একমাত্র সরকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাৎক্ষণিক সেবা দিয়ে জয়পুরহাটের ক্ষেতলালে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করেছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স।
তবুও জনবান্ধব এ বাহিনীর নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের কর্মতৎপরতা এবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ক্ষেতলাল উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ারম্যান আবু রায়হান এর বিরুদ্ধে নিয়ম বহির্ভূত অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিন গুইসার) বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, যন্ত্রটির বাজারমূল্যের চারগুণ দামে বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেয়া, লাইসেন্স নবায়ন সহ অগ্নি নির্বাপক উপকরণ রিফিলে অতিরিক্ত ফি আদায় ও প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তার এসব কর্মকান্ডে ক্ষোভে ফুঁসছেন দোকানপাট, ক্লিনিক, জুয়েলার্স, সাইকেল স্টোর, হার্ডওয়ার ও কীটনাশক সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা।
গত এক বছরে এভাবেই উপজেলার বিভিন্ন ব্যক্তি প্রায় শতাধিক প্রতিষ্ঠারকে চড়া মূল্যে ৫ লিটার এবিসি অগ্নি-নির্বাপক সিলিন্ডার কিনতে হয়েছে ২৫০০ থেকে ৩২০০ টাকা দিয়ে। এছাড়াও প্রতি সিলিন্ডার রিফিলের স্বাভাবিক চার্জ ১২৫ -১৫০ টাকা হলেও এক্ষেত্রে আদায় করা হয়েছে ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এভাবেই লাখ লাখ টাকা লুটপাট করেছে ফায়ার সার্ভিসের অভিযুক্ত এই কর্মকর্তা। এনিয়ে ৬ জুন, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক ও জয়পুরহাট উপ-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এক ভুক্তভোগি।
উপজেলার ইটাখোলা বাজারের সাবেক স্কুল শিক্ষক ও দলিল লেখক সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির পাঠানো অভিযোগে জানানো হয়, বিধি ভেঙ্গে অভিযুক্ত রায়হান আলী ড্রাইভার ফায়ারম্যান অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে বিক্রি করছেন। নির্ধারিত চার্জের অতিরিক্ত টাকা নিয়ে রিফিলও করছেন। সরকারী গাড়ি ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত মোটরসাইকেল যোগে বিভিন্ন উপজেলার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, সাইকেল স্টোর, হার্ডওয়ার, কীটনাশক ডিলারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযুক্ত রায়হান আলী ও তার সহযোগী নিজেরাই যান এবং অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন আইন-২০০৩ এর আলোকে প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ক্রয়ের পরামর্শ দেন। রাজী না হলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানাসহ বিভিন্ন হয়রানির ভয়ভীতি দেখান। এতে করে বাধ্য হয়েই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র কেনেন তারা। ভুক্তভোগীর ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে এসব তথ্য উঠে এসেছে৷
অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধান শুরু করলে বেরিয়ে এসেছে গত কয়েক দিনে সেবার আড়ালে রমরমা ব্যবসার চিত্র। অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন আইন-২০০৩ এবং অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন বিধিমালা-২০১৪ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ফায়ার সার্ভিস অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে শুধু উদ্দীপনামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করবে। অথচ অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপন আইন-২০০৩ এর ১৯ থেকে ২১ ও ২৩ ধারা অনুযায়ী দাহ্যবস্তু সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, যাচাইকরণ, সংকোচন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাজে বাঁধাদান, শাস্তির বিধানসাপেক্ষে শাস্তি না দেয়া হলে শাস্তির ব্যবস্থাজনিত কারণে সর্বনিম্ন ১ থেকে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। মূলত এই ৪টি ধারার অপপ্রয়োগের মাধ্যমেই হাতিয়ে নেয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকা।
অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের আমদানী, সরবরাহ ও রিফিলকারী প্রতিষ্ঠান নিউটেক্স ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্টের মূল্য তালিকা অনুযায়ী ২.৫ কেজি, ৩ কেজি, ৪ কেজি, ৫ কেজি ও ৬ কেজির এবিসি সিলিন্ডারের মূল্য যথাক্রমে ৩৫০, ৫৫০, ৭০০, ৮৫০ ও ১০৫০ টাকা। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে প্রতিটি নির্বাপক যন্ত্রের রিফিল ব্যয় ওজনভেদে ১২৫ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। অথচ ক্ষেতলালের ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, ৫ কেজির সিলিন্ডারের দাম প্রকৃত দামের চেয়ে ৪ গুণ পর্যন্ত বেশী নেয়া হয়েছে।
এসব অভিযোগ যাচাইয়ে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক ও সাইকেল স্টোর হার্ডওয়ারের দোকান, চালের দোকান, কীটনাশকের দোকান গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়।
উপজেলার তুলসীগঙ্গা ইউনিয়নে মনঝার বাজারে ছামসুল সাইকেল স্টোরের মালিক ইয়াছিন বলেন, ‘ইটাখোলা ফায়ার সার্ভিসের দুইজন লোক এসে জানায়, অগ্নি নির্বাপক লাইসেন্স না থাকলে পরে করে নিবেন কিন্তু অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার না থাকলে আইনি জটিলতায় পড়বেন। বিভিন্ন ভয় দেখিয়ে একটা সিলিন্ডার পাঠিয়ে বলে ৩ হাজার দুইশত টাকা দিতে হবে। তবে এর প্রকৃত দাম কত আমি জানি না। আমি বাধ্য হয়ে ওই দামে তাদের কাছ থেকে কিনেছি। জুতার দোকানি করিম মিলিটারি তিনিও ২,৫০০ টাকায় একটি সিলিন্ডার কিনতে বাধ্য হয়েছেন৷ সুমন হার্ডওয়্যার তিনিও ২,৮০০ টাকায় একটি সিলিন্ডার নিয়েছেন৷ বেলাল, শামসুল, নাঈম সহ উপজেলার একাধিক ব্যক্তির কাছে সিলিন্ডার বিক্রি করেছেন ফায়ারম্যান ড্রাইভার রায়হান আলী।
এবিষয়ে অভিযুক্ত গাড়ীচালক রায়হান আলী সাংবাদিকদের বলেন, দোকান মালিকের অনুরোধে ১৫-২০টি সিলিন্ডার বিক্রি করেছি এরপর থেকে আর করব না।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের জয়পুরহাট উপ-পরিচালক সরিফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি ভালভাবে জেনে আপনাকে জানাচ্ছি। তবে ওই গাড়ীচালক নিজ দায়িত্বে সিলিন্ডার ক্রয় বিক্রয় করতে পারে না। ওই স্টেশনে দায়িত্বে থাকা ইন্সপেক্টর অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার কিনতে পরামর্শ দিতে পরে। এমন ঘটনা ঘটালে তদন্ত করে ওই চালকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
১ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
৭ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
৭ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
১১ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে