সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ভারতীয় মিডিয়ার উৎসারিত এক তীব্র তথ্যযুদ্ধের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের ‘রিপাবলিক বাংলা’ এবং ‘এবিপি আনন্দ’সহ বেশকিছু গণমাধ্যম। ভারত হলুদ সাংবাদিকতায় গিনেজ রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে ভারত। মিথ্যা বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণায় বাংলাদেশের সুনাম রক্ষা সেইসঙ্গে মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই করার চ্যালেঞ্জ ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। সীমিত সম্পদের কারণে এই কাজ করা আমাদের জন্য আরো কঠিন হয়ে পড়ছে। তারপরও এই সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমাদের পক্ষে বুদ্ধিদীপ্ত ও সাশ্রয়ী কৌশল গ্রহণ করা সম্ভব, যা এই সংকট মোকাবেলায় সহায়তা করতে পারে। যার মধ্যে রয়েছে বিদ্যমান সম্পদকে কার্যকরভাবে ব্যবহার, কৌশলগত অংশীদারিত্ব তৈরি, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি। বাংলাদেশ অনেকে ক্ষেত্রে ভারতের উপর নির্ভরশীল তাই দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা তৈরিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
আমার মনে হয়, আমাদের এবং ভারতীয়দের মাঝে পার্থক্য হলো, আমাদের মিডিয়া কোনো মিথ্যা তথ্য ছড়ালে আমরা মিডিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিই। আর তারা মিডিয়ার পাশে দাঁড়ায়। তাই যেভাবেই হোক ভারতের মিডিয়ার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা প্রতিরোধের কৌশল অবলম্বন করে তা প্রতিহত করতে হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এই ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার গুরুত্ব এবং শিক্ষাগুলো অনুধাবন করতে পারি। সেগুলো নিচে বর্ণনা করা হলো। পুলওয়ামা হামলা এবং পরবর্তী সামরিক উত্তেজনার সময় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তথ্যযুদ্ধের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দেখা যায়। পুলওয়ামা হামলায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় চল্লিশ জন ভারতীয় আধাসামরিক সদস্য নিহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত দাবি করে যে তারা পাকিস্তানের বালাকোটে সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণ শিবিরে বিমান হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তান এই হামলার গুরুত্ব অস্বীকার করে পাল্টা প্রমাণ হাজির করে এবং ভারতের দাবি মিথ্যা বলে প্রচার করে। উভয় দেশ তাদের নিজস্ব মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জনমত গঠনের চেষ্টা করে এবং তাদের কর্মপন্থাকে বৈধ প্রমাণ করার চেষ্টা করে।
আমরা এই উদাহরণ থেকে শিখতে পারে কীভাবে সংকটের সময়ে দ্রুত ও যাচাইযোগ্য তথ্য প্রকাশ করে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার জবাব দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং কোভিড-১৯ মহামারির উৎস নিয়ে চলমান তথ্যযুদ্ধ আরেকটি উদাহরণ হতে পারে। কারণ কোভিড-১৯ এর প্রথম দিকে ভাইরাসের উৎপত্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দোষারোপ এবং প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এবং কিছু মিডিয়া চীনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে সেইসাথে চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করে যুক্তরাষ্ট্রকে বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগ তোলে। উভয় পক্ষ কূটনৈতিক চ্যানেল, সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্রেস রিলিজের মাধ্যমে তাদের অবস্থান তুলে ধরে।এই উদাহরণ থেকে আমরা শিখতে পারে কীভাবে আন্তর্জাতিক উত্তেজনার সময়ে দ্রুত এবং সঠিক তথ্য প্রকাশ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাংলাদেশ এমতবস্থায় কীভাবে এই তথ্যযুদ্ধের মোকাবেলা করবে এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে নিজেদের ভাবমূর্তি রক্ষা করবে তা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশকে তথ্যযুদ্ধ মোকাবেলায় প্রতিক্রিয়া জানানোর পাশাপাশি নিজেরদের বর্ণনা আগে থেকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করা করতে হবে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের গৌরবগাথা তুলে ধরে বৈচিত্র্য, সহনশীলতা এবং মানবাধিকারের বার্তা প্রচার করতে হবে। তাহলে ভারতীয় মিথ্যা প্রতিহত করা যাবে।
বাংলাদেশ ডিজিটাল কূটনীতি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারে। ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বাংলাদেশ তাদের সত্য তথ্য এবং ভারতের মিথ্যা তথ্য সরাসরি হাজার-হাজার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারে।
এই মূহুর্তে বাংলাদেশি প্রবাসীরা একটি শক্তিশালী সম্পদ। তারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটিগুলো সঠিক তথ্য প্রচার এবং দেশের ইতিবাচক দিক তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশে একটি ইংলিশ টিভি চ্যানেল প্রয়োজন যার মাধ্যমে আমাদের সত্য এবং ভারতীয় মিথ্যা কে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা যাবে৷ সেইসঙ্গে অমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ভারতীয় অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত আমাদের নতুন বাংলাদেশের বস্তুনিষ্ঠ তথ্য প্রকাশের মাধ্যমেই ভারতীয় বিদ্বেষমূলক, বানোয়াট অপতথ্যের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব। তাই আসুন জনসচেতনতা সৃষ্টি করি এবং মিথ্যাকে প্রতিহত করি।
সাকিবুল হাছান
Sakibulhasanlearning@gmail.com
৯ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে
২ দিন ১৪ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে
২ দিন ১৪ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
৬ দিন ১৩ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
৬ দিন ২১ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে
৮ দিন ৭ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
৮ দিন ১৮ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে
১০ দিন ১১ ঘন্টা ৫৬ মিনিট আগে