চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কদমরসুলপুর এলাকার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনার ২২ ঘণ্টা পর উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে। তবে বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস। স্থানীয় প্রশাসন বলছে, অক্সিজেন প্ল্যান্টের বয়লার থেকে বিস্ফোরণ হতে পারে। বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ।
শনিবার (৪ মার্চ) বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে কদমরসুলের কেশবপুর এলাকায় সীমা স্টিলের অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কয়েক কিলোমিটার এলাকা। ঘটনাস্থলের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছিটকে পড়ে বিস্ফোরিত ইস্পাতের টুকরো।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ছয়জন মারা গেছেন। আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১৮ জন। গুরুতর আহত দুজন আইসিইউতে। তাদের মধ্যে প্রভাষ নামের একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা। নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় নিশ্চিত করা গেলেও একজনের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনে। রোববার দুপুর বিকেল ৩টার দিকে উদ্ধার অভিযান শেষ করা হয়।
উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া রোববার দুপুরে বলেন, আমাদের উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি। আমরা এখনো ঘটনাস্থলে আছি। বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্ত শেষে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ বলা যাবে। আপাতত নতুন করে বিস্ফোরণের আশঙ্কা নেই।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, সীমা স্টিলের অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। আমরা যতটুকু নিশ্চিত হয়েছি তাতে বলা যায়, প্ল্যান্টের একটি বিম্বে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিম্বটি বয়লারের একটি অংশ। তবে বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত টিম ঘটনাস্থলে রয়েছে। তারা পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য নিচ্ছেন। এছাড়া কারখানা কর্তৃপক্ষ ও প্ল্যান্ট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করছে তদন্ত টিম।
কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত কারণে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। পুলিশের কয়েকটি টিম ঘটনাস্থলে থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
প্রাথমিক তদন্ত শেষ হলে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় মামলা হবে। আমরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি বিস্ফোরণের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ছিল। বিস্ফোরণের ঘটনার পর মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। আমাদের সঙ্গেও কেউ যোগাযোগ করেননি। আমাদের প্রাথমিক তদন্ত শেষে হতাহতের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করে এ বিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।
ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্ট যাদের দায়িত্বে অবহেলা পাওয়া যাবে তাদের মামলায় আসামি করা হবে বলেও জানান ওসি তোফায়েল।
এদিকে ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাকিব হাসানকে কমিটির প্রধান করা হয়। কমিটিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
নিহতদের দাফন কাফনের জন্য তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ২৫ হাজার এবং ত্রাণ ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আহতদের প্রত্যেককে জেলা প্রশাসনের পক্ষ সাড়ে সাত হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ এবং আহত প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
১ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
৯ ঘন্টা ৪১ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৮ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ৩ মিনিট আগে
১ দিন ১০ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে
১ দিন ১০ ঘন্টা ১০ মিনিট আগে
১ দিন ১২ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে
১ দিন ১৩ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে