◾আহাম্মদ উল্লাহ || ফারাক্কা নিয়ে সমস্যা চলমান স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই। রাজনৈতিক জাতাঁকলে পড়ে ফারাক্কা সংকট সমস্যা আলাপ আলোচনা গড়িয়ে দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে। ১৯৭৪ সালে ফারাক্কা ফিডার ক্যানেল মাত্র ৪১ দিনের জন্য পরিক্ষা মূলক চালু করা হয়েছিল। ৪১ দিন ৪১ বছরে গড়িয়ে গেছে, শুল্ক মৌসুমে নদীর পানিতে টান পড়েছে। তবুও পরিক্ষামূলক ফারাক্কার ৪১ দিন শেষ হয়নি৷ রাজনৈতিক ঘূর্ণিবতে ১৯৭৪ সালের ৪১ দিন ২০২৪ পর্যন্ত এসে গেছে, যা অতীত ও বর্তমান সর্বসময়ে বাংলাদেশের গলার কাঁটা হিসাবে ঝুলছে।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। অসংখ্য নদী ও তাদের শাখাপ্রশাখা জড়িয়ে রেখেছে এদেশের ভূমিকে। নদীবাহিত পলিমাটি এদেশের মাটিকে অনন্যা উর্বরতা দান করেছে।
আমাদের নদী মাছ সমৃদ্ধ এবং জমি গুলো ফসল উৎপাদন স্বর্গরাজ্য হিসাবে বিবেচিত। আগের মত সুদিন বর্তমানে ধ্বংসের দিকে। নদীর পানির চরম সংকট এবং গভীরতা কমে যাওয়ায় দেশের জনজীবন পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। নদীর গভীরতা হ্রাস পাওয়াতে শুকনো মৌসুমে নদীর চেহারা মৃত পশুর হাড়ের মত চেহারা হয়ে যায়। পানি শূন্য হয়ে স্থানে স্থানে চর জেগে উঠে । তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি হয় বন্যা। বাংলাদেশে বন্যা প্রাকৃতিক দূর্যোগ। প্রাকৃতিক দূর্যোগ সামাল নেওয়া যতটা না সহজ কৃত্রিম দূর্যোগ সামাল দেওয়া ততোধিক কঠিন। ভরা মৌসুমে ভারতের অতিরিক্ত পানির অংশ ছেড়ে দেওয়া হয় বাংলাদেশের দিকে। ফারাক্কা বাঁধ হয়ে অতিরিক্ত পানি দেশে প্রবেশ করলে নিম্নঅঞ্চল সহজে প্লাবিত হয়। ফসলি জমিন ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। কখনো সম্পূর্ণ জমি তলিয়ে যায় পানির নিচে।জলাবদ্ধতা কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়ছে।বন্যার পানিতে মাছের প্রজাতি প্রজনন এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর প্রজনন মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ ঘরবাড়ি, আশ্রয়স্থান, গবাদিপশু, সম্পদ হারিয়ে একপ্রকার নিঃস্ব হয়ে পড়ে। শেষ ভরসা আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়েও দূর্ভোগ পোহাতে হয়। জনসাধারণের জীবন হয়ে উঠে দূর্বিষহ।
ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত একটি অভ্যন্তরীণ জলবায়ু প্রকল্প। গঙ্গা নদীর উপর এই কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে পানি আটকে রাখার ফলে বাংলাদেশের জনজীবনের উপর মারাত্মক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে কয়েক দশক ধরে।
আগে যেখানে পদ্মার গভীরতা ছিল, সারাবছর পানিতে টলটলে ছিল এবং দেশের অন্যান্য নদী সচল অবস্থায় ছিল।সেখানে বর্তমানে বাংলাদেশের নদীর মরোমরো অবস্থা।
মূলত গঙ্গার পানি প্রবাহ অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণের কারণে পদ্মা, যমুনা ও অন্যান্য নদীগুলোর পানি প্রবাহে পরিবর্তন ঘটে থাকে। অর্থনৈতিক ভাবে বাংলাদেশ নদীর উপর নির্ভরশীল। মাছের বড় একটি অংশ থাকে নদীতে, জেলেরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এসব নদীর দিয়ে জীবিকা নির্বারহ করে থাকে।তাছাড়া ফারাক্কা প্রভাব নদীর পানির লবনণাক্তা বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির ইকোসিস্টেম মারাত্মক ভাবে বিপর্যস্থ।শুল্ক মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকে পানি শুকিয়ে যাওয়া মাছের প্রজননের জন্য হুমকিরূপ। পর্যান্ত পরিমাণ পানি না থাকায় মাছ উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে কৃষি জমির জন্য পানি সংকট দেখা যায়। ফসল উৎপাদন সংকীর্ণ হয়ে যায়।
বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর ফারাক্কা বাঁধের কুফল লিখিত আকারে শেষ করা সম্ভব না। কয়েকবার সরকার পরিবর্তন হলেও ফারাক্কা নিয়ে কাউকে জোড়ালো ভাবে পদক্ষেপ গ্রহন করতে লক্ষ্য করা যায় নি। ফারাক্কা অবস্থানে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। সংকট মোকাবিলা একপ্রকার উদাসিন বললেই চলে। নির্বাচন এগিয়ে আসলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি দল যে উদ্বেগ প্রকাশ করে, চিন্তার ভাজ কপালে পড়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর সে বিষয়টি নির্ভাবনাময় হয়ে যায়। সকল আলোচনা আমতা আমতা গড়িমসি পদক্ষেপ চলে। কঠোর অবস্থান এ যাবৎকার পর্যন্ত লক্ষ্য করা যায় নি। অথচ বাংলাদেশ ভবিষ্যৎ প্রশ্নে এই ইস্যু অতীত ও বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু।
দেশের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চল ইতিমধ্যে মরুকরণ হতে শুরু করেছে। রাজশাহী কোল ঘেঁষা পদ্মা নদী আর নেই। কয়েক দশকে নদীর অবস্থা মরো মরো। জায়গায় জায়গায় চর উঠে নদী ভরাটের মত অবস্থা হয়ে গেছে। নদীতে মাছ নেই, জেলেরা নৌকা দিয়ে জাল টেনে নিজেদের খাবারের মাছও যোগাড় করতে পারছেন না। অনেকে বাধ্য হয়ে বাপ দাদার এ পেশা পরিবর্তন করে আয়ের খোঁজে শহরমুখী হচ্ছে।
কেউ মুদির দোকান, ফেরিওয়ালা, কনস্ট্রাকশন লেবার মত পেশা বেছে নিচ্ছে জীবিকা নির্বাহের জন্য।
ফারাক্কা পানি বন্টনে গঙ্গা চুক্তি নামে ৩০টি চুক্তি ১৯৯৬ সালে সাক্ষরিত হয় দুইদেশের মাঝে। শুষ্ক মৌসুমে দুই-দেশে পানির সমতা বাজায় রাখা ছিল এ চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু ভারত বাংলাদেশকে পানি দেওয়ার কথা থাকলে শুষ্ক মৌসুমে তারা পানি দিচ্ছে না। আটকে রাখছে সব পানি। ভারত কেন পানি দিচ্ছে না তার কোনো সদ্দুত্তর ও গঠনমূলক জবানবন্দি নেই তাদের কাছে । ফলে উত্তরাঞ্চলের প্রায় সবকয়টি নদী শুকিয়ে গেছে। চর জেগে মরুভূমিতে রূপান্তর হয়েছে। আবার বর্ষা মৌসুমে বাঁধের অতিরিক্ত পানি ধারণক্ষমতার বাইরে থাকায় সেগুলো আমাদের দেশের অভিমুখে ছেড়ে দেওয়া হয়। কৃত্রিম বন্যা সৃষ্টি হয়ে যেমন নিম্নঅঞ্চল প্লাবিত হয়, নদীভাক্ষন হয়। নদীর গর্ভে বিলীন হয় আমাদের সম্পদ। আমাদের পদক্ষেপ দূর্বল এবং সরকারের তৎপরতা অভাবে একদিন আমরা উত্তরাঞ্চকে মরুভূমি হিসাবে ব্যবহার করতে পারবো। ভবিষ্যতে টাকা খরচ করে দূরদেশে গিয়ে মরুভূমি দেখার দরকার পড়বে না।
ফারাক্কা অভিশাপ অতীতের মত বর্তমানেও চিন্তার উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। চুক্তিমত কোনো কাজ হচ্ছে না। ভারত আমাদের থেকে ট্রানজিট সুবিধা, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার, কাঁচামালের সহজ প্রাপ্তি হিসাবে এ ভুমির দিকে বারবার সুবিধাভোগ করে যাচ্ছে। অথচ এর বিনিময়ে আমরা কিছুই পাচ্ছি না। বাংলাদেশ ভবিষ্যৎ প্রশ্নে আরো একবার সর্তক হতে হবে।নদী আমাদের প্রাণপুরুষ। নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে,দেশের অর্থনীতি উন্নত হবে। নদীর উপর নির্ভর করেই আমাদের ফসল হয়, মাছ উৎপাদন হয়, জীবিকা নির্বাহের পথ খুলে।ফারাক্কা সমস্যা সমাধান না করা গেলে নদী হারিয়ে ফেলবে বাংলাদেশ। নদী বিলীন হলে অদূরভবিষ্যতে বাংলাদেশের অস্ত্বিত্ব থাকলে কিনা সন্দেহ।
• লেখক : আহাম্মদ উল্লাহ
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ।
১ দিন ৪ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
১ দিন ৪ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
৫ দিন ৩ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে
৫ দিন ১১ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
৬ দিন ২১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
৭ দিন ৮ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
৯ দিন ২ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
৯ দিন ১৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে