◾ সামসুজ্জামান: এখন প্রতিদিন পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশন, রেডিওর খবর এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ে ব্যাপক প্রচার চলছে। দিন দিন বেড়ে চলেছে মৃত্যুর মিছিল। এর ভয়াবহতা এবং প্রতিকারের সম্পূর্ণ ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে দিই সরকারের ওপর। এটা আমাদের সহজাত স্বভাব। নিজেরা প্রতিকারের বিন্দুমাত্র চেষ্টা না করে অন্যকে দায়ী করি। এ অভ্যাস যেন আমাদের শিরায় শিরায় মিশে গেছে। বেশি দিন আগের কথা নয়। কয়েক বছর পূর্বে হঠাৎ করে আফ্রিকা থেকে উড়ে এসে আমাদের দেশে বাসা বাঁধে ডেঙ্গু। অনেকটা করোনার মতো। চীন থেকে উড়ে এসে ধুমধাম করে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত করে স্থায়ী আবাস করে নিল আমাদের দেশে।
সারা বিশ্বে এর ভয়াবহতা এমন রূপ নিল যে প্রায় এককোটি মানুষের মৃত্যু হয়ে গেল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কঠোর হুঁশিয়ারিতে যেসব দেশ বিধি-নিষেধ মেনে চলেছে তহারা অল্প সময়েই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলো। কিন্তু আমরা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে কেবল সরকারকেই দোষারোপ করেছি বিধায় এত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ডেঙ্গু নিঃসন্দেহে একটি ঘাতক ব্যাধি। এর প্রসার ঘটে থাকে এডিস মশা থেকে। অত্যন্ত সৌখিন এডিস মশা জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে তাদের লাভা ছাড়ে। সেখান থেকে জন্ম নেয় আরও হাজার হাজার এডিস মশা। এই মশার কামড়েই আমরা ডেঙ্গু নামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হই। আমাদের সামান্য ভুলেই এই মশাকে আমরা বংশ বিস্তারে সাহায্য করে থাকি। এডিস মশার প্রাদুর্ভাব সাধারণত শহরভিত্তিক হবার অন্যতম কারণ হলো ছাদ বাগানে, ফুলের টবে জমে থাকা পানি।
যত্রতত্র ফেলে রাখা ডাবের খোল, মোটর গ্যারেজের পরিত্যক্ত টায়ারের জমে থাকা পানি, অপরিষ্কার নর্দমা এবং নির্মিত ভবন ও পরিত্যক্ত ভবনের যত্রতত্র জমে থাকা পানি। এসব জায়গায় এডিস নির্বিঘ্নে তার লার্ভা ছেড়ে থাকে। আমরা একটু সচেতন হলে এডিস দ্রুত তার বংশ বিস্তার করতে সক্ষম হয় না। এসব জায়গা পরিষ্কার রাখলেই এডিস তার বংশ বিস্তার করতে পারে না। অবশ্য এ ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরদারিত্ব প্রয়োজন। সময়মতো যথাস্থানে ঔষধ দিতে পারলে লার্ভা নষ্ট হয়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বর, কোনোভাবেই ছোঁয়াচে রোগ নয়। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া জ্বর থেকে আলাদা। এই ভাইরাস জ্বর অথবা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট ফ্লু, রেসপাইয়েটরি, সিনসাইয়েটিকলে) ও ব্যাকটেরিয়ার সাথেও হতে পারে।
২০১৯ সালে দেশে মারা যায় ১৬৪ জন। ২০২০ সালে ১৬৭ জন। এ বছর দেশের হাসপাতালগুলোতে দু হাজারের উপর রোগী ভর্তি আছে। গত দু বছরে মারা গেছে ৮১৮ জন। ঢাকাকেন্দ্রিক ডেঙ্গু এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রতিবেদন ’১৮ সালে মারা গেছে ২৬ জন, ২০০০ সালে ৯৩ জন, ২০০৮ সালে ১৬০ জন, ২০০৭ সালে ২৮ জন। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বিভাগ থেকে চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি। যার খেসারত দিতে হচ্ছে প্রাণহানি দিয়ে। ২০১৯ সালে মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু আজও আলোর মুখ দেখেনি।
মোদ্দাকথা, ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন ও মশা মুক্ত করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের এলাকা আমাদেরকেই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কারো মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না মনে রাখতে হবে সচেতনতা সৃষ্টিতে নাগরিক হিসাবে আমাদের দায় কম না। ডেঙ্গুর এই ভয়াবহতায় সবাইকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মুখাপেক্ষী না হয়ে তরুণদের নিজেদেরকেই নেমে পড়তে হবে নিজ নিজ এলাকা পরিষ্কার করতে। আমাদের নিজেদের সুরক্ষা নিজেদেরকেই করতে হবে। ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে নাক, মুখ ঢেকে রাখতে হবে। এ ছাড়াও সারা শরীর আবৃত রাখতে হবে। আমরা সতর্ক না হলে করোনার মতো ভয়াবহতায় পড়তে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট
১৪ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
৫ দিন ২ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
৬ দিন ২২ মিনিট আগে
১১ দিন ১৪ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
১৮ দিন ১৩ ঘন্টা ৩৩ মিনিট আগে
১৯ দিন ৪ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
১৯ দিন ৯ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
২৭ দিন ২৩ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে