◾মোঃ নেছার উদ্দিন চৌধুরী : সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে ব্যবহৃত হয়ে আসা লালফিতা-প্রত্যয়টি বর্তমান সময়ের সরকারি কর্মকান্ডের সাথে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত।সেই সময় সরকারি ফাইলগুলো লাল রঙের ফিতা দিয়ে বেঁধে রাখা হতো।আর যেভাবে বাধা হতো সেভাবেই সেটা পড়ে থাকত।কোন রকমের আর্থিক লেনদেন ছাড়া সে ফাইলের কোন নড়চড় হতো না। এই বিষয়টি লাল ফিতার দৌরাত্ম্য (Red Tapism) নামে প্রচলিত।এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সূচনা লগ্নে যখন পৃথিবী প্রত্যেকটি দেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে নিজেদের অবস্থান তৈরির চেষ্টা করছে সেই সময়ে আমাদের মত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলো এখনো সেই সপ্তদশ শতাব্দীর কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদেরকে মুক্তি দিতে সক্ষম হয়নি।
এই দৌরাত্ম্য বন্ধে আমাদের প্রশাসন ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা এবং এই বর্তমান প্রজন্মের ডিজিটালাইজেশন ব্যবস্থা কি কোনরকম প্রভাব বিস্তার করতে পারছে? উত্তর হলো- না। কারণ,আমাদের সকলের স্বদিচ্ছা,উদ্দীপনা এবং উৎকণ্ঠার অভাব রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানিয়েছে,আমলাতান্ত্রিক জটিলতার এই লাল ফিতা থেকে বেরিয়ে আসতে।তিনি চান কাজের ক্ষেত্রে এই লাল ফিতার দৌরাত্ম্য যেন আর না থাকে। তাহলেই ব্যবসা-বাণিজ্য আরো গতিশীল এবং দেশ আরো উন্নত হবে।সম্প্রতি রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে তিনি এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।তার এই আহ্বান যথার্থই। কিন্তু আসলেই এই সমস্যা সমাধানে আমাদের কোন পদক্ষেপ আছে কি?
স্বদিচ্ছার প্রয়োগ করতে পেরেছি কি? সাধারণ মানুষের মাঝে কোনরূপ উদ্দীপনা বা উৎকণ্ঠা দেখেছি কি?বরং আমাদের সমাজ ব্যবস্থা সমস্যা সমাধানে কাজ না করে এই ঘুষখোর আমলাদেরকে ঘোষ প্রদানে সহায়তা করে।সা.মানুষ নিজেদেরকে অস্তিত্বহীন,অসহায়,নির্জীব মনে করে ত্রিশ মিনিটের কাজের জন্য তিন ঘন্টা এবং পাঁচ দিনের কাজের জন্য পাঁচ মাসও অপেক্ষা করে বসে থাকে। কারো কাজ কখনোই হবে না যদি না তার কোন রাজনৈতিক প্রভাব বা সামাজিক প্রভাব অথবা অর্থের গাদি থাকে।আর সে কিনা তার অর্থ দিয়ে আমলাদের উদরপূর্তি করার জন্য পকেট ভারি করে দেয়।এভাবেই চলছে আমাদের অভিনব প্রতিবাদ। আমাদের এই ডিজিটালাইজেশন ব্যবস্থায় আমলা তান্ত্রিক জটিলতা দূর করতে ই-ফাইলিং বা ই-নথি কার্যক্রম চালু করেছে।
তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নথি ব্যবস্থাপনা চালু করেছে।কিন্তু কিছুতেই দেশ প্রেমহীন মানসিকতা,স্বদিচ্ছার অভাব এবং অসাধু আমলাদের চরিত্রের বিন্দুমাত্র পরিবর্তন আসে নি।দেশের মানুষ সরকারি দপ্তরগুলো থেকে যে সেবা পায় সেটা কি কারো দয়া-দাক্ষিণ্য? কারো বাবার দেওয়া সম্পদ?নাকি কারো অনুগ্রহ?বরং এটা প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি নাগরিকের অধিকার।কেননা জনগণের দেওয়া ট্যাক্সেই সরকারি অফিস-আদালত গুলো পরিচালিত হয়।এবং অসাধু, মানবিকতা বোধহীন,নৈতিকতাহীন এই ধরনের আমলাগুলোর উদরপূর্তি হয়। তাই প্রতিটি জনগণের সঠিক সময়ের মধ্যে উন্নত সেবা নিশ্চিত করা প্রত্যেকটা সরকারি কর্মচারীর কর্তব্য। কিন্তু তা কতটা বাস্তবায়ন হচ্ছে? অতীতে সরকারি ফাইলগুলো লালফিতায় বাধা হতো তা ঠিক।বর্তমানে এই দৌরাত্ম্য বন্ধের জন্য সেটাকে পরিবর্তন করে সাদা ফিতায় বাধা হয়। কিন্তু দৌরাত্ম্য কি আদৌ বন্ধ হয়েছে? বরং নমুনাটা এমন হয়েছে,গিরগিটির মত তারাও তাদের চেহারার রং পরিবর্তন করেছে।যা গোটা দেশ ও রাষ্ট্রকে জিম্মি করে রেখেছে।সচিবালয় থেকে শুরু করে সরকারি ব্যাংক-বীমা, বিভিন্ন অফিস-আদালত, মন্ত্রণালয়, দফতর-অধিদপ্তর, সরকারি হসপাতাল এবং বোর্ড অফিসের মত জায়গাগুলোতে এই লাল ফিতার দৌরাত্ম্য জেঁকে বসে আছে।
বাড়ি বানাতে গিয়ে নকশা অনুমোদনের জন্য মানুষকে যেমন চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তেমনি সরকারিভাবে কোন জমি অধিগ্রহণ হলে ক্ষতিগ্রস্তরা দিনের পর দিন নিরলস প্রচেষ্টা করেও পায় না তাদের ক্ষতিপূরণ। পানির লাইন নিতে গেলেও নানা হয়রানির শিকার হতে হয় নগরবাসীকে।এদিকে গ্রামাঞ্চলে জন্ম সনদের সামান্য পরিবর্তন,নতুন জন্ম সনদ এবং মৃত্যু সনদ তৈরির জন্য সা.জনগন সকল কাজকর্ম ফেলে রেখে ঘন্টার পর ঘন্টা তাদের তোষামোদ করেও সঠিক সময়ে কাজ আদায় করতে পারে না।সেবা খাতের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে এ দৌরাত্ম্য নেই। যত দ্রুত সম্ভব এই দৌরাত্ম্য বন্ধে আমাদের প্রশাসনের, সমাজের এবং ডিজিটালাইজেশন ব্যবস্থার যথাযথ স্বদিচ্ছা, উৎকণ্ঠা এবং উদ্দীপনার পরিচয় দিতে হবে। তবেই,আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অন্যান্য দেশের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারব।
লেখক : মোঃ নেছার উদ্দিন চৌধুরী।
আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সদস্য:- বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম,(রা.বি)।
১ দিন ২২ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
১ দিন ২২ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
৫ দিন ২১ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
৬ দিন ৫ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
৭ দিন ১৫ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
৮ দিন ২ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
৯ দিন ২০ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
১০ দিন ৭ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে