ধর্ষণ সমাজ জীবনে এক জঘন্যতম পাপাচার। জিনা-ব্যভিচার সমাজের এক বিধ্বংসী সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। খুবই উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সারা দেশে একের পর এক ভয়াবহ নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে। নরপশুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না শিশু গৃহবধু, বয়োবৃদ্ধ কেউই। যা দেশে নারীর সামাজিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। ধর্ষণ ও নারীর প্রতি সহিংসতা নিয়ে তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা তুলে ধরছেন- দৈনিক দেশচিত্র'র প্রতিনিধি সাকিবুল হাছান ।
◾নারীরা আজ কোথায় শক্তিশালী?
"নারী শক্তি", "নারী ক্ষমতায়ন" - এমন শব্দবন্ধ বড় বড় সেমিনারে, আলোচনা সভায় আমরা প্রায়ই শুনি। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? আজকের বাংলাদেশে নারীরা কি সত্যিই শক্তিশালী? উন্নয়নের পরিসংখ্যান ও গল্পের আড়ালে চাপা পড়ে যাওয়া বাস্তবতার দিকে তাকালেই বিষয়টি পানির মতো পরিষ্কার! আজকের বাংলাদেশে কোন বয়সের নারীই নিরাপদ নয়। শিশু থেকে বৃদ্ধা- কেউই ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, শারীরিক নির্যাতন থেকে মুক্ত নয়। রাস্তাঘাট, পরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্র - কোথায় নারীরা নিরাপদ? সন্ধ্যার পর বাড়ি ফেরা, একা ভ্রমণ, নিজের ইচ্ছামতো পোশাক - এসব কি আজও নারীদের জন্য স্বাভাবিক? নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বেশ কিছু আইন থাকা সত্ত্বেও প্রয়োগ কতটুকু? অভিযোগ দায়ের করতে গেলে পুলিশ স্টেশনে নারীদের লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়। বিচার প্রক্রিয়া এতই দীর্ঘ যে, অধিকাংশ ভুক্তভোগী বিচার চাইতেই ভয় পায়।গার্মেন্টস শিল্পে ৮০% নারীর অংশগ্রহণ, শিক্ষাক্ষেত্রে নারীদের অগ্রণী ভূমিকা,খেলাধূলায় নারীদের জয়- বিষয়গুলো গর্বের হলেও ৮ বছরের কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়! তাই, শুধু উন্নয়নের পরিসংখ্যান নিয়ে গর্ব না করে, বাস্তব অবস্থা মোকাবেলায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। নারীদের শক্তিশালী হতে সাহায্য করতে হবে ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সকলের সম্মিলিত অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।
• লেখক : ফারহানা আফসার মৌরী,
শিক্ষার্থী, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।
•••
◾প্রয়োজন সঠিক সামাজীকিকরণ
ধর্ষণ কেবল একটি ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, এটি একটি সামাজিক ব্যাধি, যা পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা, লিঙ্গ বৈষম্য, বিকৃত পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আইনের দুর্বল প্রয়োগের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের সমাজের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে, কারণ এটি একজন ব্যক্তির মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।সমাজে এমন একটি পরিস্থিতি বিরাজ করে, যেখানে ধর্ষণকে লঘু করে দেখানো হয়, ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করা হয় এবং অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। যেমন গণমাধ্যম, চলচ্চিত্র ও সাহিত্যেও নারীদের প্রায়ই বস্তু হিসেবে উপস্থাপন করা হয়, যা ধর্ষণের সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।ধর্ষণের পেছনে আরও অনেক সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্ত্বিক কারণ কাজ করে। তবে ধর্ষণ প্রতিরোধে শুধুমাত্র আইন তৈরি করা যথেষ্ট নয়; সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করাও আবশ্যক। এর জন্য রাজ্যের তরফ থেকে শিক্ষার প্রসার, নারীর ক্ষমতায়ন, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং সংস্কৃতির পরিবর্তন জরুরি।ধর্ষণ কেবল একটি অপরাধ নয়, এটি একটি সামাজিক ব্যাধি যা সমাজের গভীর অসাম্য ও বৈষম্যের প্রতিফলন। সুতরাং সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ নিশ্চিত করলেই ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধ নির্মূল করা সম্ভব হবে।
• লেখক : রাকিব হাসান
শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা কলেজ
•••
◾ধর্ষণের শাস্তি দ্রুত নিশ্চিত হোক
বর্তমানে দেশের অবস্থা এমন যে,চোখ খুললেই ধর্ষণের নিউজ এবং নারীর প্রতি সহিংসতা ভেসে আসে। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে পত্র পত্রিকা সবখানেই একটাই হাহাকার। এই সমাজ, রাষ্ট্রে কি নারীর নিরাপত্তা বলে কিছু থাকবে না?কোরআন ও হাদিসে ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।কুরআনে ব্যভিচার বা জিনা সম্পর্কে অনেক আয়াত রয়েছে:- সূরা আন নূর:-" ব্যভিচারিণী নারী ও পুরুষ তাদের প্রত্যেককে ১০০ করে বেত্রাঘাত কর।যদি তোমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হও,তবে আল্লাহর বিধান কার্যকর করার সময় তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদের অভিভূত না করে আর মুমিনদের দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে"(২৪:২) ধর্ষণের শিকার নারী নির্দোষ আর ধর্ষক অপরাধী। (সুনান আবু দাউদ)
ইসলামে ধর্ষকের জন্য মৃত্যুদন্ডসহ বিভিন্ন শাস্তির বিধান রয়েছে। যা অপরাধের ধরণ ও গুরুত্বের ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে ধর্ষণের কারণে মাগুরার আট বছর বয়সী শিশু আছিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিএমএইচ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে।যা ছিলো অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা।ধর্ষকের বিচার হওয়ার আগে অবুজ শিশুটি মারা যায়,যার জন্য আমরা লজ্জিত। সুষ্ঠু এবং ন্যায়বিচার না হলে এভাবে অনেক নিষ্পাপ আছিয়া-কে আমরা প্রতিনিয়ত হারাচ্ছি এবং হারাবো। আমি মনে করছি,ধর্ষণের মামলার দ্রুত বিচার হওয়া উচিত। যাতে ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার পান এবং অপরাধী তার পাপের জন্য যথাযোগ্য শাস্তি পায়। ধর্ষণের বিচারকার্য যথাযথভাবে পরিচালনা করা হলে এই ঘৃণ্যতম অপরাধের পুনরাবৃত্তি আর হবে না।
• লেখক : আনিকা আকতার
শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
চট্টগ্রাম কলেজ
•••
◾ধর্ষক কারো বাপ-ভাই না ,নরপশু
১৯৯৮ সালে ১০০ জন ছাত্রীকে ধর্ষণ করে মিষ্টি বিতরণ, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এর ভিতর তনুকে ধর্ষণ করে হত্যা, বানারীপাড়ায় ২০১৮ সালে মা-মেয়েকে ধর্ষণ, গাজীপুরে তিন বছরের শিশুর যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে ধর্ষণ, এখন ৮ বছরের শিশু আছিয়ার করুণ মৃত্যু। এভাবে কত ধর্ষণ হচ্ছে তার হিসাব রাখতে গেলে খাতা ফুরিয়ে যাবে। ধর্ষকরা জেলে গেলেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আবারো সুযোগ খুঁজে। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমগুলোতে একের পর এক ধর্ষণের খবর শুনে একজন নারী হিসেবে আমি শঙ্কিত ও ভীত। দ্বিধাহীনভাবে সত্য বাংলাদেশে শিশু থেকে বৃদ্ধা জানোয়াররূপী পুরুষের হিংস্রতার শিকার হচ্ছে। আমার বোন- মা-মেয়ে হাসপাতালের মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করবে আর আমার টাকায় ধর্ষক জেলে বসে আরামে কাটাবে তা মেনে নিতে পারবো না। ধর্ষণের শিকার নারীকে হাসপাতাল নেওয়ার সাথে সাথে ধর্ষককে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। আইন ব্যবস্থা শক্ত করা, ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, নৈতিক মূল্যবোধের চর্চা সমাজে ধর্ষণের মতো ভয়ংকর অপরাধ কমানো সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস করি। সমাজ যাতে অন্ধকারযুগে আবার পতিত না হয় সেটা লক্ষ্য রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ।
• লেখক : কাকলী আক্তার
শিক্ষার্থী,
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ
৬ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
১ দিন ১৭ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে
২ দিন ২২ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
৫ দিন ৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
৫ দিন ৩ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
৯ দিন ২ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
৯ দিন ১০ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
১০ দিন ২০ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে