গনমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা,গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার হুমকি
দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, চোরাকারবারিসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে চলেছে, যা প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় উঠে আসে। এরই সঙ্গে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা। সাংবাদিকদের ওপর হামলা কেবল একজন ব্যক্তির ওপর আক্রমণ নয়; এটি গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতার বিরুদ্ধে ভয়াবহ হুমকি। স্বাধীন সাংবাদিকতা ছাড়া কোনো সমাজই সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারে না। কারণ এটি সত্য উদঘাটন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জনসাধারণকে সঠিক তথ্যপ্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতিনিয়ত প্রশ্ন জাগছে কেন সাংবাদিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন? রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, আইনের দুর্বল প্রয়োগ, ধর্মীয় বা সামাজিক সংবেদনশীলতা, বাণিজ্যিক স্বার্থ—এসব কারণে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় কিছু স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী নিজেদের দুর্নীতি, অপরাধ বা অন্যায় কর্মকাণ্ড ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় সাংবাদিকদের টার্গেট করে। এছাড়া রাজনৈতিক দল বা নেতাদের সমালোচনা করা কিংবা কোনো ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করলেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা হয়। উগ্র গোষ্ঠীগুলো সহিংসতা চালিয়ে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। অপরাধীরা যদি নিশ্চিত থাকে যে, তারা শাস্তি পাবে না বা প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যাবে, তাহলে তারা নির্ভয়ে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। ফলস্বরূপ সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করেন এবং ভয় বা বাধ্যবাধকতার কারণে সত্য প্রকাশ থেকে বিরত থাকেন। এর ফলে নাগরিক অধিকার খর্ব হয়,গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে,সত্য চাপা পড়ে যায়,ভুল তথ্য প্রচারের সুযোগ তৈরি হয় এবং সাংবাদিকতায় অনীহা তৈরি হয়। সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন ও তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা নিরপেক্ষভাবে তদন্তের জন্য স্বাধীন তদন্ত সংস্থা গঠন করতে হবে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা যায়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার গুরুত্ব নিয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আরও সোচ্চার হতে হবে।সাংবাদিকদের ওপর হামলা কেবল তাঁদের ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়; এটি পুরো সমাজ ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর আঘাত। তাই এ ধরনের হামলার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র, গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর একসঙ্গে কাজ করা জরুরি। সাংবাদিকরা সত্য উদঘাটনের দায়িত্ব পালন করেন, যা একটি গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য অপরিহার্য। তাঁদের ওপর হামলা কেবল ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের লঙ্ঘন নয়, বরং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। একটি সুস্থ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। তাদের সুরক্ষা না থাকলে স্বাধীন সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হবে, যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব তৈরি করতে পারে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।
মোঃ সজিব হোসেন
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ