কেমন যাচ্ছে এখনকার শিশুদের শৈশব
শৈশব মানে হাসি আনন্দে মাতানো ভোর,রাজ্য জয়ের গান।শৈশব মানে কাদায় মাখামাখি, মনোহারিতা পাখির কলতান। শৈশব হচ্ছে হৈ হুল্লোড় করে কাটানো বেলা,মায়ের রাগিণী চোখ, মমতার পেয়ালা। কবিতার মতো শৈশব এক সোনালি ফুটেজ। সব হারিয়ে ফেললেও যার সুর ব্যক্তি হৃদয়ে রয়ে যায় জীবনের ক্রান্তিলগ্নের শেষ প্রহরেও। জীবনের ঐ মুহূর্তটা যখন আসে তখন কেউ বুঝতে পারে না,কি যে মোহময় জীবন পার করছে।
বেশি দিন আগের কথা নয়,একটু পিছন ফিরে তাকালেই দেখা যায়। যাঁদের নব্বইয়ের দশকে বা তারও পূর্বে জন্ম তাঁরা পেয়েছেন রং মাখানো সোনালি শৈশব। এমনকি যাদের জন্ম ২০০০ সালের শুরুর দিকে তারাও এর কিছুটা অংশ উপভোগ করতে পেরেছে। আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে দিনে দিনে মানুষের জীবনযাত্রার মান বিকশিত হচ্ছে। প্রতিটি ভোরেই যেন মানুষ যান্ত্রিক হয়ে উঠছে। চলছে নানা রকম প্রতিযোগিতা। গ্রামগঞ্জেও মিলছে আধুনিকতার ছোঁয়া। বিজ্ঞানের কল্যাণকর প্রযুক্তির হচ্ছে সঠিক ব্যবহার, অপরদিকে এর অপব্যবহারের দিকেও কম নয়। আজকাল দেখা যায় একটি শিশুর শৈশবটাই শুরু হয় যান্ত্রিকতার মাঝে। সকাল হতে না হতেই শিশুটি দুষ্টুমি শুরু করে বা কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। বাবা মা এই যুগের মানুষ, কান্না থামাতে হাতে কার্টুন বা তার পছন্দমতো ভিডিও চালু করে ডিভাইসটি ধরিয়ে দিয়ে নিজের গৃহস্থ কাজকর্ম সামলান। পরে বাচ্চার অন্য সকল কাজ করেন। কথাটা দুঃখজনক হলেও সত্যি। অনেকের মুখে শুনতে পাওয়া যায়, তাদের শিশুরা ফোনের ভিডিও না দেখালে খেতেই চায় না। অনেক শিশু কিশোরা স্কুল শেষে স্মার্টফোন / ডিভাইস হাতে বসে যায় অনলাইন গেমসে। যখন তাদের হৈ হুল্লোড় করে হাসি আনন্দে কাটিয়ে বিকশিত হওয়ার সময়,তখন তাদের এই বিপর্যয়। যুগের পরিবর্তনে হয়তো তাদের মুখে শুনা যাবে এ যুগ টাই তাদের সুবর্ণ শৈশব।
বলছিলাম গ্রামীণ জনপদের বর্তমান প্রজন্মের শৈশবের কথা। প্রকৃতির ছয়টি ঋতুই ছিল অনন্য। গ্রীষ্মের দাবদাহে ঘামে ভেজা হাতে বই নিয়ে স্কুলের বারান্দায় দাঁড়ানো, আবার বাদলায় কলা পাতা মাথায় দিয়ে কাদা মাখানো শরীরে বাড়ি ফেরা, বিকেলে মাঠে গোল্লাছুট,বউচি,কানামাছি আরও কতো রকমের খেলার আয়োজন। সবমিলিয়ে দিনটা কখন যে ফুরিয়ে যায় বুঝতেই পারে না শিশুরা। শরতের আকাশের নানান বাহার,হঠাৎ বৃষ্টি আবার ঝকঝকে রোদ। হেমন্তের আগমনে গেরুয়া হলুদ ধান,নবান্ন উৎসব নানান আয়োজনে মেতে থাকতো গ্রামীণ মানুষ। শেষ বিকেলে গায়ে শীত অনুভব।এই তো বুঝি শীতের আগমনী বার্তা।
মায়ের চোখ রাঙানো ডাক এই তোরা ওঠ, সকাল হয়েছে কখন, খেয়াল আছে। বাটিতে মুড়ি গুড় রাখা আছে খেয়ে মক্তবে যা/ পড়তে বস। গুটিগুটি পায়ে, গায়ে চাদর মুড়িয়ে হাতে কায়দা,আমপারা নিয়ে মক্তবে যাওয়া। পথে কোন গাছের জলপাই বা অন্য কোনো ফল পড়েছে কিনা পাল্লা দিয়ে খুঁজাখুঁজি করা। বাড়ি ফিরে শীতের পিঠা পায়েস খাওয়া আবার কখনো কখনো দু-মুঠো করে চাল দিয়ে সব ছেলেমেয়ে একসাথে রান্না করে খাওয়া,একসাথে লাকড়ি কুড়ানোর আনন্দ ভুলে যাওয়ার মতো নয়। পত্র ঝরা বিকেলে একটু খুনসুটি, ঝগড়া-বিবাদ তাদের মাঝে বড় কেউ মিটিয়ে দেওয়া। দখিনা বাতাসে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, নানান রকম ফুল সংগ্রহ করা, খড় কুটার ঘর বানানো,ধুলোবালি দিয়ে রাজ প্রাসাদ তৈরি করা, কত কি আয়োজন! বলে শেষ করার নয়।এ যেন এক রঙিন সূর্যোদয়। এখন বৈকি কিছুকাল পর শিশু কিশোররা তাদের দাদা-দাদি /নানা -নানিদের মুখ থেকে তাঁদের পুরনো দিনের শৈশব চিত্রের শুনে কোনো রূপকথার গল্প মনে করবে। গ্রাম্য সোনালি শৈশব স্মৃতির দৃশ্য কালের গহ্বরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ উন্মোচনের জন্য আমাদের সর্বস্তরের মানুষকে সদা সচেতনমূলক দৃষ্টি রাখতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে শিশু কিশোরা কার সাথে মিশছে,কোথায় যাচ্ছে কি করছে। আধুনিক যুগের তালে মিশে ভালোকিছুর পরিবর্তে খারাপ কিছুতে জড়াচ্ছে কিনা। শিশু কিশোরদের সুন্দর ভবিষ্যতে গড়তে বাবা মার পাশাপাশি পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। "যেমন গাছ লাগাবেন, তেমন ফল পাবেন।" মনে রাখতে হবে একটি বিখ্যাত উক্তি -"আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।"
সজিব হোসেন
বাংলা বিভাগ
শিক্ষার্থী,ঢাকা কলেজ।