◾ মু. আকিব হোসাইন
বন্ধু বলতে সখা, মিত্র, সুহৃদ, স্বজন কিংবা প্রিয়জনকে বুঝায়। বন্ধুত্ব মানবজীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জীবন পথে চলতে বন্ধুত্বের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বন্ধু মানে জীবনের সহযোগী। সেই সহযোগী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ইসলামে রয়েছে বেশকিছু পদ্ধতি। যা একজন মুসলিমের জন্য অতি প্রয়োজনীয় বটে। সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও শরীয়া ভিত্তিতে জীবনযাপন করার পূর্বশর্ত হচ্ছে আমাদেরকে ভালো বন্ধু নির্বাচন করা। যিনি আপনাকে সর্বদা ভালো পথে চলতে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখবে। আপনাকে সর্বদা সৃষ্টিকর্তার প্রতি আকৃষ্ট করবে। নাস্তিকতা পরিহারে সহযোগিতা করবে। আমাদের চরিত্র, আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, চিন্তা-চেতনা, ভদ্রতা-সভ্যতা এসবকিছুতেই বন্ধুত্ব ব্যাপক পরিসরে প্রভাব বিস্তার করে। এটা সত্য যে, বন্ধুই বন্ধুকে এক পথ থেকে অন্য পথে টেনে নিয়ে যায়। হোক সেটা ভুল থেকে সঠিক পথে আনা ইত্যাদি।
সহীহ তিরমিযির এক বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন- ‘মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণা অনুসারে চলে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকেরই খেয়াল রাখা উচিত সে কার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে।’
তাছাড়াও সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত মূসা আশআরি (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) বলেছেন- ‘ভালো বন্ধু ও খারাপ বন্ধুর দৃষ্টান্ত হলো আতরওয়ালা ও কামারের হাপরের ন্যায়। আতরওয়ালার কাছে থাকলে হয়তো সে তোমাকে কিছু দান করবে কিংবা তার কাছ থেকে তুমি কিছু খরিদ করবে। আর কিছু না হলেও অন্তত তার কাছ থেকে আতরের সুবাস পাবে। আর কামারের হাপর তোমার কাপড় পুড়িয়ে দিবে কিংবা তুমি তার নিকট হতে পাবে দুর্গন্ধ।’
হযরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন- “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় কাউকে ভালোবাসে, আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় কারও সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায়-ই দান সদকা থেকে বিরত থাকে, সে ব্যক্তিই তার ইমান পরিপূর্ণ করেছে।”
অর্থাৎ আমাদের মানবজীবনে বন্ধু নির্বাচনে যেসব বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে সে-সম্পর্কেই উপরে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে বন্ধু নির্বাচনে আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। যেমন: বন্ধু কতটুকু ধর্মীয় নীতিবান, ইসলামের দৃষ্টিতে সে কতটুকু সঠিকভাবে চলছে, দ্বীনের প্রতি, আল্লাহ তায়া’লার প্রতি ও রাসূল (সা.)-এর সে কতটুকু ঈমান এনেছে ইত্যাদি। বন্ধুত্ব গ্রহণের পূর্বে যাচাই করে নিন সে কতটুকু সৎ, বিশ্বস্ত, নীতিবান, ধর্মপ্রাণ, পরহেজগার, বিচক্ষণ এবং সত্যবাদী। তার ধর্মে কর্মে আপনার ভালো কিছু বয়ে আনছে কিনা অথবা তার সঙ্গে বন্ধুত্বের মাধ্যমে আপনি মৃত্যুর পরবর্তী জীবনে কতটুকু সফল হবেন?
ইসলামের দৃষ্টিতে বন্ধু নির্বাচনে এমন বন্ধুদের যাচাই করে নিতে হবে যারা বিভিন্ন অপরাধ থেকে মুক্ত। নানান কুসংস্কার, অন্যায় কিংবা অসৎ পথ থেকে মুক্ত। আবার, বন্ধুত্ব হতে হবে সহযোগিতার। বিপদ-আপদে একে অপরের পাশে থাকার প্রবণতা থাকতে হবে। বন্ধু মানে বিপদের বন্ধু এটাই হবে মূলকথা। এছাড়াও বন্ধুত্বের বন্ধন সুদূঢ়করণে সচেষ্ট থাকতে হবে।
নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়া’লার নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য ধর্ম হলো ইসলাম। যুগে যুগে ইসলাম মানুষের কল্যাণ বয়ে এনেছে। দূর করেছে সকল ভেদাভেদ। তৈরি করেছে মুসলিম বিশ্বের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন। ইতঃপূর্বে অসংখ্য নবী-রাসূলগণ পৃথিবীতে এসেছেন। মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের শান্তির বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে মানবজাতিকে আহ্বান করেছেন। যারা সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন, তারাই দুনিয়া ও আখেরাতে পেয়েছেন অসীম সুখ, শান্তি ও মহান রবের নেয়ামত। বন্ধু নির্বাচনে ইসলামের নীতিমালা গ্রহণ করে জীবনকে আলোকিত করতে হবে।
ইহকালের বন্ধুত্বের মাধ্যমে যাতে আমাদের পরকালের শান্তি নিশ্চিত করে। কেয়ামতের দিন যাতে আপসোস করতে না হয় যে, দুনিয়াতে আমি কেমন বন্ধু নির্বাচন করেছিলাম? সুতরাং দুনিয়ায় আপনার বন্ধুত্ব সৃষ্টিতে ইসলামের নীতিমালা মেনে চলা সাপেক্ষে বন্ধু নির্বাচন করা অত্যন্ত জরুরি।
মু. আকিব হোসাইন
লেখক ও সংগঠক
১ দিন ৯ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
২ দিন ৯ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
৬ দিন ১৮ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৯ দিন ২ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে
১৫ দিন ১৪ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
১৬ দিন ৭ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১৭ দিন ৫ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
১৮ দিন ৬ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে