সূর্যমুখীর হাঁসিতে হাসছে মাঠ, নয়নজুড়ানো দৃশ্যে মোহিত দর্শনার্থীরা
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সূর্যমুখী ফুল চাষে লাভের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। স্বল্প খরচে অধিক লাভজনক হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ বেড়েছে উপজেলায়।
শুক্রবার (২২ মার্চ) দুপুরে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর ইউনিয়নের পশ্চিম লইয়ারকুল, উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাইল হাওর সংলগ্ন এলাকা এবং আশিদ্রোন ইউনিয়নের হরিনাকান্দি গ্রাম সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সুর্যমুখী চাষ করা ক্ষেতে এখন ফুলের সমারোহ। সহস্রাধিক সূর্যমুখী ফুল পূর্ণতা নিয়ে বাতাসে দোলা খাচ্ছে। সবুজ পাতার আড়ালে মুখ উচুঁ করে আছে সূর্যমুখী। সূর্যমুখীর হাঁসিতে হাসছে মাঠ। চারিদিকে সবুজের মাঝে হলুদের সমারোহ। আর এই হলুদ প্রকৃতিকে করেছে আরোও লাবন্যময়। সূর্য যেদিকে ফুলের মুখও সেদিকে। তাই এটাকে সূর্যমুখী বলে। নয়ন জুড়ানো এ দৃশ্য মোহিত করছে সবাইকে। প্রতিদিন আশপাশ এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিয়াসুরা দল বেঁধে আসেন সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে।
পশ্চিম লইয়ারকুল এলাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাক এর ছেলে মো. খলিল মিয়া (৫০) তার নিজ জমিতে এবার সূর্যমুখী চাষ করছেন। আলাপকালে তিনি বলেন, গত বছরও আমি সূর্যমুখী চাষ করেছিলাম, কিন্তু ঝড়-তুফানে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লোকসানের শিকার হই। তাই এবার ৭ শতক জমিতে আমি সূর্যমুখী চাষ করি। গত জানুয়ারি মাসে আমি চাষ শুরু করি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে বিজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আমি ক্ষেতে ৩/৪ হাজার খরচ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। তবে প্রতিদিন ভোরে টিয়া পাখি এসে বিজ খেয়ে ফেলে। এরপরও আমি আশাবাদি এই ক্ষেতে দেড়- দুই মন বিজ সংংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারবো। বাজারে বীজের দাম বাড়তি থাকলে লাভবান হওয়ার আশা করছেন তিনি। মো. খলিল মিয়া পেশায় একজন মুয়াজ্জিন। ৫ মেয়ে এবং ১ ছেলের জনক তিনি। পশ্চিম লইয়ারকুল গাউছিয়া জামে মসজিদে দীর্ঘদিন থেকে তিনি মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করছেন বলেও জানান। মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সূর্যমূখী চাষ করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন তিনি।
সূর্যমূখী চাষী আশিদ্রোন ইউনিয়নের মৃত আব্দুল গনির ছেলে মো. নুরুল হক (৪৮) জানান, এবার আমি ১০ শতক জমিতে সূর্যমূখী চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর থেকে আমাকে বিজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। তবে পোকা-মাকড় দমনের কাটনাশক, পানি এবং কামলা খরচসহ মোট ৪/৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। জানুয়ারি মাসে সূর্যমখীর বিজ রোপণ করেছিলাম, এখন বিজ সংগ্রহের সময় হয়েছে। আশা করি ৩/৪ মন বিজ সংগ্রহ করতে পারো। দাম ভালো থাকলে অধিক লাভবান হতে পারবো।
চাষী মো. নুরুল হক আরও বলেন সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ও খৈল হয়। ফুলের ক্ষেতে মৌচাক বসিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মধুও সংগ্রহ করা যায়। এছাড়া শুকিয়ে যাওয়া গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সূর্যমুখী বীজ বপনের ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যেই ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। অন্যান্য তেলবীজের তুলনায় বেশি তেল পাওয়া যায়।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের হাইল হাওর সংলগ্ন এলাকার সূর্যমুখী চাষীরা বলেন, অন্যান্য ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি কম খরচে ও অতি অল্প সময়ে সুর্যমুখী ফুল চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। এ ফসল চাষে কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় অন্যান্য চাষিরাও সুর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামীতে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সুর্যমুখী চাষ আরও বাড়বে বলে চাষিরা বলছেন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অল্প সময়ে কম পরিশ্রমে ফসল উৎপাদন ও ভালো দাম পাওয়া যায় বলে কৃষকরা এখন সূর্যমুখী চাষ করছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১ কেজি বীজ দিতে হয়। দেড় ফুট অন্তর অন্তর একটি করে বীজ বপন করতে হয়। একটি সারি থেকে আরেকটি সারির দূরত্ব রাখতে হয় দেড় ফুট। মাত্র ৮৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বীজ বপন থেকে শুরু করে বীজ উৎপাদন করা সম্ভব। প্রতি একর জমিতে সব খরচ বাদ দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। যা অন্য কোনো ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রমে ভালো আয়। এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে উৎপাদিত তেল কোলেস্টেরল মুক্ত ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে এ তেলের চাহিদাও বেশি।
শ্রীমঙ্গলের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মহিউদ্দিন জানান, শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিনামূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ছয় থেকে সাড়ে ছয় মন সূর্যমুখী ফুলের বীজ পাওয়া যাবে। কৃষকদের স্বাবলম্বী করতেই সূর্যমুখী ফুল চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আরও জানান, চলতি মৌসুমে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৯ ইউনিয়নে ৩৭০ জন চাষিকে সূর্যমুখী চাষের জন্য প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। এবার শ্রীমঙ্গলে ৫২ হেক্টর অর্থাৎ ১২৯ একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। আগামীতে সূর্যমুখীর চাষ অনেক বাড়বে বলেও জানান তিনি।
১৪ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে