বেগমগঞ্জে সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাশের মিছিল আর দেখতে চায় না দেশবাসী: জামায়াত আমির নন্দীগ্রামে ওয়ার্ড জামায়াতের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরাতে সব ধরনের কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার: প্রেস সচিব প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে বাধ্যতামূলক ছুটিতে কুবি শিক্ষক কাজী আনিছ নন্দীগ্রামে গণহত্যা ও স্বাধীনতা দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা কুবিতে শাহবাগ ও পতিত স্বৈরাচারের দ্রুত বিচারের দাবিতে মানববন্ধন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন মাহমুদউল্লাহ কুবিতে উত্তরবঙ্গ ছাত্র পরিষদের ইফতার মাহফিল কুবি বিএনসিসি প্লাটুনের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত কুবিতে মার্কেটিং বিভাগের ইফতার ও দোয়া মাহফিল সংস্কার করে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিতে হবেঃ মোংলায় বিএনপি নেতা কৃষিবিদ শামীমুরমুরমুর রহমান ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে বিজিবি বিএসএফ’র পতাকা বৈঠকে দুই বাংলাদশী নাগরিককে হস্তান্তর শৈলকুপায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ২০ জন আহত ঝিনাইদহে ধর্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুবি) রোভার স্কাউটের নতুন কমিটি ঘোষণা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে বাজারের ইজারা নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত-১২ আহত নোয়াখালীতে দেশব্যাপী নারী-শিশু ধর্ষণসহ সহিংসতার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কুলিয়ারচরে বিদ্যুৎপিষ্ট হয়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু, আহত-২ পীরগাছায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সম্মানে জামায়াতের ইফতার মাহফিল

সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হোক

সাকিবুল হাসান - প্রতিনিধি

প্রকাশের সময়: 28-12-2024 03:36:06 am

গতকাল আব্দুল্লাহপুর, কেরানীগঞ্জ টোল প্লাজায় বাইকের পেছনে ছিল এক ভদ্রলোকের স্ত্রী আর সাত বছরের সন্তান। টাকা দেওয়ার সময় সন্তান বাবার কাছে আবদার করে, ‘বাবা আমি টাকা দিবো।’ বাবা সন্তানের হাতে টাকা দেয়! ঠিক তখনই পেছন থেকে ছুটে আসা দ্রুত গতির বাস সবকিছু স্তব্ধ করে দেয়। কাকতালীয় ভাবে ঐ বাবা বেঁচে গেলেও, তার চোখের সামনে মারা যায় স্ত্রী আর সন্তান। ভদ্রলোক ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে বললেন, ‘আমি তাকিয়ে দেখি আমার সন্তানের মাথার উপর দিয়ে বাসের চাকা চলে গেছে। আমার সন্তানের চোখ বেরিয়ে এসেছে , আর আমার বিবিকে চাকার সাথে বিঁধে টেনে নিয়ে গেছে।’ সড়কে এভাবে মৃত্যুর মিছিল কবে বন্ধ হবে? কবে আমরা সচেতন হতে পারবো তার কোনো উত্তর আছে কি? একটি দুর্ঘটনা বয়ে নিয়ে আসে সারাজীবনের কান্না। অথচ সেই দুর্ঘটনাই ঘটছে অহরহ, অবিরত। দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়েই চলছে। প্রতিদিন রক্তাক্ত হচ্ছে সড়ক। ঝরছে অসংখ্য প্রাণ। প্রতিদিন টিভি বা পত্রিকার পাতা উল্টালে অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনার খবর চোখে পড়ে। দুর্ঘটনা রোধে আইনকানুন ও বিভিন্ন বিধিনিষেধ থাকলেও তা প্রতিরোধ করা সম্ভর হচ্ছে না। বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী , দেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৫ জন সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান এবং প্রতি বছর গড়ে ২৪ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় এক বছরে ৩ লক্ষের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির জরিপ অনুযায়ী , গত ১০ বছরে দেশে ৬০ হাজার ৯৮০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাতে ১ লক্ষ ৫ হাজার ৩৩৮ জন নিহত এবং ১ লক্ষ ৪৯ হাজার ৮৪৭ জন আহত হয়েছে। এভাবে আর কত! কবে বন্ধ হবে সড়কের মৃত্যুর মিছিল! চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এক হাজার ৪৬৪ টি সড়ক দুর্ঘটনায় এক হাজার ৩৬৭ জন নিহত ও এক হাজার ৭৭৮ জন আহত হয়েছেন। ২০২৩ সালের প্রথম তিন মাসে দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৭টি এবং এতে এক হাজার ৫১ জন নিহত ও এক হাজার ৪৪০ জন আহত হন। সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য নিয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে বিআরটিএ প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ শুরু করে। বিআরটিএ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসে ২১৪ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩১ জন নিহত হয় এবং ২৮৩ জন আহত হয়। এভাবে বেড়েই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনায় এবং মৃত্যুর হাহাকার। কিন্তু কোন কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে! সরকারি তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে প্রতিদিন গড়ে ৬৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। এছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধের সিদ্ধান্ত অমান্য করা, অদক্ষ চালক ও হেলপার দিয়ে যানবাহন চালানো, চালকরা অনেক সময় ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত অবস্থায় গাড়ি চালায়। ফলে একসময় নিজের অজান্তেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। সড়ক দুর্ঘটনার নানাবিধ কারণ রয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ গাড়ি চালকদের বেপরোয়া মনোভাব। গাড়ি চালকরা যখন গাড়ির স্টিয়ারিংটা ধরেন তখন তারা নিজেদেরকে রাজা ভাবেন। গতির নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকা সত্বেও তারা তা মানতে নারাজ। কেউ কেউ তো আছে যারা মদ পান করেই গাড়ি চালান। ফলে জরুরি অবস্থায় তাৎক্ষণিকভাবে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না তাদের পক্ষে। গতকালের আব্দুল্লাহপুর, কেরানীগঞ্জ টোল প্লাজার মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় বলে দেয় ড্রাইভার দের এমন চিত্র। আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে রাস্তায় গাড়ি চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা দেখা যায় এই কারণেও ঘটে অনেক সড়ক দুর্ঘটনা এবং ফলস্বরূপ মৃত্যু। আমার মনে হয় আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হওয়ার ফলেও বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। তবে কয়জনেই বা আইন মানে! পথচারী কিংবা চালক কেউই মানতে চায় না আইন। এভাবেই নীরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন শতশত মানুষ। এই দায়ভার কাদের! আর কত প্রাণ শেষ হলে আমরা সতর্ক হবো। প্রতিনিয়ত সড়ক রক্তাক্ত হচ্ছে কেন! বাংলাদেশে একটি কমন বিষয় হচ্ছে, যেখানেসেখানে গাড়ি পার্কিং করা। অনেক মানুষ আছে যারা গাড়ি কিনে টাকার জন্য ভাড়া দেয়। কিন্তু যে গাড়ি টি নিয়ে যায় সে অদক্ষ, মাদকাসক্ত, অপ্রাপ্তবয়স্ক হতে পারে। সেক্ষেত্রে চালকের মাথায় একটি কথায় ঘুরপাক খায়, প্রথমে মালিকের টাকা পরিশোধ করা তারপর নিজের জন্য আয়৷ এই কারণে স্বাভাবিকভাবেই তারা বেপরোয়া হয়ে পড়ে। এভাবেও অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। তবে আমরা সড়কে আর মৃত্যু দেখতে চাই না। এজন্য সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। সেক্ষেত্রে, সিট বেল্ট বাঁধাতে হবে। নিরাপদ ড্রাইভিংয়ের জন্য মনোযোগ থাকতে হবে। একটু অমনোযোগী ড্রাইভিংয়ের কারণে ঘটতে পারে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। অদক্ষ চালক দিয়ে গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। কারণ বেশি দুর্ঘটনা ঘটে থাকে অদক্ষ চালকের জন্য। হুটহাট গাড়ির গতি বাড়ানো বা কমানোর ফলে বড় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অনেক সময় ওভারটেকিং করার জন্য প্রতিযোগিতা করে অনেক ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে থাকেন। এটি সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। প্রত্যেকটি গাড়ির দুটি লুকিং গ্লাস থাকতে হবে। গাড়ি চালানোর সময় অনেক চালক নেশাগ্রস্ত থাকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। আমাদের দেশের বেশির ভাগ পাবলিক বাসের  দুর্ঘটনার কারণ নেশাগ্রস্ত চালক। তাই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে। সড়ক পরিবহন আইনের ৮৪ ধারায় অবৈধভাবে মোটরযানের আকৃতি পরিবর্তনে শাস্তির কথা বলা হয়েছে, ৯৮ নম্বর ধারায় ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালানোর শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ১০৫ নম্বর ধারায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটুকু কার্যকর! সড়ক পরিবহন আইন এর পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তবে অনেকক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অসতর্কতা এবং অসচেতনতার জন্য দূর্ঘটনা ঘটে থাকে। তাই শুধু আইনের বাস্তবায়ন নয় নাগরিকদের সচেতনতা সেইসঙ্গে কর্তৃপক্ষ,চালক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।আমাদের মনে রাখা উচিত,সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। সাকিবুল হাছান সমাজবিজ্ঞান বিভাগ ঢাকা কলেজ,ঢাকা sakibulhasanlearning@gmail.com

Tag