◾ মো. আশরাফুল ইসলাম
মাসুম আজিজ, বাংলাদেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে এক পরিচিত মুখ। তার অসাধারণ দূরদর্শী অভিনয়ে মুগ্ধ হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর । যেকোনো চরিত্রকে তিনি অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
মাসুম আজিজ ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। দীর্ঘ কর্মজীবনে ৪০০ -এর অধিক সংখ্যক নাটকে অভিনয় করেন। তিনি নিজেকে সব সময় গানের মানুষ বলে পরিচয় দিতেন। কিশোর বয়স থেকেই গান নিয়ে তাঁর নানা পরিকল্পনা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার আগে থেকেই তিনি গান নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। গান গাওয়া ও বাদ্যযন্ত্র বাজানোয় তিনি অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। এই গান থেকেই একসময় তিনি অভিনয়ের প্রেমে পড়ে যান। একসময় অভিনয়কে ঘিরেই ঘুরতে থাকে তাঁর জীবন।
মাসুম আজিজকে নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ব্যস্ততার জন্য বেশিরভাগ সময়ই ঢাকায় থাকতে হয়েছে। ঢাকায় থাকলেও তিনি তাঁর নিজ এলাকার কথা ভুলে যাননি। সময়-সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন নিজ এলাকায়। সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখতেন।
মাসুম আজিজ অভিনেতা ছাড়াও চিত্রনাট্যকার ও নাট্যনির্মাতা হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি একাধারে মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি থিয়েটারে কাজের মাধ্যমে অভিনয় জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি প্রথম টিভি নাটকে অভিনয় করেন। তাঁর বেশিরভাগ নাটকেই প্রত্যন্ত গ্রামের একজন সাধারণ মানুষের জীবন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দর্শক তার অভিনীত নাটক, সিনেমার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। গহীনে শব্দ ও ঘানি চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি দর্শকদের মনে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছেন।
আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে তিনি টিভিতে কাজ করে আসছেন। অভিনয় জীবনে মাসুম আজিজের উল্লেখযোগ্য কর্ম হচ্ছে- উড়ে যায় বকপক্ষী, তিন গ্যাদা, দুই দুকুনে চার, ঘানি, এইতো প্রেম, সাকিন সারিসুরি, গহীনে শব্দ। মুলত হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক ‘উড়ে যায় বকপক্ষী’ -তে অভিনয়ের জন্য তিনি একবিংশ শতাব্দীর সবার কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। ২০০৬ সালে 'ঘানি' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে রাইসুল ইসলাম আসাদের সঙ্গে তিনি যুগ্মভাবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তাছাড়া সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘সনাতন গল্প’ পরিচালনা করে তিনি বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছেন। ছবিটি ২০১৮ সালে মুক্তি পায়। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি বেশ প্রশংসিত হয়। এ বছর (২০২২ সালে) তিনি অভিনয়ে একুশে পদক লাভ করেন। টিভি নাটকগুলোতে মাসুম আজিজের অভিনয় দক্ষতা এবং জনপ্রিয়তা অত্যন্ত বেশি ছিল। প্রযোজকরা কোনো নাটক প্রযোজনার কথা ভাবলেই মাসুম আজিজকে কীভাবে কোন একটি চরিত্রে রাখা যায় সেই চিন্তা করতেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত মাসুম আজিজ দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারের পাশাপাশি হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৭ সালে তাঁর হার্টে চারটি ব্লক ধরা পড়ে। তখন তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়। চলতি বছরের শুরুর দিকে মাসুম আজিজের ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। ১০ মাস ধরে তাঁর চিকিৎসা চলছিল। এরই মাঝে কয়েক দফায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এই গুণী অভিনেতা। সম্প্রতি ফের অসুস্থ হয়ে পড়লে চলতি মাসের শুরুতে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় অভিনেতাকে স্কয়ার হাসপাতালের লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে সেখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা ও নাট্যনির্মাতা মাসুম আজিজ ছিলেন একজন নির্লোভ ও সাদা মনের মানুষ। একজন বড় মাপের অভিনেতা হলেও তাঁর মাঝে কোনো অহংকার ছিল না। তিনি একজন সমাজ সচেতন মানুষ ছিলেন। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির প্রতি তাঁর সততার তুলনা নেই। ছোট-বড় সবার সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক ছিল। তিনি একজন জাত অভিনয় শিল্পী ছিলেন বলেই তার অভিনীত প্রতিটি নাটক এবং সিনেমা সাধারণ মানুষ অত্যন্ত সাবলীলভাবে গ্রহণ করেছে। তাঁর মতো গুণী অভিনেতার প্রস্থানে অভিনয় জগতে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা কখনো পূরণ হবার নয়।
মো. আশরাফুল ইসলাম
কলামিস্ট
২ দিন ১৭ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে
৮ দিন ১১ ঘন্টা ৫৩ মিনিট আগে
৯ দিন ১১ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
১৩ দিন ২১ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে
১৬ দিন ৫ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
২২ দিন ১৭ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
২৩ দিন ১০ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
২৪ দিন ৭ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে