নারী ও কিশোরী সংঘ কে সাথে নিয়ে ১৬ দিন ব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন উক্ত কার্যক্রমে মহিলা বিষয়েক অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন বিভিন্নভাবে সহগযোগিতা প্রদান করছেন। তিনি বলেন মৌলভীবাজারের ১৮ টি চা বাগানে উক্ত কার্যক্রমে সরাসরি সহায়তা প্রদান করছেন উপ পরিচালক জনাব শাহেদা আক্তার এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্মানিত নেতৃবৃন্দ। উল্লেখ্য যে, প্রকল্পটি সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট জেলার ২৫ টি চাবাগান নিয়ে কাজ করছে। তিনি আরো বলেন অক্সফ্যাম ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর সহায়তায় এবং ব্রেকিং দ্য সাইলেন্স এর উদ্যোগে গঠিত এই জোটটি ইতোমধ্যেই বেশ সাড়া ফেলেছে। তিনি উক্ত জোটের কার্যপরিধি আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ুক এবং এর সাথে জড়িত সকল সমমনা ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন।
১ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
৮ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
১ দিন ১ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে
১ দিন ১ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
১ দিন ১৯ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে