বৃষ্টিপাতে চরম জনদুর্ভোগ
মৌলভীবাজারে টানা ভারী বর্ষণে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির পরিমাণ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে এই প্রবল বৃষ্টির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস।
পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারী বর্ষণে জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মনু, ধলাইসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে অতিরিক্ত জোয়ারে বাধ ভাঙ্গা ও বন্যা আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন সদর, কমলগঞ্জ ও রাজনগর উপজেলার নদী তীরবর্তী গ্রামের মানুষেরা। কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলের ধানক্ষেত, শাকসবজির খেত এবং মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের ভাড়াউড়া চা বাগানের রামপাড়া এলাকায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বহু পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেন, বাঁধ রক্ষা ও বন্যা প্রতিরোধে বিভিন্ন স্থানে জরুরি সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।
প্রচণ্ড ঝড়ে শুক্রবার শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সড়কে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় গাছ ভেঙে পড়ে কয়েক ঘন্টা যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
এছাড়া বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ১২ ঘন্টারও বেশি সময় বিদ্যুৎ না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন রাজনগর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষেরা।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের কর্মর্কতা আনিসুর রহমান বলেন, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে এই প্রবল বৃষ্টির সৃষ্টি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১৭.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টির পরিমাণ।
এদিকে কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে বিপাকে পড়েছেন জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ। বৃষ্টির প্রভাবে অনেকেই সারাদিন ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হচ্ছে। টানা বৃষ্টি থাকায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ। অনেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বের হয়েছেন কাজের সন্ধানে। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় এবং বাইরে তেমন কেউ বের না হওয়ায় কাজ মিলছে না তাদের।
শুক্রবার সকালে শ্রীমঙ্গল শহরের কালিঘাট রোডে দেখা যায় টানা বৃষ্টিতে ভেজা কাপড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী খুঁজছিলেন রিকশাচালক জমির মিয়া। আলাপকালে তিনি বলেন, সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। সকাল থেকে ৫০ টাকা রোজগার হয়েছে, বাকি দিনে কি যে হবে জানি না। ভাড়ায় রিকশা চালাই। যে টাকা এসেছে তার মধ্যে মালিককে কী দেব আর নিজে কী নেব? বাইরে লোক নেই, দাঁড়িয়ে থেকে কোনো যাত্রী পাচ্ছি না।
আরিফ মিয়া নামে চা-সিগারেট বিক্রেতা থেমে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দোকান খুলে বসেছি। কিন্তু আবহাওয়া খারাপ থাকায় বাইরে মানুষের চলাচল কম। এ কারণে বিক্রিও তেমন নেই বললেই চলে।
দিনমজুর ইউসুফ বলেন, দুই দিন ধরে কোনো কাজ করতে পারিনি। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ার কারণে অনেকেই কাজকর্ম বন্ধ রাখছেন। সকাল পেরিয়ে দুপুর হতে যাচ্ছে, আজও কোনো কাজ পাইনি। তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।
মনির হোসেন নামে আরেক রিকশাচালক বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশায় চার্জের খরচ, মালিকের ভাড়া দিয়ে প্রতিদিন ৫০০-৭০০ টাকা থাকে অন্য সময়। কিন্তু এখন যে বৃষ্টি হচ্ছে তাতে বাজার করার খরচই হয় না। কীভাবে বেঁচে থাকবো।
আব্দাল মিয় শহরের রাসার পাশে তাল, ডাব লেবু ও বিভিন্ন ফল বিক্রি করেন। তিনি বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে মানুষজন কম। আমরা দিনে যা আয় করি তা দিয়ে সংসার চালাই। বৃষ্টির কারণে বেচাকেনা নাই বললেই চলে।
এদিকে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতে আতঙ্ক না হয়ে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছেন মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ ইসরাইল হোসেন। দুর্যোগ প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের সব ইউনিটকে সতর্ক করা হয়েছে এবং যে কোনো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে জেলা প্রশাসন রয়েছে বলেও জানান ডিসি।
৯ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
১৭ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
২২ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
২৩ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
১ দিন ৭ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
১ দিন ১০ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
১ দিন ১০ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
১ দিন ১০ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে