পিএসসির অধীনে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া পিএসসির অফিস সহকারী খলিলুর রহমানের (৩৮) অঢেল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে খলিলুর জানান, গত ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রশ্ন ফাঁস করে অনৈতিক পন্থায় নিয়োগ দিয়ে অন্তত ৫০-৬০ কোটি টাকা কামিয়েছেন।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, খলিলুরের সম্পদের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর মিরপুরের মধ্যপীরেরবাগের আলিশান ফ্ল্যাট, যার দাম অন্তত তিন কোটি টাকা। কয়েক মাস আগে নতুন এই ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। বাসার ইন্টেরিয়র ডিজাইনও ঝাঁ চকচকে। এর বাইরে ঢাকায় আরেকটি ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি।
তবে সম্প্রতি মধ্য পীরেরবাগের বাসায় উঠায় পুরনো ফ্ল্যাটটিতে আর থাকছেন না তিনি। মিরপুর ৬০ ফিটের পাকা মসজিদের সামনে পরমাগলির এই আধুনিক বাসা থেকেই গ্রেপ্তার হন খলিলুর।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, খলিলুরের বাড়ি যশোরের কেশবপুরের মঙ্গলকোট ইউনিয়নের পাচরাই ঘাগা গ্রামে। তার বাবা নিজাম গাজীও পিএসসির খুলনা শাখায় অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করতেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে খলিলুর বড়। বাবার কোটায় খলিলুর রহমান ও তার ভাই হাফিজুর রহমান চাকরি পান পিএসসিতে।
সূত্রটি আরও জানায়, খলিলুর যশোরের কেশবপুর ও রাজধানীর আশকোনা এলাকায় কিনেছেন বিপুল সম্পত্তি। মিরপুরে তার বাসায় গিয়ে তার বিলাসী জীবনযাপন দেখে চমকে উঠেছিলেন সিআইডি কর্মকর্তারাও। তার চলাফেরা বা গ্রামের বাড়ি দেখে কারও বোঝার উপায় ছিল না তার রাজধানীর মিরপুরের ৬০ ফিট এলাকায় রয়েছে আলিশান বাড়ি, ব্যাংক হিসাবেও রয়েছে কয়েক কোটি টাকা।
পাচরাই ঘাগা গ্রামে খলিলের পৈত্রিক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে টিনের একটি কুঁড়ে ঘর। ওই ঘরে বাস করেন খলিলের চাচা নিছার গাজী (৬৫), চাচি পারুল বেগম ও তাদের ছেলে সাকিব শায়া।
খলিলুর রহমানের স্বজনরা জানান, খুলনায় খলিলুর রহমানের মায়ের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমি রয়েছে। সেখানেও টিনের ছাউনির আধা পাকা বাড়ি আছে। খুলনার রায়ের মহল মোল্লা পাড়া রোডের ওই বাড়িতেই ছোট থেকে বড় হয়েছেন খলিলুর। বিয়ে করেছেন, তবে সন্তান নেই খলিলুরের। পড়াশোনা করেছেন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত। তারা বাবা-চাচাদের সর্বমোট জমি রয়েছে ২ বিঘা ৮৪ শতক। এই জমি এখনো ভাগ হয়নি।
পাড়া প্রতিবেশী ও স্বজনদের সামনে সবসময় সাধারণ জীবন যাপন করতেন। তাই তার স্বজনরা কেউ বিশ্বাসই করতে পারছেন না এতো সম্পদের মালিক হতে পারেন তিনি। তারা উল্টো বলছেন, খালিলকে ফাঁসানো হয়েছে।
খলিলের চাচা নিছার গাজী বলেন, খলিলের বাবা নিজাম গাজী অত্যন্ত সৎ মানুষ ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তবে স্বেচ্ছায় বীর মুক্তিযোদ্ধা পদবি নেননি। অল্প শিক্ষিত হলেও দেশ স্বাধীন হওয়ার পর খলিলের বাবা নিজাম গাজী তার সততার জোরে পিএসসি খুলনা শাখায় চাকরি পান।
প্রশ্নফাঁসের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিছার গাজী বলেন, খলিল এমন দুর্নীতি করতে পারে এটা আমার বিশ্বাস হয় না। খলিলের আচার-আচরণ ভালো। সে মাঝেমধ্যে আমার বাড়িতে আসত।
খলিল যদি দুর্নীতি করে তাহলে ওর পরিবারের অবস্থা এত খারাপ হবে কেন— এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ওর চাচাদের, মানে আমাদের অবস্থাও তো ভালো না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, খলিলুর রহমান বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করতেন। তবে তার চলাফেরা ছিল খুবই সাধারণ।
এর আগে ২০১২ সালে ৩৩তম বিসিএসের সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে খলিলুরের বিরুদ্ধে ঢাকার শাহবাগ থানায় মামলা হয়। ওই সময় তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারও করে র্যাব। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। একই সময় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়।
নাম প্রকাশ না করা সূত্রে পিএসসির একজন কর্মকর্তা বলেন, অনেক দৌড়ঝাঁপ করে খলিলুর মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে সফল হন। পরে ২০২২ সালের মার্চে মামলা ও বিভাগীয় মামলায় যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়। টানা ১০ বছর সাময়িক বরখাস্তের সময়ে তিনি বকেয়া বেতনভাতাও ফেরত পান।
১২ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ৩১ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
১৪ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
২২ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে