নববর্ষ ঘিরে সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার: র‌্যাব ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে সোনার দামে আবার রেকর্ড, এবার বড় লাফ দেশে ফিরেছেন সেনাপ্রধান সুদানে আরএসএফের হামলায় ২০ শিশুসহ নিহত শতাধিক বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফটিকছড়ি উপজেলা শাখার আহবায়ক কমিটি ঘোষণা আন্তঃকলেজ বিতর্কে বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন রাজশাহী কলেজ সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ প্রধান উপদেষ্টার নালিতাবাড়ীর নন্নী ইউনিয়নে পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস বিষয়ক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত ইবির আরবী বিভাগে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের বিদায় ও সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর আনুলিয়ায় ৫০০ পরিবারকে হাইজিন ডিগনিটিকিটস ও নগদ অর্থ সহায়তা ঝিনাইগাতীর গজনী অবকাশের মিনি চিড়িয়াখানায় বন্য প্রাণী অপরাধ দমন টিমের অভিযান, ১৭ বন্য প্রাণী আটক ক্ষেতলালে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ ঘাটাইলে বাব ছেলেকে কুপিয়ে আহত করার প্রতিবাদ ও আ'লীগ নেতার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় উপস্থিতির হার ৯০ শতাংশ দিনাজপুরে সাংবাদিক ইউনিয়নের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত অবৈধভাবে ডাম্পার পরিচালনাকালে মোবাইলকোর্টে জরিমানা শৈলকুপায় বিপ্লব সুপার হাইব্রিড পেয়াজ এর মাঠদিবস অনুষ্ঠিত গজ, সিরিঞ্জ ছারাই চলছে গলাচিপা হাসপাতালের জরুরী বিভাগ বাকৃবি কেন্দ্রে কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন

মাওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান ও স্মৃতিচিহ্ন বিলুপ্তপ্রায়

বাংলাদেশ ও দেশ ভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের একজন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, অথচ সরকার বদলের কালপরিক্রমায় মওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত অনেক স্মৃতিচিহ্ন নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে ও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়েছে এবং বাকিগুলো যথাযথ পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে। 


টাংগাইলের সন্তোষের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যে মওলানা ভাসানীর স্মৃতি বিজরিত এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকটিই আজ বিলুপ্ত ও অনেকগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে।


ভাসানী পরিষদের সভাপতি আজাদ খান ভাসানী অভিযোগ তুলেছেন স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলোর অবহেলায় মওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত ২৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১২টি দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং বাকি গুলোর অবস্থাও বেশ শোচনীয়। সেখানে তার জীবদ্দশায়  বেশ কয়েকটি দাতব্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, রোপণ করেছিলেন নানা রকমের দেশি গাছ।


সরেজমিনে প্রদশর্ন করে দেখা যায়, মাওলানা ভাসানীর স্মৃতিবিজড়িত জিনিসগুলো যথাযথ ভাবে সংরক্ষিত হচ্ছেনা, মাও সেতুং প্রদত্ত ঐতিহাসিক ট্রাক্টের রুমটির দরজাও ভাঙ্গা,  ফলে যে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়াও মাওলানা ভাসানীর রোপণ করা অধিকাংশ গাছগুলো কেটে ফেলা হয়েছে কয়েক বছর আগেই। 


ভাসানী পরিষদের অভিযোগ কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই রাস্তা প্রসস্থ করার কারণ দেখিয়ে মওলানা ভাসানীর রোপণ করা পুরনো সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে কয়েক বছর আগে। ১৯৭০ সালে নির্মিত ৫০০ মানুষের ধারণক্ষমতার দরবার হল, যেখানে ভাসানী বক্তৃতা দিতেন তাও ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে অবহেলায়। এই দরবার হলে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ডাকে প্রথম সর্বদলীয় সম্মেলন হয় ১৯৭১ সালের ৯ জানুয়ারি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঐতিহাসিক এই হলটি পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। মৃত্যুর পর মাওলানা ভাসানীকে এই দরবার হলের পাশে শায়িত করা হয়। বর্তমানে দরবার হলের ভিতরে কাঠের স্তম্ভ গুলোও ক্ষয় হয়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রয়েছে কাঠামোটিও। হলের পাশে স্থাপিত ভাসানী জাদুঘরে সংরক্ষিত ভাসানী স্মারকগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির অবস্থাও শোচনীয়। মৃত্যুর আগে স্বাধীন বাংলাদেশে ভাসানী সন্তোষ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেন। 


ভাসানীর মৃত্যুর পর ১৯৮৩ সালে সরকার এই আইন প্রণয়ন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে এবং তার সম্পত্তি দেখাশুনা ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করে। কিন্তু দীর্ঘ ব্যবধানের পর অবশেষে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সরকার সন্তোষ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান করে। তবে মওলানা ভাসানীর একাধিক অনুসারীর অভিযোগ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রাস্টি বোর্ড সমঝোতা স্মারকের শর্তাবলীর সাথে অবহেলা করছে। পাশাপাশি আর্থিক বরাদ্দ ও জনবল সংকটের কারণে অন্যান্য সহযোগী সংস্থার কার্যক্রমও কার্যত বন্ধ। একের পর এক সরকারের ট্রাস্টি বোর্ড সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর মাওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত ২৫ টি শিক্ষা ও অন্যন্যা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২ টি ইতিমধ্যে উধাও হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন মাওলানা ভাসানীর নাতি ও ভাসানী পরিষদের সভাপতি আজাদ খান ভাসানী। এটাকে তিনি ইতিহাস থেকে মাওলানা ভাসানীর স্বপ্ন, কর্ম ও স্মৃতি মুছে ফেলার অংশ বলেও তিনি মনে করেন। 


আজাদ খান ভাসানী বলেন, " মওলানা ভাসানীর শেষ একটি স্বপ্ন ছিলো সন্তোষ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনি এই ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় করেছিলেন কাগমারী পরগনা খ্যাত সন্তোষের এই পূর্ণ ভূমিতে। উনি জীবিত থাকা কালে এখানে অনেক গুলো প্রকল্প করেছিলেন এবং প্রায় ২৫টার মতো প্রতিষ্ঠান উনি রেখে গিয়েছেন। যে প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রায় ১২ টি প্রতিষ্ঠান বিগত সময়ে হারিয়ে গেছে ক্যাম্পাস থেকে আর বাকিগুলো খুব ধুকে ধুকে চলছে এবং অনেকগুলো ধ্বংসের পথে। সরকার এবং দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাই যে মাওলানা ভাসানী উনি উনার কর্ম ও স্মৃতির মধ্যে উনি বেঁচে আছেন, ফলে উনার স্মৃতিকর্মগুলো যেগুলো ধ্বংসের হয়ে গেছে সেগুলোকে আবার নতুন ভাবে তৈরি করা এবং যেগুলো রয়েছে উনার প্রতিষ্ঠান সেগুলো কে আরো ভালোভাবে সংরক্ষণ করা এবং এগুলো কে আরো গতিশীল করার জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানাবো। মাওলানা ভাসানী উনার সারাটা জীবন উনি মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছেন এবং উনার যে লড়াই সংগ্রাম উনি অসমাপ্ত রেখে গেছেন সেই অসমাপ্ত লড়াই সংগ্রাম আমরা দেখতে পাচ্ছি ২০২৪ এর যে গণ অভুথ্যান হয়েছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম সেই অসমাপ্ত লড়াইয়ের নতুন সূচনা করেছে। আমি আশা করি এবং বিশ্বাস করতে চাই এই অসমাপ্ত যে লড়াই চলছে এই লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে মাওলানা ভাসানীর যে স্বপ্ন ছিলো শোষণ এবং বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এমন একটি বাংলাদেশ আগামীর প্রজন্ম এই ২৪ এর জেনারেশন তা বাস্তবায়ন করবে।


মাওলানা ভাসানীর স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষনের কোন উদ্যোগ নিবেন কিনা জানতে চাইলে মাভাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজিম আখন্দ বলেন, আমাদের এখানে ভাসানী ট্রাস্ট বোর্ড আছে, আরও অনেক স্থাপনায় আছে। যারা এগুলো দেখভাল করে থাকে,  ভাসানীকে দেওয়া ট্রাক্টর আছে। আমি নতুন উপাচার্য হিসেবে আসছি, বিষয় গুলো জেনে, এগুলো কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় এবং সরকারী সহায়তায় কিভাবে নেওয়া যায়, কিভাবে করলে এগুলো সংরক্ষিত হবে বিষয় গুলো আলোচনায় করে।  আমি থাকি কিংবা না থাকি ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার স্মৃতিফলক,স্মৃতিচিহ্ন সবগুলো সংরক্ষিত থাকুক। পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে মাওলানা ভাসানী একজন আদর্শ পুরুষ এর কোন সন্দেহ নাই। তার ন্যায় নিষ্ঠাতা মজলুমের প্রতি দরত, সংগ্রামী জীবন, তার ভিতরের স্প্রিড, তার আধ্যাত্মিক সবকিছু মানুষ ফলো করে উৎবিদ্ধ হয়। আমাদের নতুন প্রজন্ম জ্ঞান বিজ্ঞান  উন্নত হবে তেমনি চারিত্রিক দিক থেকেও বলিষ্ঠ ন্যায় নীতি দিক থেকে ভাসানী মত হবে আমরা চাই।


ছবি: চীনের মাও সেতুং মওলানা ভাসানীকে যে ট্রাক্টরটি উপহার দিয়েছিলেন কক্ষটির দরজা ভাঙা। ফলে যে কেউ প্রবেশ করতে পারবে অনায়াসেই৷


আরও খবর